নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পুনর্বিন্যস্ত ৮৯ যশোর-৫(মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলা) আসন পুনঃনির্ধারনের দাবীতে আন্দোলনে যাচ্ছে অভয়নগর।গত ৬ ফেব্রুয়ারি’১৩ তারিখে নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যশোর জেলার যশোর-৫ ও ৬ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। কেবল কেশবপুর উপজেলা(যার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার,৭ শ’৩৪ জন,আয়তন ২শ’৫৮ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার)-কে যশোর -৬ আসন রূপে চিহ্ণিত করা হয়েছে।এটি যশোর জেলার মোট আয়তনের ১০ শতাংশ।অপরদিকে, ২লাখ ৮৫ হাজার ৬শ’৯০ ভোটার ও ৪শ’৪৪ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মনিরামপুর উপজেলা ও ১ লাখ ৭৩ হাজার ৪শ’৪২ ভোটার ও ২শ’৪৭ দশমিক ১৯ বর্গ কিলোমিটারের অভয়নগর উপজেলা নিয়ে ৮৯ যশোর-৫ আসনরূপে নির্ধারিত হয়েছে। অর্থাৎ ৬শ’৯১ দশমিক ৯১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ৪ লাখ ৫৯ হাজার ১শ’৩২ জন ভোটার অধ্যুষিত অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলা নিয়ে এ আসনটি গঠিত। পুনর্গঠিত এ আসন টি যশোর জেলার মোট আয়তনের ২৭ শতাংশ ভূখন্ড নিয়ে তৈরী। বর্তমান বিভাজন অনুসারে ৮৯ যশোর ৫ এর আয়তন ৯০ যশোর -৬(কেশবপুর) আসনটির প্রায় ৩ গুন। ভোটার সংখ্যার অনুপাতে প্রায় আড়াই গুণ।ভৌগলিক অবস্থান,যোগাযোগ, দূরত্ব বিবেচনায় বর্তমান আসন বিন্যাস অধিকতর অবাস্তব হয়েছে।মনিরামপুর উপজেলার সাথে এককভাবে অভয়নগর বা কেশবপুর উপজেলাকে সম্পৃক্ত করলে আয়তন,জনসংখ্যার দিক থেকে জনভোগান্তি বাড়বে,প্রশাসনিক সুবিধা কমবে।এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মনিরামপুর উপজেলাকে ২ টি সুষম অংশে বিভাজন করে কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলার সাথে সংযুক্ত করলে সমস্যার মাত্রা কমবে। মনিরামপুর উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়ন।ইউনিয়ন গুলির মধ্যে কেশবপুর লাগোয়া ৯ টি ইউনিয়ন( রহিতা, কাশিমনগর, মনিরামপুর,খেদাপাড়া,হরিহরনগর,ঝাপা,মশ্মিমনগর,চালুয়াহাটি,শ্যামকুড়)ও মনিরামপুর পৌরসভাকে কেশবপুরের সাথে সংযুক্ত করে ৯০ যশোর ৬ আসন পুনর্গঠিত হতে পারে। তখন ভোটার সংখ্যা হবে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ১শ’৩০ জন।মনিরামপুর উপজেলার অপর অংশ (৮ টি ইউনিয়ন) ঢাকুরিয়া, হরিদাসকাটি, খানপুর, দুর্বাডাঙ্গা,কুলটিযা,নেহালপুর,মনোহরপুর ও ভোজগাতি অভয়নগরের সাথে সম্পৃক্ত করে ৮৯ যশোর-৫ আসন পুনবিন্যস্ত হলে ভোটার সংখ্যা হবে ২ লাখ,৮৬ হাজার ৭ শ’ ৩৬ জন। এক কথায় বলা যায় অভয়নগর, মনিরামপুর,কেশবপুরের সংসদীয় আসনকে ২ ভাগে বিভক্ত করা ছাড়া বিকল্প নেই।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ২৮(১) অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারের বিয়য়ে বলা আছে,“ কেবল ধর্ম,গোষ্ঠী,বর্ণ,নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক এর প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।” সে ক্ষেত্রে বর্তমান বিভাজন অনুসারে ৮৯ যশোর ৫( মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলা) ৪ লাখ ৫৯ হাজার,১শ’৩২ জন ভোটারের জন্য যে বরাদ্ধ হবে,৯০ যশোর ৬ কেবপুর উপজেলা আসনের ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭ শ’৩৪ জন ভোটারের জন্য একই বরাদ্ধ হবে। আর এটি হলে তা’ হবে বৈষম্যমুলক জনস্বার্থ পরিপন্থী।৮৯ যশোর ৫ নির্বাচনী এলাকার জনগণ সার্বিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বিজ্ঞপ্তির সীমানা পুনঃ নির্ধারনের ক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত সীমানা যতদূর সম্ভব বহাল রাখা,যতদূর সম্ভব উপজেলা অবিভাজিত রাখা,ভৌগোলিক বৈশিষ্ট ও জনগনের যাতায়াত সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করা দরকার। কিন্তু যশোর ৫ নির্বাচনী এলাকার ক্ষেত্রে অনুসরন করা করা হয়নি।
সীমানা পুনঃ নির্ধারনে অভয়নগরবাসী আন্দোলনে নামছে।সর্বদলীয় ও সকল পেশাজীবি সংগঠনের সমন্বয়ে গতকাল শনিবার রাতে নওয়াপাড়া ইন্সটিটিউটে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল হক মোল্যার সভাপতিত্বে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক মেয়র এনামুল হক বাবুলকে আহ্বায়ক,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভাপতিকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সকল পেশাজীবি শ্রমজীবি ব্যবসায়ী সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সদস্য করে একটি “সংসদীয় আসন পুনঃনির্ধারন সংগ্রাম কমিটি” গঠিত হয়েছে।জাতীয় সংসদের মাননীয় হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আঃ ওহাব এ সভায় উপস্থিত থেকে এ দাবীর প্রতি যৌক্তিক সমর্থন দেন।ধারনা করা যাচ্ছে,সংসদীয় আসন ভৌগোলিক সীমানা,প্রশাসনিক সুবিধা ও ভোটার-জনসংখ্যা,আয়তন অনুসারে পুনর্বিন্যাস না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং পাশাপাশি আইনী লড়াই শুরু হবে। অভয়নগর বাসীর দাবী,নির্বাচন কমিশনের ৬/২/১৩ তারিখে জারিকৃত ৪৭ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত ৮৯ যশোর ৫ ও ৯০ যশোর ৬ আসনের সীমানা বিন্যাস বাতিল করে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা অথবা মনিরামপুর উপজেলাকে ২ টি সুষম অংশে বিভাজন করে কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলার সাথে সংযুক্ত করা। অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ মালেক বলেন, মনিরামপুর উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়নের মধ্যে কেশবপুর লাগোয়া ৯ টি ইউনিয়ন ও মনিরামপুর পৌরসভাকে কেশবপুরের সাথে সংযুক্ত করে ৯০ যশোর ৬ আসন পুনর্গঠিত করা হোক। পাশাপাশি মনিরামপুরের বাকি ৮ ইউনিয়ন ও অভয়নগরের ৮ ইউনিয়ন সহ নওয়াপাড়া পৌরসভা নিয়ে ৮৯ যশোর ৫ আসন পুনর্বিন্যস্ত করা হোক।