
Home শিল্পী / Artist > প্রণব ঘোষ / Pronab Ghosh (1950-2007)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86806 বার পড়া হয়েছে
প্রণব ঘোষ
Pronab Ghosh
পারিবারিক পরিচিতি :
অনেক বেদনা ভরা আমার এ জীবন,
আমি আর ব্যাথা পেতে চাই না।
-----------------------------------------
এ মন আমার পাথর তো নয়
সব ব্যাথা সয়ে যাবে নিরবে।
এমনই বহু জনপ্রিয় ব্যাথা বেদনা গানের সুরকার প্রণব ঘোষ (খোকন) ১৯৫০ সালে যশোর শহরের মাইকপট্টি সংলগ্ন বাগমারা পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা প্রফুল্ল ঘোষ ছিলেন একজন আইনজীবি এবং মাতা রত্না প্রভা ঘোষ ছিলেন গৃহিণী। ৪ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে প্রণব সবার ছোট। ৭০-এর দশকে তিনি বিয়ের সময় ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নতুন নাম হয় মোহাম্মদ সফি প্রণব। কিন্তু বাবা-মায়ের দেয়া প্রণব ঘোষ নামেই তিনি বহুল পরিচিত। অতি ঘনিষ্ঠজনরা ছাড়া মোহাম্মদ সফি নামটি কেউই জানতেন না। তাঁর আদি পৈত্রিক বাড়ী নড়াইলের কলাগাছিতে এবং নানা বাড়ী খুলনার বেলফুলিয়া গ্রামে।
শিক্ষাজীবন :
প্রণবের লেখাপড়া শুরু হয় যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন স্কুলে। এইচ. এস. সি এবং গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন যশোর সরকারী এম. এম. কলেজ হতে। ছোট বেলা থেকেই তিনি যথেষ্ট মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করতেন। স্কুলে পড়াকালীন তিনি ভাল কবিতা আবৃত্তি ও গান করতেন। এসব প্রতিযোগিতায় তাঁর প্রথমস্থান নেয়ার সাধ্য কারো ছিলো না। স্কুলের দু’জন শিক্ষক রবিউল ইসলাম স্যার ও প্রবোধ স্যার এসব অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার ব্যাপারে প্রণবকে সবচেয়ে বেশী সহযোগিতা করতেন।
বাল্যজীবন :
ছেলেবেলা থেকেই বাড়ীতে গান বাজনার পরিবেশ ছিল। দক্ষিণ বঙ্গের বড় বড় শিল্পীদের নিয়ে বাড়ীতে জলসা হতো। যেহেতু সবার ছোট তাই জলসায় ঢুকতে পারতেন না। সন্ধ্যা বেলা বাড়ীর সবাই একসঙ্গে ঠাকুর ঘরে বসে ধর্মীয় গান করতেন। তখন থেকেই সুরের প্রতি তাঁর প্রচন্ড আগ্রহ জন্মায়। যশোরে অবোলা কান্ত মজুমদারের একটি গানের প্রতিষ্ঠান ছিল ‘সাহিত্য সংঘ’। তৎকালীন যশোরের বিখ্যাত গায়ক অজিত মিত্র ছোট্ট প্রণব’কে কোলে করে নিয়ে যেতেন গান শেখাতে। ৫ম শ্রেণীতে পড়াকালীন তিনি নিজে নিজে গান শিখতে চেষ্টা করতেন। মাগুরা থেকে গানের শিক্ষক ধীরেণ বাবু এসে তাঁর ৫ বোন’কে এক সাথে গান শেখাতেন, কিন্তু মা প্রণব’কে গান শেখাতে নারাজ। প্রণব মায়ের বাঁধা মানতেন না। লুকিয়ে লুকিয়ে হারমোনিয়াম নিয়ে দুইতলা বাড়ীর ছাদের উপর একা একা সঙ্গীতচর্চা করতেন। গানের নেশায় ধীরে ধীরে তাঁর লেখাপড়ায় অবনতি শুরু হলো। বড় ভাই’রা এজন্যে তাঁকে প্রায়ই শাসন করতেন। তাদের স্বপ্ন ছিল প্রণব একদিন লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হবে। কিন্তু কোন শাসনই যেন সঙ্গীত থেকে প্রণবকে দূরে সরাতে পারে না।
সঙ্গীতজীবন :
স্কুলজীবন পার করে ভর্তি হলেন যশোর সরকারী এম. এম. কলেজে। কলেজে পড়াকালীন বিভিন্ন সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে প্রণব গানের শিল্পী হিসাবে আমন্ত্রিত হতেন। সে সময় প্রণব গানের শিল্পী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে চলে যান। দেশ স্বাধীনের পর দেশে ফিরে এলেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীণ বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক হিসাবে দেশ স্বাধীনে ভূমিকা রাখেন।
