
Home ধর্ম-সাধক / Religion-saint > শাহ মোহাম্মদ আব্দুল করীম (রহঃ) / Shah Muhammad Abdul Karim (Rh.) (1852-1915)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 89495 বার পড়া হয়েছে
শাহ মোহাম্মদ আব্দুল করীম (রহঃ) / Shah Muhammad Abdul Karim (Rh.) (1852-1915)
হযরত মাওলানা শাহ মোহাম্মদ আব্দুল করীম (রহঃ)
Hazrat Maulana Shah Muhammad Abdul Karim (Rh.)
Jessore
Hazrat Maulana Shah Muhammad Abdul Karim (Rh.)
Jessore
পারিবারিক পরিচিতি:
যশোর জেলায় ইসলাম প্রচারের ইতিহাসে হযরত মাওলানা শাহ মোহাম্মদ আবদুল করীম (রহঃ) চির স্মরনীয় হয়ে আছেন। হযরত মাওলানা শাহ আবদুল করীম (রহঃ) ১৮৫২ খৃষ্টাব্দে খড়কী গ্রামের সম্ভ্রান্ত পীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই খড়কীর পীর পরিবারের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান হলেন হযরত মাওলানা শাহ মোহাম্মদ আব্দুল করীম (রহঃ)।
শাহ আব্দুল করিমের পিতা শাহ মোহাম্মদ সলিম উদ্দীন চিশতীও কামিল দরবেশ ছিলেন। তাঁর কাছে বহু লোক দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। মোঘল আমল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত এই বংশের লোকেরা যশোর অঞ্চলে ইসলামের সুমহান বাণী প্রচার করে আসছেন।
মাওলানা শাহ মোহাম্মদ আব্দুল করীমের পূর্ব পুরুষ হলেন হযরত শাহ সুফী সুলতান আহমদ (রহঃ)। তিনি মোঘল সম্রাট মহামতি আকবরের প্রধান সেনাপতি রাজা মানসিংহের পদাতিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে যশোরে আগমন করেছিলেন এবং নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শনে মুগ্ধ হয়ে ও ইসলাম প্রচার করার জন্য যশোরে থেকে যান। সে সময় যশোরের চাঁচড়ার রাজা শুক দেব সিংহ রায় সম্রাট আকবর ও রাজা মানসিংহকে খুশি করবার উদ্দেশ্যে শাহ সুফী সুলতান আহমেদকে বসবাসের জন্য রাজবাড়ীর খিড়কির দিকে বেশ কিছু লাখেরাজ সম্পত্তি প্রদান করেন। এই খিড়কী এলাকা পরে খড়কী এলাকায় পরিণত হয়। যশোরের সর্বোবৃহৎ উচ্চ বিদ্যাপীঠ মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়টি এখানে অবস্থিত।
শিক্ষাজীবন:
শাহ আব্দুল করিম বাল্যকালেই পিতৃহারা হন। পরে তিনি দাদার তত্ত্বাবধানে লালিত পালিত হতে থাকেন। তার দাদা শাহ কলিম উদ্দীন চিশতীও একজন অলিয়ে কামিল দরবেশ ছিলেন। তিনি দাদর কাছে দ্বীনী ইসলামের প্রাথমিক সবক সম্পর্কে হাতে খড়ি নেন। তারপর তিনি স্থানীয় বিদ্যালয় হতে ছাত্র বৃত্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এই সময় তিনি দাদকে হারান। এই রকম অবস্থায়ও তিনি শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাননি। পরবর্তীকালে তিনি কলকাতা আলীয়া মাদরাসা থেকে অত্যান্ত সম্মানজনকভাবে জামা’আতে উলা পাশ করেন।
ইসলাম প্রাচার:
শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি যশোর জিলা স্কুলে হেড মৌলভী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। শিক্ষকতা করা অবস্থায় তাঁর ভিতর ‘ইলমে তাসাউফ’ সন্বন্ধে জানার কৌতুহল জাগলে তিনি ভারতের পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের হুশিয়ারপুর জেলার মৌজাকোর্ট আবদুল খালিক নামক স্থানের প্রখ্যাত অলিয়ে কামিল সুফী সাধক হযরত আবু সা’আদ মুহাম্মদ আব্দুল খালিক (রহঃ) এর নিকট মুরিদ হন। এখানে তিনি তাসাউফচর্চায় বার বছর নিমগ্ন থাকেন তাসাউফচর্চার উচ্চস্তরে উপনীত হন। তাঁর পীরের কাছ থেকে তিনি নকশ বন্দীয়া, মুজাদ্দিদিয়া, কাদিরিয়া, চিশতিয়া, সুহরাওয়ার্দিয়া তরিকার খিলাফত প্রাপ্ত হন। সেই সাথে তিনি স্বদেশে ইসলাম প্রচার করার জন্যও পীর কর্তৃক নির্দেশপ্রাপ্ত হন।
জন্মভুমি যশোরে প্রত্যাবর্তন করে তিনি ইসলামের প্রচার ও প্রসারের কাজে ব্যাপৃত ছিলেন এবং সমাজ থেকে কুসংস্কারের মুলোৎপটান করার চেষ্টা চালান। যশোরের অলিতে গলিতে যখন হিন্দু ও খ্রীস্টানগণ ইসলামের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপপ্রচারে অবতীর্ণ হয়েছিল তখন এই মহান সাধক ইসলামের সুমহান বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। এই সময় তাঁর হাতে হাত দিয় অনেক বিধর্মী ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছিল।
বাংলার প্রখ্যাত বহুভাষাবিদ ও পন্ডিত ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এক সময় যশোর জিলা স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলেন এবং শাহ আব্দুল করিমের সান্নিধ্য এসে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।
গ্রন্থ রচনা:
হযরত শাহ মুহাম্মদ আব্দুল করিম (রঃ) একজন উঁচু স্তরের সাহিত্যিকও ছিলেন। ইলমে তাসাউফের উপর তিনি ‘এরশাদে- খালেকিয়া বা খোদা প্রাপ্তি তত্ত্ব’ নামক একখানি পান্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে সাধারণ পাঠকদের জন্য তিনি বাংলাভাষায় তাসাউফ তত্ত্বমূলক শ্রেষ্ঠ বই লিখেছিল। তিনি গ্রন্থখানি রচনা করেছিলেন তাঁর পীর হযরত খাজা আবু সা’আদ মোহাম্মদ আবদুল খালেক সাহেবের অনুপ্রেরণায় এই বই লিখে তিনি ইসলামী চিন্তাধারার এক মৌলিক উৎসের সন্ধান দিয়েছেন। তাসাউফের উপর রচিত বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বিস্তারিত ও তত্ত্ব এবং তথ্যবহুল এই গ্রন্থ ছাড়া অন্য কোন গ্রন্থ পাওয়া যায় না। তাঁর জীবদ্দশায় গ্রন্থটির দুটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। তৃতীয় সংস্করণ তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়। এখনো এই গ্রন্থের নতুন নতুন সংস্করণ বের হচ্ছে।
পরলোক গমন:
হযরত শাহ আব্দুল করিম (রঃ) বাংলা ১৩২২ সনের (ইং- ১৯১৫) ৩০শে অগ্রহায়ণ খড়কীস্থ নিজ খানকা শরীফে ইন্তেকাল করেন। এখানেই তাঁর মাযার আছে। প্রতিদিন বহু যিয়ারতকারী তাঁর কবর যিয়ারত করার জন্য আসেন। দেশবাসী তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। তাঁর নামে শাহ আব্দুল করিম সড়ক রয়েছে। ব্যাক্তিগত জীবনে শাহ আব্দুল করিম সাদাসিধে আড়ম্বরহীন, বিনয়ী ও নম্র জীবনযাপন করতেন। তাঁর বংশধরেরা আজও ইসলামের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। বর্তমানে তাঁর প্রপৌত্র শাহ্ কামরুল হাসান হাসু খড়কীর গদ্দীরশীন পীর।
তথ্য সংগ্রহ:
হাবিব ইবনে মোস্তফা
সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
শামিউল আমিন শান্ত
সর্বশেষ আপডেট:
২০.০৫.১১