
Home দৃষ্টিপাত (Visibility) > বিলুপ্তির পথে ইউনিপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86683 বার পড়া হয়েছে
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিবর্তনের ইতিহাসে ইউনিপ্যাথি একটি অধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। যার সমস্ত উপদানগুলি সীমিত সংখ্যক নির্ভেজাল, নির্দোষ, দেষীয় খাদ্য জাতীয় উপাদান থেকে সংগৃহীত, যাহা আবহমানকাল থেকে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি খাদ্য দ্রব্য, মসলা ও ঔষধের উপদান হিসাবে ব্যবহার করে থাকি। এই সীমিত সংখ্যাক উপদান হতে মানুষ, গৃহ পালিত পশু-পাখিসহ সমস্ত প্রাণীর রোগের জন্য ইউনিপ্যাথি এক বিস্ময়কর আবিস্কার। এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় মোট ঔষধ সংখ্যা মাত্র ২৮টি যা সুক্ষ্ণ বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রস্তুত। কার্যকারিতার দিক থেকে এ ঔষধগুলি এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, বায়োক্যামিক, হেকিমি, কবিরাজী, আর্য়ুবেদী, ইউনানী প্রভৃতি অপেক্ষা অধিকতর দ্রুত, নিরাপদ, নিশ্চিত ফলপ্রদ। পাকিস্তানের করাচি শহর রিসার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ডাঃ এস মাহদী হাসান এ ঔষধগুলি পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং করাচী থেকে প্রকাশিত “THE MEDICUS" মাসিক চিকিৎসা পত্রিকায় এ চিকিৎসা ব্যবস্থার মুলনীতি ছাপাইয়ে দিয়াছে।
ইউনিপ্যাথি চিকিৎসার মূলনীতি হলো- ‘স্থুল অবস্থায় যা খাদ্য, সুক্ষ্ম অবস্থায় তাই ঔষধ’। এই কথাগুলির সহজ সরল অর্থ হচ্ছে এই যে, দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা খাদ্য হিসাবে খাই, রোগাক্রান্ত অবস্থায় তাই ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বস্তুতঃ চিকিৎসা হচ্ছে অসুস্থ অবস্থায় শরীরে এক প্রকার মেরামত। যে জিনিষ দিয়ে যা তৈরী, তা মেরামত করতে আবার তাই প্রয়োজন হয়। সুতি বস্ত্র হলে সুতা দিয়ে, রেশমী বস্ত্র হলে রেশম দিয়ে, লৌহের জিনিস হতে লৌহ দিয়ে, কাঠের দ্রব্য হলে কাঠ দিয়ে মেরামত করতে হয়। সুতরাং যে সমস্ত খাদ্য উপাদান দ্বারা আমাদের দেহ গঠিত, পরিপুষ্ঠ এবং সংরক্ষিতভাবে সমস্ত উপাদানই যে অসুস্থ অবস্থায় আমাদের দেহের চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে তা অত্যন্ত সংগত ও স্বাভাবিক।
আমাদের দেহ খাদ্য উপাদান দ্বারা গঠিত। আমরা যা খাই পরিপাক ক্রিয়ার মধ্যদিয়ে গিয়ে তা সারাংশ ও অসারংশে পরিণত হয়। অসারাংশ মলমুত্র রূপে বের হয়ে গিয়ে সারাংশ রক্তের সঙ্গে মিশে স্বাস্থ্য রক্ষা করে। রোগ জীবাণু যেমন সুক্ষ্ম তেমনই সুক্ষ্ম দ্রব্য দিয়েই তার মোকাবেলা করতে হয়। রোগ অবস্থায় পরিপাক শক্তি এমন দূর্বল হয়ে পড়ে যে, শরীর খাদ্য হতে তার সারাংশ গ্রহণ করতে পারেনা।
যে সকল মৌলিক উপাদান দিয়ে খাদ্য গঠিত তা দিয়ে শরীরের চিকিৎসা করলে চিকিৎসা যতটা কার্যকরী হয় তা অন্য কোন পদ্ধতিতে এত সহজে সম্ভব নয়। ভিন্ন ভিন্ন খাদ্য ভিন্ন ভিন্ন উপাদান দ্বারা গঠিত। যেমন লবণ, টক, মিষ্টি, ঝাল সমস্ত খাদ্যই কমবেশী অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ প্রভৃতি দ্বারা গঠিত। তেমনই আমাদের শরীরের রস, রক্ত পিত্ত, শ্লেষ্মা, মেদ, মাংস, মজ্জা, প্লীহা, যকৃত, ফুসফুস প্রভৃতি বিভিন্ন অংশও তেমন একই মৌলিক উপাদানসমুহ অর্থাৎ কমবেশী অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, সোডিয়াম, ক্লোরাইন, ম্যাগনেশিয়াম, লৌহ, ম্যাংগানিজ, কপার, আইয়োডিন, কেবালিট, জিংক প্রভৃতি দ্বারা গঠিত। একই মৌলিক উপাদান সমূহ যা দিয়ে আমাদের খাদ্য গঠিত ঠিক তা দিয়েই আবার আমাদের মৌলিক উপাদান সমূহ যদি শরীর গঠনে এবং শরীর রক্ষায় সাহায্য করতে পারে। তা হলে ঐ একই উপাদান সমুহের অভাব কেন রোগাক্রমন এবং স্বাস্থ্য হানীর কারণ হবে না? কিন্তু যেহেতু খাদ্যের দিক হতে বিবেচনা করতে গেলে ঐ সমস্ত মৌলিক উপাদানসমুহ ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যে ভিন্ন ভিন্ন অনুপাতে বর্তমান, আবার দেহের দিক হতে বিবেচনা করতে গেলে দেহের বিভিন্ন অংশে ঐ সমস্ত মৌলিক উপাদানসমূহ বিভিন্ন অনুপাতে বিদ্যমান। সুতরাং রোগাক্রান্ত অবস্থায় দেহের জন্য ঐ সমস্ত খাদ্য দ্রব্যই কেবল ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে যার ভিতর ঠিক ঐ সমস্ত মৌলিক উপাদান সমুহই অধিক পরিমানে বর্তমান থাকবে যার অভাবে উক্ত বিশেষ রোগের আবির্ভাব হয়েছে অথবা যার ভেতর উক্ত রোগ জীবানু বিধ্বংসী শক্তিসমুহ অধিক পরিমানে বিদ্যমান আছে। প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থাধীন গবেষনার ফল ও এই ব্যাপারে আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে।
এই মূলনীতিকে ভিত্তি করে রশুন সজিনা, আমলকী, হেলাঞ্চ, সরিষা, হলুদ, মানকচু, মধু প্রভৃতির ন্যায় অতি সাধারণ এবং যা একাধারে খাদ্য এবং ঔষধের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে আসছি সেইরূপ মুষ্টিমেয় সংখ্যক ভেষজ হতেই ইউনিপ্যাথি ঔষধের সমস্ত উপাদানসমুহ সংগৃহীত। তাই দাবি করা যায় এই চিকিৎসা ব্যবস্থা চিকিৎসা জগতের একটি নতুন দৃষ্টিভংগী, একটি নতুন অবদান।
ইউনিপ্যাথি চিকিৎসার বৈশিষ্ট্য
১। ইউনিপ্যাথি চিকিৎসার সকল ঔষধগুলি সীমিত সংখ্যক (মাত্র ১৬টি) নির্দোশ, দেশীয় খাদ্য জাতীয় উপাদান হতে সুস্থ্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রস্তুত। এই ঔষধের মোট সংখ্যা মাত্র ২৮ (আটাশ) টি এবং আঠাশটি ঔষধেই প্রায় সর্বরোগ সর্বাপেক্ষা দ্রুত নিরাপদ ও নিশ্চিতভাবে আরোগ্য হয়ে থাকে।
২। এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় ঔষধের সংখ্যা অত্যল্প বলে কোন নিদৃষ্ট রোগে ঔষধ নির্বাচনে প্রায়ই ভুল ভ্রান্তি হয় না। কিংবা নির্দোশ দেশীয় খাদ্য জাতীয় উপাদানে সুক্ষ্ণ বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রস্তুত বলে এই ঔষধ নির্বাচনে সামান্য ভুল ভ্রান্তি হলেও কোন ক্ষতি হয় না।
৩। ইউনিপ্যাথি ঔষধের উপাদানসমুহ অতি সামান্য মূল্যের দেশীয় খাদ্য জাতীয় উপাদান হতে সংগৃহীত বলে এই ঔষধ নাম মাত্র মুল্যে (উপকারের তুলনায়) সরবরাহ করা সম্ভব। তাই ধনী, মধ্যবৃত্ত হতে শুরু করে নিত্যান্ত গরীব জনসাধারণ ও সহজেই এই চিকিৎসার সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।
৪। এ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, হেকিমী, কবিরাজী, আয়ুর্ব্বেদী, ইউনানী প্রভৃতি চিকিৎসা ব্যবস্থায় তুলনায় এই ইউনিপ্যাথিক ব্যবস্থায় চিকিৎসা করলে রোগীর রোগ ভোগকাল অনেক কম হয় অথচ সর্বরোগে স্থায়ী ফল পাওয়া যায়।
৫। ইউনিপ্যাথি নির্দোশ দেশীয় খাদ্য জাতীয় উপাদান হতে সুক্ষ্ণ বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রস্তুত বলে এই ইউনিপ্যাথি ঔষধ ব্যবহারে রোগীর দেহে ও মনে কোনরূপ বিরুপ প্রতিক্রিয়া বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না।
৭। ইউনিপ্যাথি চিকিৎসায় এক জাতীয় রোগের জন্য একই ঔষধ নির্দৃষ্ট হওয়ায় ঔষধ নির্বাচনের জন্য এ্যালোপ্যাথির মতো ব্যাপক ব্যয়বহুল প্যাথলজিক্যাল অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। অথবা হোমিওপ্যাথির মতো অসংখ্য লক্ষণ জেনে অসংখ্য ঔষধের মধ্য হতে সঠিক ঔষধ নির্বাচনের জন্য ব্যাপক চিন্তা-ভাবনা করতে হয় না। যেমন: কলেরা, ডাইরিয়া, আমাশয়, রক্ত আমাশায়, সাধারণ পাতলা পায়খানা ইতা্যাদির জন্য একই ঔষধ নিদৃষ্ট। আবার কাশি, কাশির সাথে জ্বর, হুপিংকাশি, নিউমোনিয়া, ব্রন, ব্রঙ্কাইটিস, প্লুরিসি, হাঁপানী (ব্রঙ্কীয়াল এ্যাজমা), ফুসফুসীয় যক্ষা প্রভৃতি রোগে একই ঔষধ নির্ধারিত। তেমই টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোগের জন্য একই ঔষধ প্রযোজ্য।
ইউনিপ্যাথি চিকিৎসার ভবিষ্যত সম্ভাবনা উজ্জ্বল
ইউনিপ্যাথি চিকিৎসাকে জনপ্রিয় গড়ে তুলবার পথে প্রধান অন্তরায়
সর্বশেষ আপডেট :
০৩.০৪.২০১১