
Home শিল্পী / Artist > কাজী আবুল কাশেম / Kazi Abul Kashem (1913-2004)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86661 বার পড়া হয়েছে
কাজী আবুল কাশেম / Kazi Abul Kashem (1913-2004)
কাজী আবুল কাশেম
Kazi Abul Kashem
Kazi Abul Kashem

উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম কার্টুনিষ্ট, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ও শিশুসাহিত্যিক কাজী আবুল কাসেম ১৯১৩ সালের ৯ই মে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজী মকবুল আলী শিক্ষিত সাংস্কৃতিবান ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম আধুনিক মুসলিম গদ্যশিল্পী মীর মোশাররফ হোসেনের বন্ধু। মাতা মেহেরুননেসা খাতুন উমেদপুরের সম্ভ্রান্ত আলেম বংশের গুণানিক্ষত মহিলা ছিলেন। কাজী আবুল কাসেম মাত্র ৪ বছর বয়সে পিতা এবং ৫ বছর বয়সে মাকে হারান।
শিল্পীজীবন:
শৈশবকাল থেকেই তাঁর চিত্রকলার প্রতি আকর্ষণ ছিল। তিনি নিভৃতে ছবি আঁকতে থাকনে। বড় ভাই কথাসাহিত্যিক কাজী আবুল হোসেন এ বিষয়ে ছিলেন তাঁর একমাত্র উৎসাহদাতা। কাজী আবুল কাসেম পিতার প্রদর্শিত পথেই সেকালের ধর্মীয় গোড়ামি ও কুসংস্কারের বেড়াজাল ভেঙে অবিভক্ত ভারতে উনিশ শতকের তিরিশ দশকে প্রথম বাঙালি মুসলমান চিত্রকর হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন।
১৯২৬ সালে তাঁর চিত্রকর্মে মুগ্ধ হয়ে ফরিদপুর শহরের এক পাদ্রী তাঁকে নিয়ে কলকাতা যান গভর্ণমেন্ট আর্ট স্কুলে ভর্তি করানোর উদ্দেশে। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বয়স কম হওয়ার কারণে দেশে ফিরে আসেন। ১৯২৮ সালে আসাম হয়ে পুনরায় কলকাতা যান।
১৯৩০ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সম্পাদিত বিখ্যাত মাসিক সওগাত (বাংলা ১৩৩৭ সালের পৌষ সংখ্যা)-এ প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কার্টুন চিত্র। এর মাধ্যমে আবুল কাসেম চিহ্নিত হন প্রথম বাঙালি মুসলিম কার্টুনিষ্ট ও চিত্রশিল্পী হিসেবে। এরপর বহু দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকায় তাঁর আঁকা একরঙা ও বহুরঙা চিত্র এবং কার্টুন প্রকাশিত হতে থাকে। অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ ঘটে তাঁর নিপুণ হাতে পরম আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততায়। কলকাতার কমার্শিয়াল আর্ট স্টুডিওতে তিনি সামান্য বেতনের চাকরিতে প্রবেশ করে অল্প সময়েই প্রতিষ্ঠানের প্রধান চিত্রকর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯৪১ সালে বেঙ্গল গভর্ণমেন্টের শিল্প বিভাগে চাকরি নেন। ১৯৫০ সালের গোড়ার দিকে শিল্প বিভাগের আওতায় ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার ফর ডিমোবিলাজড পার্সোনেলের বালিগঞ্জ শাখায় শিল্পী শিক্ষকের পদে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৫০ সালের মধ্যভাগে তিনি কলকাতা থেকে এসে খুলনায় ছিলেন। পরে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মহান সৈনিক কাজী আবুল কাসেম তাঁর আঁকা "হরফ খেদাও" কার্টুচিত্রটির কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
১৯৬০ সালে এক বছর অস্থায়ীভাবে টেক্সবুক বোর্ডের আর্ট রিভিউয়ার এবং ১৯৬১ সালে থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামসের প্রধান শিল্প নির্দেশক ও শিশুসাহিত্যের বইয়ের রিভিউয়ার হিসেবে চাকরী করেছিলেন। এরপর তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
কাজী আবুল কাসেমের প্রতিভা বিকশিত হয় একজন সহজাত শিল্পী হিসেবে। পেশাদার হলেও তাঁর প্রকৃত ও মৌলিক শিল্পীসত্তা কখনও পরাভূত হয়নি।
অন্যান্য প্রতিভা:
অবিভক্ত বাংলার একজন পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী ও কার্টুনিষট ছাড়াও তিনি শিল্প সাহিত্যিক, ছড়াকার, সৌখিন কন্ঠশিল্পী, আধুনিক এক বিজ্ঞানমনা ব্যক্তিত্ব হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন।
সম্মাননা:
তিনি বাংলা একাডেমী পদক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র স্বর্ণপদক, শিল্পী এসএম সুলতান স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী পুরস্কার, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ, কাজী মাহবুব উল্লাহ-জেবুন্নেছা স্বর্ণপদকসহ অনেক পুরস্কার ও সংবর্ধনায় সম্মানিত হয়েছেন।
পরোলোক গমন:
বাঙালীর সাংস্কৃতিক রেনেসাঁর অন্যতম প্রাগ্রসর পুরুষ, প্রখ্যাত কার্টুনিষ্ট, চিত্রশিল্পী ও শিশুসাহিত্যিক কাজী আবুল কাসেম ২০০৪ সালের ১৯শে মে ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউণ্ডেশন হাসপাতালে ৯১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
তথ্য সংগ্রহ:
ইন্টারনেট
/
হাবিব ইবনে মোস্তফা
বিশেষ সহযোগিতায়:
মাহবুবুল আলম (গোরা)
এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর
দিগন্ত টেলিভিশন
সর্বশেষ আপডেট:
৩১ মে ২০১৩