
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > দৃষ্টিহীন শাহিন কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন?
এই পৃষ্ঠাটি মোট 84552 বার পড়া হয়েছে
দৃষ্টিহীন শাহিন কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন?
অসীম মোদক, মহেশপুর (ঝিনাইদহ) : দৃষ্টিহীনতা ঠেকাতে পারেনি শাহিন আলমকে। দিনমজুরের ছেলে শাহিন চোখে না দেখেও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে; সুযোগ পেয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার ইচ্ছে পূরণ হওয়া থেকে সামান্য দূরে তার অবস্থান। কিন্তু গরিব বাবার এই মেধাবী সন্তানের বাসনা কি পূরণ হবে? কে দেবে তাকে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার খরচ?
দমে যাওয়ার পাত্র কিন্তু নন শাহিন। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন টাকা-পয়সা সংগ্রহের। যেভাবেই হোক তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করতেই হবে।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের আলামপুর গ্রামের দিনমজুর আবদুল কাদেরের ছেলে শাহিন আলম। জানালেন, তিন বছর বয়সে টাইফাইডে আক্রান্ত হন তিনি। এতে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। আর দশটা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর মতো ভিক্ষা করে জীবন চালাতে চায়নি এই শিশুটি। লেখাপড়া শেখার অদম্য ইচ্ছা তার। ছয় বছর বয়সে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তাকে নড়াইল জেলার তুলারামপুরে একটি শেল্টারহোমে রেখে তুলারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয়। পরে তুলারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে শাহিন। এরপর ভর্তি হয় মহেশপুর উপজেলার বিদ্যাধরপুর শামছুল হুদা খান কলেজে।
শাহিন আলম বলেন, ‘কলেজের শিক্ষকরা আমাকে বিনাবেতনে পড়িয়েছেন। এমনকী বই, খাতা, কলমও যোগাড় করে দিয়েছেন। তাদের এই সহযোগিতার কারণে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫৮ পয়েন্ট নিয়ে পাশ করেছি। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খ ইউনিটে (কলা অনুষদ) ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।’
অন্ধ শাহিন কীভাবে পরীক্ষা দিয়েছেন, এ প্রশ্ন জানতে চান সবাই। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাবোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে শ্রুতি লেখক দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। আমি মুখে বলেছি, শ্রুতি লেখক লিখে দিয়েছেন। এভাবেই একের পর এক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।’
শাহিন জানান, তার বাবা আবদুল কাদের দিনমজুর। চারজনের সংসারের ঘানি টানতে গিয়েই তার ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ তার নেই।’
বাবা আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমার দুটো ছেলে। বড় ছেলে সুজন মাহমুদ ঢাকা কলেজে অনার্সে লেখাপড়া করছে। ছোট ছেলে শাহিন আলম তিন বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ায় তার দুটো চোখই নষ্ট হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি। অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও শাহিন লেখাপড়া ছাড়েনি। এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষালাভের স্বপ্ন দেখছে।’
শামছুল হুদা খান কলেজের অধ্যক্ষ এবিএম শাহ্ আলম বলেন, ‘শাহিন আলম আমাদের কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তার বেতন পুরোটাই ফ্রি ছিল। সেই সঙ্গে আমরা তার বই, খাতা, কলম ফ্রি দিয়েছি। এমনকী বাড়তি বইয়ের প্রয়োজন হলে তাও যোগাড় করে দিয়েছি। শাহিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা সবাই ভীষণ আনন্দিত।’
শাহিন আলম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশাফুর রহমান তাকে চার হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
‘কিন্তু এই টাকায় শুধু ভর্তি হওয়া যাবে। লেখাপড়ার জন্য বিস্তর টাকা লাগবে। আমি ধনাঢ্য, দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতা চাই।’