১৯৭৯ সালে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে গেল। দেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াসহ তিন মন্ত্রী মাগুরায় আসলেন। যশোরের ডিসি মাগুরাতে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গানের শিল্পী হিসেবে প্রণব’কে পছন্দ করলেন। প্রণবের গান শুনে তৎকালিন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী বি. চৌধুরী খুশী হলেন। প্রণব তখন ফ্যামিলি প্লানিংএ চাকরি করতেন। প্রণব যেন ঢাকায় অবস্থান করে তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারেন এজন্য জনাব বি. চৌধুরী প্রণব’কে যশোর থেকে ঢাকাস্থ অফিসে বদলী করে নিয়ে আসলেন।
১৯৮১ সালে প্রণব প্রথম চলচ্চিত্রে গান করেন। আবদুল্লাহ আল মামুনের চিত্রনাট্যে ‘এখনই সময়’ ছবিতে সেখসাদী খানের সুরে ‘আমি রাজ্জাক হইলাম না, আমি কবরী হইলাম না, আল্লাহ কেন নায়ক কইরা জন্ম দিল না।’ গানটি প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সর্বমোট তিনি প্রায় ২০০ সিনেমার গানে দিয়েছেন। সিনেমা হলে গিয়ে যখন ছবি দেখতেন তখন তিনি তাঁর নিজের গাওয়া গান নিজেই পছন্দ করতেন না। যেহেতু প্রণব ছোট বেলা থেকেই নিজে বিভিন্ন গানের নতুন নতুন সুর দেবার চেষ্টা করতেন, তাই এ সময় তিনি গান গাওয়া ছেড়ে সুরের দিকে ঝুঁকে পড়লেন।
উপ-মহাদেশের বিখ্যাত সুরকার দেবু ভট্টাচার্যের কাছে সুর তৈরীর কাজ শিখলেন। এরপর তিনি সেখসাদী খান ও সুবল দাসগুপ্ত-এর কাছে কাজ শিখলেন। সর্বশেষ তিনি প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক আনোয়ার পারভেজের কাছে কাজ শিখেছেন। এই কাজের ফাঁকে তিনি আবার চলচ্চিত্রেও গান করতেন এবং পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চাকরি করতেন।
ক্যাসেট ইন্ডাস্ট্রী তখন সবে মাত্র শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ক্যাসেট তেমন একটা শুনতেন না। চট্ট্রগ্রামে দেবু নামে এক বন্ধু প্রথম তাঁকে ক্যাসেট বের করার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু ১২টি গানে সুর দিয়ে ক্যাসেট বের করাকে তিনি অসম্ভব মনে করলেন। এক রকম জোর করেই তাঁর বন্ধু প্রণব’কে ক্যাসেট জগতে প্রবেশ করালেন। এর পর তিনি আর থেমে থাকেননি। নব্বই দশকের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেন। আধুনিক গানের বিশাল বাজার তৈরী করলেন। নতুন শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন আলাদা এক জগৎ।
প্রণবের জীবনের প্রথম ক্যাসেটের শিল্পী ছিলেন উমা খান, দ্বিতীয় ক্যাসেটের শিল্পী ছিলেন মুশরাত শবনব, তৃতীয় ক্যাসেটের শিল্পী শরীফ রানা এবং চতুর্থ ক্যাসেটের শিল্পী ছিলেন শুভ্র দেব। চতুর্থ ক্যাসেটির নাম ছিল ছোঁয়া। প্রথম তিনটি ক্যাসেট খুব একটা জনপ্রিয়তা না পেলেও শ্রভ্রদেবের গাওয়া গানের চতুর্থ ক্যাসেটটি সুপার হিট হয়ে গেল। তার পর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি। একের পর এক ক্যাসেট প্রকাশ করলেন। এসবের মাঝে তিনি আবার চলচ্চিত্রের গানেও সুরারোপ করতেন। কিন্তু ছবিতে নকল গানের প্রাধান্য থাকায় তিনি চলচ্চিত্র থেকে সরে আসলেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ২০টি সিনেমার গানে সুরারোপ করেছেন।
দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক শিল্পীকে দিয়ে তিনি গান করিয়েছেন। বাংলাদেশের সাউন্ডটেক থেকে ভারতেন কুমার শানু’র কণ্ঠে যে গান গুলো মুক্তি পেয়েছে তাঁর মধ্যে অন্যতম (১) স্বজনী আমি তো তোমায় ভুলিনি’ (২) ‘শিল্পীর জন্যে গান, কবির জন্যে কবিতা’।
রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, শাহনাজ রহ্মতুল্লাহ, এন্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ, বেবী নাজনীন, কনক চাঁপা, মমতাজ, খালিদ হাসান মিলু, আয়ুব বাচ্চু, হাসানসহ বাংলাদেশের সমস্ত শিল্পীই তাঁর সুরে গান গেয়েছেন। জনপ্রিয়তা পেয়েছে বহু গান। আধুনিক সঙ্গীতের অনেক শিল্পীই তাঁর সুরে গান গেয়ে আজ জনপ্রিয় এবং প্রতিষ্ঠিত। তাদের মধ্যে অন্যতম শুভ্রদেব, রবি চৌধুরী, ডলি সায়ন্তনি, এসডি রুবেল, আঁখি আলমগীরসহ আরও অনেকে। তবে তাঁর সুরে সবচেয়ে বেশী গান গেয়েছেন ডলি সায়ন্তনি, শুভ্রদেব, তপন চৌধুরী, এস. ডি. রুবেল, আঁখি আলমগীর। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তাঁর সুরে প্রায় ৪০০টি ক্যাসেট মুক্তি পেয়েছে। তাঁর এ্যালবামের সংখ্যা ৩০০এর অধিক যা এদেশের অডিও ইন্ডাষ্ট্রিতে সর্বাধিক। ৩০০০ থেকে ৩৫০০ গানে তিনি সুরারোপ করেছেন। বাংলা গানে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন ভিন্ন এক ধারা। তাঁর সুরে শেষ গানটি হচ্ছে ডিরেক্টর নার্গিস আক্তারের “মেঘের কোলে রোদ” ছায়াছবির।
সংগ্রামী জীবন :
প্রণব ঘোষ শিল্পীজীবনের প্রথমটা পার করে এসেছেন বহু কষ্টের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৯ সালে যখন তিনি প্রথম ঢাকাতে আসেন তখন তিনি হাতিরপুল এলাকায় ছোট্ট একটি বাসা নিয়ে থাকতেন। মূলত ওখানে থেকেই বড় বড় সুরকারদের সাথে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করতেন। প্রথমে অনেকের কাছেই গুরম্নত্ব পেতেন না। তবুও তিনি তাঁদের পিছু ছাড়েননি। এভাবে প্রায় ১০ বছর কাজ শিখেছেন। সবচেয়ে কঠিন সময়ে স্ত্রী সাবিহা চৌধুরী (চম্পা) তাঁর পাশে ছিলেন। মূলত তাঁর অনুপ্রেরনায় চাকরিজীবি প্রণব ঘোষ থেকে বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক। বিগত কঠিন জীবনের উপর একটি বই লেখার ইচ্ছা ছিল প্রণব ঘোষের।
সম্মাননা :
তাঁর জীবনের প্রথম পুরস্কার অন্যদিন এবং ইমপ্রেস টেলিফ্লিমস্ এর এওয়ার্ড। এই পুরষ্কারটি ছিল শ্রেষ্ঠ মিউজিক ডিরেক্টর হিসাবে। এরপর চিটাগং-এ লাইলী সঙ্গীত একাডেমী থেকে শ্রেষ্ঠ মিউজিক ডিরেক্টরের এওয়ার্ড, বাচসাস এওয়ার্ড, সিঙ্গাপুরে কয়েক হাজার বাঙ্গালীর কাছে সংবর্ধনা, চিটাগং ও সিলেট থেকে সংবর্ধনা, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বহু পুরষ্কার ও সংবর্ধনাসহ বহু মানুষের ভালবাসা অর্জন করেছেন প্রণব। তাঁর পৈত্রিক ভিটা লোহাগড়াতে তিনি বিশাল সংবর্ধনা পেয়েছেন। যশোরের মানুষের কাছে তিনি সবচেয়ে বেশী ভালবাসা পেয়েছেন।
কলকাতার সানন্দা পত্রিকায় তাঁর দুইবার সাক্ষাৎকার বেরিয়েছে। সাক্ষাৎকার দুটি নিয়েছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক শংকর লাল ভট্টাচার্য। তিনি প্রায় ৩২টি জেলা থেকে সংবর্ধনা পেয়েছেন। ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠন থেকে সংবর্ধনা পেয়েছেন। তাঁর অর্জিত আন্যতম এওয়ার্ড গুলি হচ্ছে :
* বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ সংস্থা বা. চ. সা. চ কর্তৃক স্বর্ণপদক পুরষ্কার ২০০০।
* অন্যদিন ইমপ্রেস টেলিফ্লিম পাফরমেন্স এওয়ার্ড ১৯৯৮।
* বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি বা. চ. সা. চ কর্তৃক পুরষ্কার ১৯৯৯।
* ২০০১ সালের আগস্ট মাসে সিঙ্গাপুরের বাঙ্গালী কর্তৃক পুরষ্কার।
* নারায়ণগঞ্জ থেকে ফাইভস্টার ইয়ং ক্লাব আড়াই হাজার কর্তৃক স্বর্ণপদক পুরষ্কার।
* ফরিদপুর সাহিত্য সাংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক পুরষ্কার ৩০ এপ্রিল ২০০০।
* থিয়েটর সাতক্ষীরা কর্তৃক পুরষ্কার ১৯৯৩।
* ফেনী সর্বস্তরের শিল্পীদের পক্ষ থেকে পুরষ্কার ১৯৯৭ ।
* লাইলী সঙ্গীত একাডেমী চট্টগ্রাম কর্তৃক পুরষ্কার ১৯৯৬।
* চাঁদের যশোর কর্তৃক পুরষ্কার ১৯৯৫।
