
Home ধর্ম-সাধক / Religion-saint > বৃহত্তর যশোরের পির দরবেশ / Saint of Greater Jessore district
এই পৃষ্ঠাটি মোট 89554 বার পড়া হয়েছে
বৃহত্তর যশোরের পির দরবেশ / Saint of Greater Jessore district
বৃহত্তর যশোর জেলার পির দরবেশ
Saint of Greater Jessore district
হযরত খান বাহাদুর মাওলানা আহমেদ আলী এনায়েতপুরী (রঃ):
১৮৯৮ খৃষ্টাব্দে যশোর সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে হযরত খান বাহাদুর মাওলানা আহমদ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এলাকায় অলিয়ে কামিল সুফী সাধক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সুসাহিত্যিক হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো:
(১) ফতোয়ায়ে এসলামিয়া (২) তফসিরে সুরায়ে ইয়াসিন (৩) ওজীফা এরশাদ ছিদ্দিকীয়া (৪) তালিমে মুসলিম বা নামায শিক্ষা (৫) দাফেয়ে জ্বোলমাত বা দ্বীন দুনিয়ার শান্তি (৬) কারামতে আউলিয়া বা শাহ সাহেবের জীবনী (৭) একামাতুস সুন্নাৎ বা বেদয়াত খন্ডন ইত্যাদি।
১৯৪৮ খৃষ্টাব্দে তিনি ‘মাসিক সরিয়তে এছলাম’ নামে একটি পত্রিকা বের করেছিলেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি এনায়েতপুরের মাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। প্রতি বছর এখানে ইছালে ছওয়াব ও ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান উপস্থিত হয়ে ইসলামের কথা শ্রবণ করে। হযরত খান বাহাদুর মাওলানা আহমদ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) দ্বিনের একনিষ্ঠ্য সেবক ছিলেন। তাঁর হাতে বহু লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল ও বহুলোক তাঁর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছিল। ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি তাঁকে অমর করে রাখবে।
হযরত সুফী সদরউদ্দীন (রঃ):
মাগুরা জেলার শালিখা থানার অন্তর্গত গঙ্গারামপুর গ্রামে সুফী সদরউদ্দীন ১৮৬৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। এন্ট্রান্স পাস করার পরে police এর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি গ্রহণ করেন। পরে চাকরি ত্যাগ করার পরে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটানোর জন্য চেষ্টা করেন। তিনি একজন উঁচু দরের সাহিত্যিকও ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হল:
(১) এলম তাছাওয়োফ (২) আল্লাহ তায়ালার তরিকা (৩) এলম তাছাওয়োফ (কাদেরিয়া তরিকা) (৪) এলম তাছাওয়োফ (চিশতিয়া তরিকা) (৫) বিবি ও শওহরের কর্তব্য (৬) আমার প্রাণের রসুল নবী মুহাম্মদ (সঃ) (৭) ওলি বিবির কাহিনী (৮) বুজর্গ নামা (৯) আকায়েদোল এছলাম (১০) সন্দীপে টানা শাহের মাযার (১১) ফজিলতে কোরবানী ইত্যাদি।
১৯৪৩ খৃষ্টাব্দের ১ জানুয়ারিতে ফেনীতে তিনি ইন্তেকাল করেন। ফেনীতে তাঁর সমাধি আছে।
হযরত পীর জয়েন উদ্দীন ওরফে জয়ন্তী (রঃ):
