
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > মণিরামপুরে ২০ হাজার মানুষ মৃৎ-শিল্পের ওপর নির্ভর
এই পৃষ্ঠাটি মোট 84631 বার পড়া হয়েছে
মণিরামপুরে ২০ হাজার মানুষ মৃৎ-শিল্পের ওপর নির্ভর
সাড়ে ৫ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশের ২য় বৃহত্তম উপজেলা যশোরের মণিরামপুরে অন্ততঃ ২০ হাজার মানুষ
সবচেয়ে বেশী মৃৎ-শিল্পীদের বসবাস উপজেলার গাংড়া, মহাদেবপুর, ভরতপুর, সাতগাতী, খানপুর, মধুপুর, দূর্বাডাঙ্গা, চিনাটোলা, হেলাঞ্চী, তেঁতুলিয়া, ঝাঁপা, খেদাপাড়া, চালুয়াহাটী, কুয়াদা, রাজগঞ্জ, শেখপাড়া, খানপুর, কোনাকোলা, কুশরীকোনা, দত্তকোনা, নেহালপুর, চাকলা, মামারাকপুর গ্রামে। এঁদের তৈরী শিল্পজাত দ্রব্য গুলোর মধ্যে হাড়ী, হাড়ীর ঢাকনা (সরা), মালসা, কলস, নান্দা, হাড়া (কোলা), শানুক (বাসন), দইয়ের খুরী, ধুনছি, মাটির ব্যাংক, বাচ্চাদের খেলনা-(পুতুল, হাড়ী, ঘোড়া), মাটির-ঠিলা (ভাঁড়), টয়লেট- এর পাট, মটকার টালী ইত্যাদি অন্যতম। এ সব দ্রব্যগুলো বাড়ীতে, ফেরী করে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকে। সরেজমিন, উপজেলার উলে¬খযোগ্য মৃৎ-শিল্প এলাকায় গেলে মৃৎ-শিল্পীদের বর্তমান অবস্থা, দুঃখ-দূর্দশার মধ্য দিয়ে মানবেতর জীবন-যাপনের অবর্ণনীয় চিত্র প্রতিফলিত হয় প্রতিবেদকের চোখে। খেদাপাড়া গ্রামের মৃৎ শিল্পী নির্মল পাল (৪৮) বলেন,জন্মের পর বুঝতে শিখেই এই কাজ করছি মাঠে বাপের জমি নেই, ক্ষেত-খুলা নেই যে কৃষিকাজ করে খাবো, পয়সা নেই যে, অন্য কোন ব্যবসা করে খাব” মাটির কাজ করে ৬ জনের মুখ চালাতে কষ্ট হচ্ছে। ভগবান বাঁচায় রাখিছে”।
ভরতপুর গ্রামের কার্ত্তিক পাল (৪২) ও অনিমা পাল (৩৫) দম্পত্তি বলেন “পৈতৃক ভিটে বাড়ী ছাড়া আর আমাদের সহায় সম্পতি কিছুই নেই। মাটির কাজের উপর নির্ভর করে ৪ সন্তান আর বৃদ্ধ মা বাবাকে নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছি। মাটির ব্যাংক, বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রী, ধুনছি, দইয়ের খুরী ইত্যাদি ফেরী করে, গ্রামে গ্রামে, হাটে বাজারে অথবা কোন অনুষ্ঠানে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে কার্ত্তিক। কার্ত্তিক দম্পত্তি বলেন, সরকার বাহাদুর এ পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে কৃষি বা অন্য কোন কুটির শিল্পের মত স্বল্প সুদে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে আমাদের মত প্রান্তিক মৃৎ-শিল্পীরা বেঁচে যেতাম”।
গাংড়া গ্রামের নিমাই পাল (৫২) বলেন“ আগে এ শিল্পে মজা ছিল, বাজারে কাঁসা, পিতল, সিলবার, এলুমিনিয়াম ইত্যাদি দ্রব্যাদি থাকলেও আমাদের দ্বারা উৎপাদিত মাটির দ্রব্য গুলো মানুষের মাঝে চাহিদা ছিল প্রচুর, যার ফলে এ শিল্পের উপর নির্ভর করে স্বাচ্ছন্দে চলা যেত পরিবার-পরিজন নিয়ে। কিন্তু এখন প্লাষ্টিকের দ্রব্য দিযে বাজার ভরে গেছে। এমন কোন আইটেম নেই যেখানে প্লাষ্টিকের ছোঁয়া লাগেনি। ফলে আমরা (এ শিল্প) মার খাছি দিন দিন। আমার বিশ্বাস, এ ভাবে চলতে থাকলে আমাদের এ শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠিত ক্রোকারীজ ব্যবসায়ী ছিদ্দিক বলেন, প¬ষ্টিকের দ্রব্য গুলোর এখন বাজার ধরে রেখেছে। শুধু মুৎ-শিল্পই নয় বরং কাঁসা, পিতল, অ্যালুমিনিয়াম,পিলষ্টিক, সিলভারসহ এ জাতীয় দ্রব্য গুলো জন্য আজ মার্কেট হারাতে বসেছে।
মৃৎ-শিল্পের ওপর নির্ভর করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। এক সময় এ শিল্পের জৌলুস ছিল, এর মাধ্যমে সংসার-ধর্ম-সংস্কৃতি সবই চলতো স্বাচ্ছন্দে। কিন্তু এ শিল্পের এখন চলছে চরম মন্দাবস্থা। বংশ পরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এ শিল্পকে ধরে রেখেছে বাপ-দাদার পেশা হিসেবে। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ২৪৯টি গ্রামের মধ্যে ৪২টি গ্রামে কম-বেশী এ শিল্পের মানুষেরা বসবাস করে। মৃৎ-শিল্পীদেরকে এ অঞ্চলের মানুষেরা “কুমার পাড়া”বা পাল পাড়া” বলেই চেনে।