* চাঁদপুর জেলা পুলিশ বাহিনী কর্তৃক পুরষ্কার ১৯৯১।
* টাউন ক্লাব কুলাউড়া মৌলভী বাজার সিলেট থেকে পুরষ্কার ১৯৯৯।
* লতাঁরতি আল-আমিন যুব সমাজ কল্যাণ সংস্থা কর্তৃক স্বর্ণপদক পুরষ্কার ২০০০।
* যশোর সুরবিতান সঙ্গীত একাডেমী কর্তৃক পুরষ্কার ২০০০।
* প্রচ্ছদ ক্লাব চট্টগ্রাম কর্তৃক পুরষ্কার ১৯৯৬।
* নাভারণ সঙ্গীত একাডেমী কর্তৃক পুরষ্কার ২০০১।
* ঝিনাইদহ জেলা সমিতি কর্তৃক পুরষ্কার ২০০১।
স্বদেশ প্রেম :
প্রণব বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে যশোরের সন্তান বলে গর্ব বোধ করেন। যশোরে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সময় বন্যার্তদের সাহায্যার্থে ৪ই নভেম্বর ২০০০ সালে যশোর মনিহার প্রেক্ষাগৃহে কিছু সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ৭ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছিলেন।
যশোরের বিখ্যাত মাইকেল একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা প্রণব ঘোষ। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি এর সভাপতি ছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল একটি সঙ্গীত একাডেমী প্রতিষ্ঠা করবেন যেখানে যশোরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যে সব প্রতিভাবান শিল্পীরা আর্থিক অভাবের কারণে বিকশিত হতে পারছে না, সে সমস্ত শিল্পীদের খুঁজে বের করে ফ্রী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। এছাড়াও প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের আরও ভাল করে প্রশিক্ষণ দেয়া, যাতে তাঁরা আরও সঠিক ও সুন্দরভাবে গান ও সুর করতে পারে। পৈত্রিক ভিটায় বাবার নামে একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী প্রজন্মে যারা সুরকার হতে যাচ্ছেন তাদেরকে আরও ভাল করে প্রশিক্ষণ দেয়া। কিন্তু তাঁর অকাল মৃত্যু এসব মহৎ পরিকল্পনাকে স্তব্ধ করে দিলো।
বিবাহিত জীবন :
প্রণব ৭০-এর দশকে যশোরে বিখ্যাত চৌধুরী পরিবারের মেয়ে সাবিহা চৌধুরী (চম্পা)-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথমে নিঃসস্তান ছিলেন। পরে কন্যা সন্তান ‘তিথি’র বাবা হন প্রণব ঘোষ।
প্রিয় ব্যক্তিত্ব :
প্রণবের প্রিয় ব্যাক্তিত্ব তাঁর মাতা ও হযরত খাজা মইনুদ্দীন চিশ্তী (রা:)।
পরোলোক গমন :
জনপ্রিয় এই সঙ্গীত পরিচালক ২০০৭ সালে ৫৭ বছর বয়সে লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে দুই মাস চিকিৎসার পর ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মোহাম্মদ সফি (প্রণব ঘোষ) মারা গেলে সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনে শিল্পী সুবীর নন্দী, এন্ডু কিশোর, ডলি সায়ন্তনি, আলম আরা মিনু, এডি রুবেল, শুভ্র দেবসহ বহু শিল্পী তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ অডিও ক্যাসেট ও সিডি প্রকাশক কমিটি। তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বেইলি রোডে অডিও আর্ট প্রাঙ্গনে। পরে তাঁকে যশোরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতি সংগঠনের নেতা কর্মীরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। যশোরের সুরবিতান সঙ্গীত একাডেমী, কিংসুক সঙ্গীত একাডেমীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তাঁর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। যশোরের চৌরাস্তা মোড়ে বাদ মাগরিব শত শত লোকের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। যশোর কারবালা গোরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
তথ্য সূত্র :
সাক্ষাৎকার
সম্পাদনা :
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট :
ফেব্রুয়ারি ২০১২