হযরত পীর জয়েন উদ্দীন হযরত খান জাহান আলীর এদেশীয় শিষ্য ছিলেন। তিনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়েছিলেন বলে জানা যায়। তিনি যশোরের মাগুরা অঞ্চলের অসংখ্যা হিন্দু ও অমুসলিমকে ইসলাম ধর্মে দিক্ষীত করেন। মাগুরা গ্রাম তাঁর ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রস্থান ছিল। এ অঞ্চলে তাঁর নাম কিংবদন্তীর মত ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বড় পীর সাহেব নামে সমধিক পরিচিত। মেহেরপুরের দক্ষিণে তালা থানার এলাকাধীন মাগুরা গ্রামে পীর জয়েনউদ্দীন (রঃ) চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। লোকে তাঁকে পরম শ্রদ্ধায় ভক্তি করিত। এমন কি তাঁর মাজারকেও লোকেরা পরম শ্রদ্ধায় ভক্তি করে। হিন্দু ভক্তদের কারণে জয়েন উদ্দীন নামটি জয়ন্তী নামে পরিচিত হয়েছে। তাঁর দরগায় এখনও আমবাবুর্চীর সময়ে মেলা বসে। তিনি এ অঞ্চলে বিশেষ সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন।
কেহ কেহ তাঁকে খান জাহানের সাথী বলে স্বীকার করেন না। তাঁর ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র স্থল মাগুরা কপোতাক্ষ নদীর পার্শ্বে অবস্থিত। এ থেকে অনুমান করা যায় যে, তিনি হযরত খান জাহান আলীরই একজন শিষ্য ছিলেন। হযরত খান জাহান আলী (রঃ) এর শিষ্যগণ কপোতাক্ষ নদের কূলরেখা ধরেই সুন্দরবনের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। ইসলাম প্রচারক হিসাবে তিনি এ অঞ্চলে সম্মানিত ছিলেন। হিন্দু ও অমুসলিমগনও তাঁকে যথেষ্ট সম্মান করে চলত।
হযরত শাহ জিয়া আলী (রঃ)
আজ থেকে আনুমানিক তিনশত বছর আগে হযরত শাহ জিয়া আলী (রঃ) নামে এক অলীয়ে কামিন সুফী সাধক ইসলাম প্রচারের জন্য পশ্চিমা কোন দেশ থেকে প্রাচীন জনপদ সাজিয়ালি গ্রামে আগমন করেছিলেন। যশোর শহর থেকে সাত মাইল পশ্চিমে চৌগাছা উপজেলা সড়কের ডানদিকের জনপদটিই হযরত শাহ জিয়া আলী (রঃ) এর স্মৃতি রক্ষা করে চলেছে। এককালে গ্রামের ভিতর দিয়ে হ্রদ প্রবাহিত হত। বর্তমানে তা মৃত। এই সাজিয়ালি নামে প্রাচীন জনপদের সাথে এই মহান সাধকের কর্মময় জীবনের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সাজিয়ালির হ্রদের তীরবর্তী স্থানে তাঁর আবাস ছিল। দ্বীনের এই মহান সাধক অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটান। হিন্দু জমিদার শ্রেণীর ভ্রকুটি উপেক্ষা করে তিনি ইসলামের প্রচার অব্যাহত রেখেছিলেন। উগ্র হিন্দুদের মধ্যেও নিম্নবর্ণের হিন্দুসহ উচ্চ বর্ণের প্রচুর হিন্দু ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে। ক্রমে ক্রমে এই এলাকায় ইসলাম নব উত্থিত শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। তিনি হযরত শাহ মাখদুম (রঃ) এর বংশের লোক ছিলেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে তাঁর নামানুসারে জনপদের নামকরণ হয় সাজিয়ালি। সাজিয়ালির পার্শ্ববর্তী এনায়েতপুর গ্রামে এক ঝোপের ভিতরে তিনি আজও চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
হযরত শাহ হাফিজ (রঃ)
