
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > যশোরে প্রতি উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক গ্রুপ
এই পৃষ্ঠাটি মোট 84609 বার পড়া হয়েছে
যশোরে প্রতি উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক গ্রুপ
বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৬টি আসনই পেয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।

অন্যদিকে এককভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম। যশোরের প্রতিটি উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। জামায়াতও শক্তিশালী যশোরের কয়েকটি আসনে। তারাও বিএনপির কাছ থেকে যশোরের কয়েকটি আসন আলোচনার মাধ্যমে নিতে চান। প্রার্থী দিতে চান যশোরের ৩টি আসনে। আর যদি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় ঐক্যজোট নির্বাচনে না আসে, সেই ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকবে অধিকাংশ আসনে।
যশোর-১ (শার্শা) আসনে একটি পৌরসভা এবং ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে। পৌরসভাটি হলো বেনাপোল পৌরসভা। মোট ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪শ’ ১৫ জন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এখানে জয়ী হন আওয়ামী লীগের তবিবুর রহমান সরদার। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির আলী কদর। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী মাওলানা আজিজুর রহমানকে মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয়ী হন আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দীন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নির্বাচন করবেন বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দীন। এ ছাড়া শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মিন্নুও গণসংযোগ করছেন।
এখানে আওয়ামী লীগে রয়েছে কোন্দল। বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মিন্নুর সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে বর্তমান এমপি শেখ আফিল উদ্দীনের। এখানে বিএনপির উপজেলা সহসভাপতি বেনাপোলের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শামছুর রহমান এবং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসান জহির মনোনয়ন চাইবেন। তাঁরা এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তি রমজান মাসে এলাকায় গণসংযোগ করেন। কয়েকটি বড় ইফতার পার্টিতে অংশ নেন। তিনি নিজেও ইফতার পার্টির আয়োজন করেন। তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। আর জামায়াতের সাবেক জেলা আমীর মাওলানা আজিজুর রহমান ১৮ দলীয় জোটের হয়ে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এখানে জামায়াতের নিজস্ব ভোট রয়েছে অনেক।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে দুই উপজেলার রয়েছে ২২টি ইউনিয়ন এবং দুইটি পৌরসভা। ভোটার ৩ লাখ ১০ হাজার ৪শ’ ৮ জন ভোটার। দুটি পৌরসভা হলো ঝিকরগাছা এবং চৌগাছা। এই দুই উপজেলা নিয়ে একটি আসন হলেও চৌগাছা থেকে ঝিকরগাছায় ভোটার সংখ্যা ৫০ হাজার বেশি। প্রতিটি নির্বাচনে এখানে ঝিকরগাছা এলাকার বাসিন্দারাই জয়ী হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। আর ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন জামায়াতের মুহাদ্দিস আবু সাঈদ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ। এই আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন। বর্তমান সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ এমপি আবার চাইবেন মনোনয়ন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক এ্যাডভোকেট আলী রায়হান, ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যাম এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ার হোসেন, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম হাবিব এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এ আসনের সাবেক এমপি আবুল ইসলামের পুত্র এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে গত ৪ বছর এলাকায় কাজ করেছেন। গত ঈদে এবং বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবার্ষিকীতে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করেন আনোয়ার হোসেন। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে এমপি ছিলেন। ফলে তারও রয়েছে নিজস্ব কিছু লোক এবং নেতা। আর এ্যাডভোকেট আলী রায়হান ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে তিনি এতদূর এসেছেন। তিনি ঝিকরগাছার শংকরপাশা ইউনিয়নে পরপর তিন বার চেয়ারম্যান নির্বাচত হন।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন ঝিকরগাছা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা এলাহী টিপু। আর জামায়াতের সাবেক এমপি মুহাদ্দিস আবু সাঈদ ১৮ দলীয় জোটের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের কাছে হেরে যান। জাতীয় পার্টির সেলিমা রেজাও রয়েছেন মনোনয়ন দৌড়ে।
যশোর-৩ (সদর) আসনে রয়েছে একটি পৌরসভা এবং ১৪টি ইউনিয়ন। মোট ভোটার ৪ লাখ ৮০ হাজার ৪শ’ ৭০ জন। সবচেয়ে বেশি ভোটার এই আসনে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের রওশন আলী। ১৯৯৫ সালে তিনি মারা গেলে উপনির্বাচনে জয়ী হন বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম (ওই উপনির্বাচনে কোন দল অংশ নেয়নি)। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের আলী রেজা রাজু। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির তরিকুল ইসলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের খালেদুর রহমান টিটো।
আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমান এমপি খালেদুর রহমান টিটো, সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী রেজা রাজু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার। যশোর সদরে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল রয়েছে। জাতীয় এবং দলীয় অনুষ্ঠানগুলো পালন হয় আলাদাভাবে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সদরের এমপি একত্রে কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন না। বিএনপির একক প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। বর্তমানে বিএনপির মধ্যে কোন কোন্দল না থাকায় যশোর সদরে বিএনপি শক্তিশালী। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে সরু চৌধুরীও গণসংযোগ করছেন।
যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) আসনটি এবার পুনর্গঠন করা হয়েছে। গত নির্বাচনে বাঘারপাড়ার ৯টি ইউনিয়ন এবং যশোর সদরের ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে ছিল যশোর-৪ আসন। এবার সেটি আগের আসনে ফিরে গেছে। অর্থাৎ অভয়নগর-বাঘারপাড়া উপজেলা মিলে একটি আসন। দুই উপজেলায় রয়েছে ১৮টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভা। পৌরসভা দুইটি হলো নওয়পাড়া ও বাঘারপাড়া। এ ছাড়া সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়নটি রয়েছে এ আসনে। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৫ হাজার। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এখানে জয়ী হন আওয়ামী লীগের শাহ হাদিউজ্জামান। ২০০১ সালের নির্বাচনে ৪ দলীয় ঐক্যজোটের হয়ে নির্বাচনে জয়ী হন জাপা (নাফি) শেখ আমিন উদ্দীন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাঘারপাড়া থেকে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বাবু রণজিৎ রায়। এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন অভয়নগরের হুইপ অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাব এমপি এবং বাঘারপাড়ার বাবু রণজিৎ রায় এমপি। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা আমজাদ হোসেন, বাঘারপাড়ার জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাজমূল ইসলাম কাজল এলাকায় গণসংযোগ করছেন। আসনটি পুনর্গঠন করায় শোনা যাচ্ছে সাবেক এমপি বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক শাহ হাদিউজ্জামান মনোনয়ন চাইবেন। যদিও তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন ইঞ্জিনিয়ার টিএস আয়ুব। গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে রয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় যুবসংহতির কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট জহিরুলও গণসংযোগ করছেন।
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে ১টি পৌরসভা এবং ১৬টি ইউনিয়ন রয়েছে। পৌরসভাটি হলো মনিরামপুর পৌরসভা। মোট ভোটার ২ লাখ ৮০ হাজার, ২শ’ ৫৬ জন। গত নির্বাচনে এই উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়ন চলে গিয়েছিল যশোর-৪ আসনের মধ্যে। এবার সেটি যশোর-৫ আসনে চলে আসছে। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের এ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতান। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন ৪ দলীয় জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ওয়াক্কাস। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারও জয়ী হন আওয়ামী লীগের এ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতান। তিনি এবার আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল হাসান বারী, উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন ভট্টাচার্য, মাহামুদুল হাসান।
গত নির্বাচনে এখানে খান টিপু সুলতান জয়ী হন ৪ দলীয় প্রার্থী ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ওয়াক্কাসকে পরাজিত করে। এবার মুফতি ওয়াক্কাস প্রার্থী হবেন। এখানে জামায়াত এবং ইসলামী ঐক্যজোটের নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী হবেন কামরুজ্জামান। তিনি নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। গত নির্বাচনে অভয়নগর-কেশবপুর এবং মনিরামপুরের মনোহরপুর ইউনিয়ন নিয়ে যশোর-৬ আসন করা হয়েছিল। এবার কেশবপুর উপজেলা নিয়ে শুধু যশোর-৬ আসন। এই উপজেলায় রয়েছে ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১টি পৌরসভা। মোট ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ৩শ’ ৭২ জন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এখানে জয়ী হয়েছিলেন জামায়াতের মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এখানে জয়ী হন আওয়ামী লীগের এএসএইচকে সাদেক। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাব।
আগামী নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেকের স্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। তিনি এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে কেশবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেন, শেখ রফিক। বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান মিন্টু, কেশবপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বিশ্বাস, বিএনপি নেতা আবু বকর আবু এবং আবুল কালাম আজাদ।
জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে সাবেক এমপি সাখাওয়াত হোসেন। আর জামায়াতের মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যাপক মুক্তার আলী। এক সময় এই আসনে জামায়াতে এমপি ছিলেন। সেই হিসেবে জামায়াত বরাবর এই আসনটি বিএনপির কাছে দাবি করে আসছে।
সূত্র: www.electionbdnews.com