
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > যশোর-৪: হতাশ বাঘারপাড়াবাসী
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86630 বার পড়া হয়েছে
যশোর-৪: হতাশ বাঘারপাড়াবাসী
যশোর সদর উপজেলার ৫টি ও বাঘারপাড়া উপজেলার ৯টি মোট ১৪টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ৮৮ যশোর-৪ নির্বাচনী আসনটি। এ আসনের বর্তমান মোট ভোটার ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯০। গত সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের রনজিত রায়। নির্বাচনে তিনি ১ লাখ ২ হাজার ৯৫৮ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রকৌশলী টি এস আইয়ুব পান ৯৭ হাজার ৫২০ ভোট। নির্বাচনে অপর দুই প্রার্থী জাতীয় পার্টির এডভোকেট জহিরুল হক এবং ওয়ার্কার্স পার্টির ইকবাল কবির জাহিদ এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারান।
নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এমপি প্রার্থী হিসেবে রনজিত কুমার রায় অবহেলিত বাঘারপাড়াবাসীর উন্নয়নে এবং সন্ত্রাস দমনে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। অপরদিকে বিএনপি নেতা প্রকৌশলী টি এস আইয়ুব এলাকার উন্নয়নে তার দলের নির্বাচনী ম্যানুফেস্টো বাস্তবায়নের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অবহেলিত এ জনপদের রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এছাড়া সন্ত্রাস দমনকে তিনি প্রাধান্য দিয়ে মোকাবিলা করারও প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর রনজিত রায় এলাকার উন্নয়নে কি কি করেছেন তা উল্লেখ করার মতো কোন নেতা-কর্মী নেই। এক প্রশ্নের জবাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, জীবনে এটাই শেষ। ওই নেতা বলেন, রনজিত রায় এমপি হয়ে এলাকার বা দলের কোন উন্নতি না হলেও নিজের ভাগ্যের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। বাপ-দাদার পৈতৃক ভিটায় টিনের চালা ভেঙে আলীশান অট্টালিকা করেছেন। গাড়ি হয়েছে। যশোর শহরে বাড়ি হয়েছে। তবে এ ৪ বছরে এলাকায় টিআর এবং কাবিখার নিয়ম মাফিক কাজ ছাড়া তেমন কোন উন্নয়ন ঘটেনি। আর এর মাধ্যমে তার নিজস্ব কিছু লোকের ভাগ্যের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। উপজেলা বিএনপির নেতা শামছুর রহমান বলেন, নির্বাচনের পর এমপি এলাকার জনগণের কাছে দেয়া সব প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। খাজুরার স্কুলশিক্ষক রেজাউল বলেন, নির্বাচনের পর এমপি এলাকার উন্নয়নের পরিবর্তে অর্থ-বাণিজ্যে নেমেছেন। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগের নামে বাণিজ্য করেছেন। সরকারি নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে এমপি একাই তার নির্বাচনী এলাকার ১৯টি প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ সরকারি নীতি অনুসারে একজন এমপি সর্বোচ্চ ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এদিকে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও এমপির কর্মকাণ্ডে চরম হতাশা ব্যক্ত করেন। রূপদিয়া বাজার কমিটির নেতা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী ইকবাল হোসেন বলেন, নির্বাচনের আগে এমপির কথায় মুগ্ধ হয়ে নিজের উপার্জিত প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করেছিলাম। ভেবেছিলাম দীর্ঘদিনের অবহেলিত এ জনপদের উন্নয়ন হবে। এমপি সাহেব নিজেদের লোক। বিপদে-আপদে তার কাছে যেতে পারবো। কিন্তু দুর্ভাগ্য নির্বাচনের পর এমপি নিজেকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত। বেশির ভাগ সময় তিনি সার্কিট হাউজে থাকেন। আর এলাকা বলতে খাজুরায় যান নিজের বাড়িঘরের কাজ দেখাশোনার জন্য। এর বাইরে তেমন কোন কাজ নেই। তবে এসব অভিযোগের একেবারেই কোন ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন এমপি রনজিত কুমার রায়। তিনি দাবি করেছেন তার সরকারের ৪ বছরে তিনি যেভাবে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন তা অতীতের কোন এমপি করেননি। অবহেলিত এ জনপদে তিনি উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করেছেন। সন্ত্রাসকবলিত এ জনপদে তিনি শান্তির সুবাতাস বইয়েছেন। এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পাদন করেছেন। তবে এমপির এসব বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন তার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা প্রকৌশলী টি এস আইয়ুব। তিনি বলেন, গত ৪ বছরে এমপি রনজিত রায় এলাকার উন্নয়নে কোন কাজ করেননি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। নির্বাচনী এলাকায় স্বাভাবিক নিয়মে যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঘটে বাঘারপাড়ায় তাও হয়নি। নির্বাচনের পর থেকে নিজস্ব বাহিনী দিয়ে তিনি সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। গত ৪ বছরে এ এলাকায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ১২ জন নেতা-কর্মী খুন হয়েছে। সরকারি বিল-বাওড়, সহায় সম্পত্তি দখলের মহড়া চলেছে। মানুষের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে এমপির ক্যাডাররা। ফলে এলাকার মানুষ আজ অতিষ্ঠ। তারা পরিবর্তন চায়।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে করে এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। বিশেষ করে সরকারি দল আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী এখন নির্বাচনী মাঠে। এর মধ্যে বর্তমান এমপি রনজিত কুমার রায়, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমজাদ হোসেন, কাজী নাবিল আহম্মেদ বিশেষভাবে উল্লেযোগ্য। এছাড়া জাতীয় পার্টির এডভোকেট জহির হোসেন, জামায়াতের অধ্যাপক গোলাম রসুল ও ইসলামী ঐক্যজোটের নাজমুল হুদা আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসংযোগ করছেন। তবে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে প্রার্থিতার হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাবে।
সূত্র: যশোর নিউজ ২৪