ফরিদপুর এর শ্রেষ্ঠ অলিয়ে কামিল হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রঃ) এর উত্তর পুরুষ হলেন হযরত শাহ হাফিজ (রঃ)। হযরত শাহ হাফিজের প্রপিতামহ হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রঃ) পঞ্চদশ শতাব্দীতে দিল্লীর সৈয়দ সালতানাতের যুগে বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য ফরিদপুর অঞ্চলে আসেন এবং খানকা স্থাপন করেন। হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রঃ) উন্নত অলি ছিলেন। তাঁর মাযার মিরপুরে। শাহ আলী বোগদাদীর কয়েক পুরুষ পরে অষ্টাদশ শতাব্দীতে হযরত শাহ হাফিজ (রঃ) ফরিদপুরের গেরদা থেকে যশোর জেলার মাগুরা অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করার জন্য আসেন এবং খানকা স্থাপন করেন। শাহ আলী বোগদাদীর দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানাদির সাথে বংশ পরস্পরায় একটি রেষারেষি থাকায় বিরোধ দুর করার জন্য তিনি যশোরের মাগুরা অঞ্চলের আলোক দিয়াতে এসেছিলেন। তিনি নবাব আলীবর্দী খার শ্যালক এবং প্রধানমন্ত্রী মোল্লা শের আলীর কাছ থেকে সাহায্য, সহযোগিতা ও উপদেশ পেয়েছিলেন। মোল্লা শের আলী তাঁর ভগ্নীকে শাহ হাফিজের সাথে বিবাহ দেন এবং অনেক লাখেরাজ সম্পত্তি দান করে আলোকদিয়াতে আনেন। আলোকদিয়াতে এখনো পীর বাড়ি আছে। এই পীর পরিবারের শ্রেষ্ঠ সন্তান অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান।
হযরত মাওলানা মফিজুর রহমান (রঃ)
হযরত মাওলানা মফিজুর রহমান (রঃ) বরিশালের নওয়াপাড়া গ্রামে বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব তাহছীন উদ্দীন। মাওলানা মফিজুর রহমান মরহুম হযরত মাওলানা হাফেজ আব্দুর রব সাহেবের অন্যতম খলিফা ছিলেন। তিনি উচুমানের আলেম ও সুবক্তা ছিলেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজ নসিহত করে বেড়াতেন। এই ওয়াজ নসিহত উপলক্ষ্যে একদিন তিনি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গাজীর দরগায় গাজী প্রেমিকগণ কর্তৃক ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের কথা জানতে পারলেন। তিনি আরো জানতে পারলেন যে, গাজীর দরগায় প্রতি সপ্তাহে ২ দিন রোববার এবং বৃহস্পতিবার নারী পুরুষের মেলা বসে। সেখানে বছরে ফাল্গুন চৈত্র দুই মাস মেলা বসে। ভন্ড ফকিরদের দৌরাত্মের কথা, ইসলামের নামে নানা প্রকার অনৈসলামিক কার্যকলাপের কথা অবগত হয়ে তিনি বরিশাল জেলার ঝালকাঠি থানার নওয়াপাড়া গ্রামের থেকে এখানে এসে আস্তানা গাড়েন। এখানে এসে তিনি লোকজনদের সহায়তায় ১৩৪৫ বঙ্গাব্দের দিকে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা স্থাপন করেন। এখানে তিনি খুব বড় ধরণের ইছালে ছওয়াবের ব্যবস্থা করেন। তারপর ধীরে ধীরে অনৈসলামিক কার্যকলাপ রহিত হয়। গাজীর দরগা মাদ্রাসাটি এখন ফাযিল মাদ্রাসা এবং যশোরের অন্যতম মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত। এখানে একটি হেফজখানাও রয়েছে।
হযরত মাওলানা মফিজুর রহমান ১৯৯৩ সালের ১৫ নভেম্বর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
হযরত সরদার চাঁদ খাঁ (রঃ)
হযরত সরদার চাঁদ খাঁ (রঃ) ইসলাম প্রচারের জন্য সুদুর পশ্চিমের কোন এক দেশ থেকে এসেছিলেন। বর্তমান কোঁটচাদপুরে তাঁর আস্তানা ছিল। ১৫৭৬ সালে সরদার চাঁদ খাঁ কপোতাক্ষ বিধৌত শহরটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোঁটচাদপুর বৃহত্তর যশোর জেলার একটি প্রাচীন থানা শহর। সরদার চাঁদ খাঁর নামেই জনপদটি চাঁদপুর নামে পরিচিত হয়। পরে কোর্ট স্থাপিত হওয়ায় স্থানটির নামকরণ হয় কোঁর্টচাদপুর। ১৮৮৩ সালে এটি পৌরসভার মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৬৫৬ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। বর্তমান কোর্টচাঁদপুরের বাজারের পশ্চিম দিকে রুপালী ব্যাংকের সামনে বাঁধানো কবরটিই সরদার চাঁদখার সমাধি। তিনি কামিল পীর ছিলেন। লোকে তাঁকে পরম ভক্তি করিত। মরহুম কবি শামছুদ্দিন আহমদ (১৯১০-১৯৮৫) হযরত চাঁদ খাঁ (রঃ) এর অধঃস্তন সপ্তম পুরুষ।
