
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > জামাইবাবুর স্বর্ণের চেইন আর দিদির জন্য শাড়ি
এই পৃষ্ঠাটি মোট 84601 বার পড়া হয়েছে
জামাইবাবুর স্বর্ণের চেইন আর দিদির জন্য শাড়ি
জামাইবাবু আসবেন শ্বশুরবাড়ি। নির্ঘুম রাত কাটছে ভদ্রবিলার। জামাইতো যে-সে ব্যক্তি নন। প্রণব মুখার্জি। ভারতের প্রথম বাঙালি প্রেসিডেন্ট। শুধু ভদ্রবিলা নয় আনন্দে আটখানা আশপাশের সব গ্রাম। জ্ঞাতি-গুষ্টিদের ভিড়। এতোদিন পর জামাইবাবু আসবেন। শ্যালক কানাইলাল ঘোষ স্বর্ণের চেইন বানিয়েছেন জামাইবাবুকে দেবেন। আর দিদির জন্য শাড়ি। নাড়ু, মুড়ি, ক্ষীর, সন্দেশতো আছেই। প্রিয়তমা পত্নী শুভ্রাকে নিয়ে বসবেন আড্ডায়। খোঁজ নেবেন স্বজনদের। আগামীকালই নড়াইল আসছেন ভারত অধিপতি প্রণব মুখার্জি। তিনি নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রামে শ্বশুরবাড়ি যাবেন। সঙ্গে থাকবেন প্রিয়তমা পত্নী ভারতের ফার্স্টলেডি শুভ্রা মুখার্জি। শুভ্রা মুখার্জির বাবার বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রামে। আর মামা বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার চাঁচড়া গ্রামে। প্রেসিডেন্ট সস্ত্রীক শ্বশুরবাড়ি ভদ্রবিলা গ্রামে যাবেন। সেখানে শুভ্রা মুখার্জির ছোট ভাই কানাইলাল বসবাস করেন। সময় সুযোগ ও পরিস্থিতি পরিবেশ হলে হয়তো মামা শ্বশুরবাড়ি চাঁচড়াতেও যেতে পারেন। জামাইবাবু প্রণব মুখার্জির আগমনে বেশ খোশ মেজাজে আছেন কানাইলাল সহ তার পরিবারের অন্য সদস্যরা। জামাইবাবু আসার সংবাদে ওই পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে। কানাইলাল ঘোষ জানান, আনন্দের ব্যাপার এই যে, জামাইবাবু ভারতের মতো দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েও আমাদের ভোলেননি। তিনি এতো ব্যস্ততার মধ্য থেকেও যে আমাদের দেখতে আসছেন- এটা কম কথা নয়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি দিদি আর জামাইবাবুকে বরণ করবেন।
তিনি আরও জানান জামাইবাবু ও দিদি’র খাবার সরবরাহ করবেন স্থানীয় প্রশাসনই। সকল খাবারই ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখার পর তিনি খাবেন। তারপরও জামাইবাবুর জন্য পিঠা, নাড়ু, পায়েস, ক্ষীর, সন্দেশ সহ আরও অনেক কিছু তৈরি রেখেছেন। জামাইবাবুকে দেশী ইলিশ মাছ খাওয়ানোর খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু সাধারণ খাবার খাওয়া নিষেধ থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কানাইলাল ঘোষের পুত্র প্রশান্ত ঘোষ জানান, তাদের আগমন সংবাদে ভদ্রবিলা গ্রাম জুড়ে চলছে উৎসব। ওই গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ভরে গেছে। তারা আগে থেকেই ওই গ্রামে এসে অবস্থান করছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে এক নজর দেখার জন্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি সস্ত্রীক হেলিকপ্টারে আসবেন নড়াইলে। তাদের বহনকারী হেলিকপ্টার অবতরণ করার জন্য নড়াইল শহরের নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামের হেলিপ্যাড, সদর উপজেলার আউড়িয়ার এপিবিএসএল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হেলিপ্যাডে অবতরণ শেষে প্রণব মুখার্জি ভদ্রবিলায় পৌঁছবেন গাড়িবহরযোগে। সফর সঙ্গী হিসেবে থাকবেন প্রায় অর্ধশত লোক। ভারতের প্রেসিডেন্টের আগমন উপলক্ষে নড়াইল সেজেছে বর্ণিল সাজে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কানাইলালের বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ, টেলিফোন সংযোগ দেয়া হয়েছে। ফ্রিজ, টিভি সহ বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচার দিয়ে সাজানো হয়েছে। আশপাশের বাড়ি, রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের একটি টিম এব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকিতে ব্যস্ত রয়েছে। শহরের সরকারি-বেসরকারি অফিস ভবন, বাসা বাড়ি নতুন রংয়ে রঞ্জিত করা হচ্ছে। সড়কের দু’পাশের গাছের গোড়া রং করা হয়েছে। শোভা বর্ধনের কাজ এখনও চলছে। সর্বোচ্চ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নড়াইল শহর সহ যে পথে তিনি শ্বশুরবাড়ি যাবেন সে সব পথ এবং যে সমস্ত জায়গায় তিনি অবস্থান করতে পারেন সে সব জায়গা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। কিভাবে রাষ্ট্রপতিকে হেলিকপ্টার থেকে অভ্যর্থনা করে তার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে সে বিষয়ে মহড়া দেয়া হচ্ছে। জামাইবাবু বলে কথা, তাইতো তার জন্য আয়োজন করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের খাবার। খাবার মেন্যুতে রয়েছে লম্বা তালিকা। সবই বাঙালি খাবার। দেশীয় ফলমূল সহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপ্যায়নের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নড়াইল সদর হাসপাতালের দুটি ক্যাবিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ভদ্রবিলা গ্রামে যাবেন তাই ওই গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বত্র আনন্দ আমেজ বিরাজ করছে। ভদ্রবিলা গ্রামে রাষ্ট্রপতির শ্বশুরবাড়ি ও চাঁচড়া গ্রামে মামা শ্বশুরবাড়ি সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।