হযরত খাজা মুহাম্মদ আলী শাহ (রঃ)
হযরত খাজা মুহাম্মদ আলী শাহ (রঃ) উনবিংশ শতাব্দীর শেষ পাদে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ সুদুর ইরান থেকে ইসলাম প্রচার করার জন্য যশোরের নওয়াপাড়ায় এসে বসতি স্থাপন করেন। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে এ পরিবারের অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। পীর হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আলী (রঃ) হযরত খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ সাহেবের পীর ছিলেন। তিনি যশোর খুলনা অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। যশোর খুলনা সড়কের পাশে শিল্প নগর নওয়াপাড়া শহরে তাঁর মাযার ও খানকাহ শরীফ আছে। তিনি ইরানী পীর সাহেব নামে পরিচিত।
হযরত শাহ সুফী সুলতান আহমদ (রঃ)
হযরত শাহ সুফী সুলতান আহমদ শাহ মোঘল সম্রাট মহামতি আকবরের সেনাপতি মানসিংহের পদাতিক বাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে যশোরে পদার্পন করেছিলেন। তিনি যশোর অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের জন্য থেকে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যাক্ত করলে চাঁচড়ার রাজা শুকদেব সিংহ রায় তাঁর বসবাসের জন্য রাজবাড়ীর খিড়কীর দিকে বেশ কিছু লাখেরাজ সম্পত্তি প্রদান করেন। খিড়কীর দিকে বেশ কিছু লাখেরাজ সম্পত্তি প্রদান করেন। এই খিড়কী এলাকা পরে খড়কী এলাকায় পরিণত হয়। তিনি যশোর অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের জন্য অশেষ অবদান রেখেছিলেন। হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আব্দুল করীম এই পরিবারের শ্রেষ্ঠ সন্তান ছিলেন।
হযরত পীর জল্লু জালাল শাহ (রঃ)
হযরত পীর জল্লু জালাল শাহ (রঃ) যশোর জেলার শেখপাড়া রহিতা গ্রামের ঐতিহ্যময়ী মস্তবড় জমিদারি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশবকালে তিনি খোদা প্রেমিক ছিলেন। যৌবনে সংসারী হলে সংসারের নানাবিধ যন্ত্রণায় তিনি সংসার বিরাগী হন। বৈষয়িক সম্পত্তির প্রতি আকর্ষণ না থাকায় তিনি আল্লাহর নামে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আল্লাহর ধ্যানে রত হবার এক পর্যায়ে তিনি কামেলিয়াত হাসিল করেন এবং ঘোড়াদহ গ্রামের গাঙনীর খালের তীরে আস্তানা গাড়েন। খড়কীর বিখ্যাত পীর সাহেব তাঁর প্রধান শিষ্য ছিলেন। আস্তানা থেকেই তিনি ইসলামের সুমহান বাণী চারিদিকে প্রচার করতেন। যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার অন্তর্গত ঘোড়াদহ গ্রামে গাঙনীর খালের তীরে হযরত পীর জল্লু জালাল শাহ (রঃ) চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। এখানে ছোট একটা দরগা আছে।
হযরত পীর সিরাজ দেওয়ান (রঃ)
হযরত পীর জল্লু জালাল শাহ (রঃ) এর পুত্র হযরত পীর সিরাজ দেওয়ান (রঃ) ষোলশ শতাব্দীর শেষদিকে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার ঘোড়াদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন আল্লাহ ওয়ালা লোক ও কামিল পীর ছিলেন। ঐতিহ্য সূত্রে তিনি পিতার কাছ থেকে পীরত্ব প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এখনও তাঁর অসংখ্য ভক্ত আছে। তাঁর ঔরসে দুটি সন্তান হয়েছিল বলে জানা যায়। তাঁদের সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। এ অঞ্চলে তাঁদের পিতা পুত্রের নামে নানারকম কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। পিতার পায়ের কাছে হযরত পীর সিরাজ দেওয়ান (রঃ) অনন্ত ঘুমের গভীরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তিনি অনেক মানুষকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন বলে জানা যায়। এই পীর বংশের সাবেকী শ্রী আজ বিলুপ্ত হয়েছে। কেহ তাদের নিয়ে আজ মাথা ঘামায় না।
সৈয়দ রিয়াজতুল্লাহ (রঃ)
সৈয়দ রিয়াজতুল্লাহ (রঃ) সুদুর আরব দেশ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য এদেশে এসেছিলেন। ১৬৩৭ খৃষ্টাব্দে ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি পাক ভারতে এসেছিলেন। যশোরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে ও ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি কেশবপুর উপজেলায় শেখপুরায় আস্তানা গাড়েন এবং স্থায়ীভাবে থেকে যান। এখানে তিনি একটি সুরম্য মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটি ইসলামী স্থাপত্য শিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন। বর্তমানে মসজিদটি অযত্ন অবহেলায় ধ্বংসের মুখোমুখি। সৈয়দ রিয়াজতুল্লাহ (রঃ) তাঁর শিষ্যদের সহযোগিতায় এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছিলেন। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না।
মাওলানা সুফী মুহাম্মদ আরব শাহ (রঃ)
মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আরিফ-ই-রাব্বানী ওরফে আরব শাহ হোসেন শাহী আমলে সুলতান নসরত শাহ কর্তৃক ইসলাম প্রচারের জন্য শৈলকুপাতে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। সুলতান নসরত শাহ শৈলকুপাতে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন এবং সেই মসজিদকে কেন্দ্র করে আরব শাহ ইসলাম প্রচার করার জন্য বসতি স্থাপন করেছিলেন। মসজিদটি এখনও কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। জানা যায় মাওলানা আরব শাহ ও তাঁর সহযোগী আব্দুল হাকিম খান ও সৈয়দ শাহ আব্দুল কাদির বোগদাদীর হাতে মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ ও স্থান জানা যায় না।
হযরত শাহ সুফী খয়ের শাহ (রঃ)
হযরত শাহ সুফী খয়ের শাহ (রঃ) হযরত শাহ আব্দুল্লাহ ওরফে ভালাই শাহ আল বোগদাদী (রঃ) এর একজন সাথী ছিলেন। জীবননগর উপজেলার খয়ের হুদা গ্রামে তিনি আস্তানা গাড়েন। জানা যায় তাঁর হাতে বহু লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিল। তাঁর নামেই গ্রামটির নাম হয়েছে খয়ের হুদা গ্রাম। তিনি খয়ের হুদা গ্রামেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
হযরত আলী মাওলা (রঃ)
হযরত মাহমুদ আলী শাহের উত্তর পুরুষ হলেন হযরত আলী মাওলা (রঃ)। তিনি অনেককে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর নামে ‘আলী মাওলার’ দরগাহ আছে মোহাম্মদপুর থেকে দুই মাইল পশ্চিমে।
হযরত শাহ সুফী সৈয়দ কারামতুল্লাহ বোগদাদী (রঃ)
হযরত শাহ সুফী সৈয়দ কারামতুল্লাহ বোগদাদী (রঃ) আনুমানিক অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইসলাম প্রচারের জন্য সুদুর বাগদাদ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আগমন করেছিলেন। বাগদাদ থেকে আগমন করেছিলেন বলে তাঁর নামের শেষে বোগদাদী আছে। তিনি মাগুরার মুহাম্মদপুরের নাকোল গ্রামে ইসলাম প্রচারের জন্য আস্তানা গাড়েন। পবর্তীকালে এখানেই তিনি বিয়ে করে স্থায়ী বাসিন্দা হন। তিনি বহু মানুষকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। এজন্য এতদঞ্চলের মানুষ তাঁকে ইসলাম প্রচারক হিসেবে স্মরণ করে। আনুমানিক ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দের দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন। সেখানে তার মাযার আছে।
সৈয়দ আহমদ আলী সিদ্দিকী (রঃ)
প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল হযরত শাহ সুফী সৈয়দ কারামতুল্লাহ বোগদাদী (রঃ) এর পুত্র ছিলেন সৈয়দ আহমদ আলী সিদ্দিকী (রঃ)। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে তিনি মাগুরার মুহাম্মদ পুরের নাকোল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতার যোগ্য পুত্র ছিলেন। পিতার চেয়েও তাঁর পরিচিতির পরিধি ব্যাপক ছিল। অত্র এলাকায় ইসলাম প্রচারের জন্য স্বরণীয় হয়ে আছেন। তিনি যশোবন্তপুরের পীর সাহেব হযরত মাওলানা আব্দুল লতিফ এর শ্বশুর ছিলেন। নাকোল গ্রামে তাঁর মাযার আছে।
হযরত সাতকড়ি ফকির (রঃ)
যশোর জেলার মাগুরার অন্তর্গত দ্বরিয়াপুর অঞ্চলে চারজন গাজীর আগমনের কথা জানা যায়। পরবর্তীকালে চারজন গাজীর নামে দ্বরিয়াপুরের পাশে চৌগাজী নামে একটি জনপদ গড়ে উঠেছিল। রণগাজী চারজন গাজীর একজন ছিলেন। হযরত সাতকড়ি ফকির (রঃ) এই রণগাজীর বংশধর ছিলেন। তিনি একজন কামিল ব্যাক্তি ও সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। আজও দ্বরিয়াপুরে তাঁর মাযার আছে।
হযরত মাওলানা সুফী তোয়াজ উদ্দীন আহমদ (রঃ)
হযরত মাওলানা শাহ সুফী তোয়াজ উদ্দীন আহমদ (রঃ) দ্বরিয়াপুরের গাজীদের উত্তর পুরুষ। তিনি ফুরফুরা শরীফের পীর মুজাদ্দাদই জামান হযরত মাওলানা শাহ সুফী আবু বক্কার (রঃ) এর অন্যতম প্রধান খলিফা। এখানকার খানকা শরীফে চৌঠা মাঘ হাজার হাজার লোকের সমাবেশে ইসালে ছওয়াব ও ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
হযরত সুফী সদরউদ্দীন (রঃ)
মাগুরা জেলার শালিখা থানার অন্তর্গত গঙ্গারামপুর গ্রামে সুফী সদরউদ্দীন ১৮৬৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। এন্ট্রান্স পাস করার পরে বনবিভাগে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি গ্রহণ করেন। পরে চাকরি ত্যাগ করার পরে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটানোর জন্য চেষ্টা করেন। তিনি একজন উঁচু দরের সাহিত্যিকও ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হল:
(১) এলম তাছাওয়োফ (২) আল্লাহ তায়ালার তরিকা (৩) এলম তাছাওয়োফ (কাদেরিয়া তরিকা) (৪) এলম তাছাওয়োফ (চিশতিয়া তরিকা) (৫) বিবি ও শওহরের কর্তব্য (৬) আমার প্রাণের রসুল নবী মুহাম্মদ (সঃ) (৭) ওলি বিবির কাহিনী (৮) বুজর্গ নামা (৯) আকায়েদোল এছলাম (১০) সন্দীপে টানা শাহের মাযার (১১) ফজিলতে কোরবানী ইত্যাদি।
১৯৪৩ খৃষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারিতে ফেনীতে তিনি ইন্তেকাল করেন। ফেনীতে তাঁর সমাধি আছে।
হযরত মাওলানা সামসুদ্দীন (রঃ)
উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে হযরত মাওলানা সামসুদ্দীন (রঃ) যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার মাছরাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অত্র এলাকায় অলিয়ে কামিল পীর ছিলেন। তাঁর হাতে বহু লোক ইসলাম ধর্মে দিক্ষা গ্রহণ করেন। মাছ রাঙ্গা গ্রামে তাঁর মাযার আছে। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের ইছালে ছওয়াব অনুষ্ঠানে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ ইসলামের কথা শোনার জন্য এখানে আসে।
হযরত মাওলানা মোহাম্মদ শাহ সূফী জয়নাল আবেদীন জিলানী (রঃ)
উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে হযরত মাওলানা শাহ সূফী জয়নাল আবেদীন জিলানী (রঃ) যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার কমলাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অত্র এলাকার অলিয়ে কামেল পীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ইসলাম প্রচারের কাজে সময় ব্যয় করেছিলেন। সাহিত্যিক মাওলানা মোহাম্মদ গোলাম জিলানী হযরত মাওলানা মোহাম্মদ শাহ সূফী জয়নাল আবেদীনের সুযোগ্য সন্তান।
হযরত পীর খাজা আব্দুল মজিদ শাহ (রঃ)
হযরত পীর খাজা আব্দুল মজিদ শাহ এর সুযোগ্য পুত্র হলেন হযরত পীর খাজা আব্দুল মজিদ (রঃ) । তিনি ১৯০৭ সালে নওয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যশোরের বিখ্যাত পীর ও অলিয়ে কামিল। বহু লোক তাঁর কাছে বায়াৎ হয়েছে। তিনি একজন সুসাহিত্যিক। ইসলামী সাহিত্য রচনায় তাঁর অবদানের কথা অস্বীকার করা যায় না। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ হল: (১) বার চাঁদের ফজিলত। (২) ছেরাতোল মোমেনিন।
হযরত কাজী আব্দুর রউফ (রঃ)
হযরত কাজী আব্দুর রউফ (রঃ) হযরত খাজা মুহাম্মদ আলী শাহ (রঃ) এর মুরীদ ও খলিফাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তাঁর বাড়ি যশোর জেলার সিদ্ধিপাশায়। তিনি কাজী সাহেব নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন খ্যাতিমান দরবেশ ছিলেন। তিনি একজন আধ্যাত্মিবাদী লোক চিকিৎসক হিসেবেও পরিচিত। বহু দুরারোগ্য ব্যাধিকে তিনি নিরাময় করে দিতে পারতেন। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রত্যাখ্যাত রোগীও রোগ নিরাময়ের জন্য তাঁর কাছে আসত এবং রোগ নিরাময়ে তিনি অসাধারণ সিদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। তিনি লোক চিকিৎসায় বিশেষ অভিজ্ঞ ছিলেন। চিকিৎসার ব্যায় ছিল সামান্য। চিকিৎসার জন্য নিতান্ত তুচ্ছ জিনিস ব্যবহার করত। এই লোক চিকিৎসা ধর্মীয় চেতনায় সমৃদ্ধ থাকত।
হযরত মাওলানা জয়নূল আবেদীন (রঃ)
আনুমানিক ১৯০১ সালে হযরত মাওলানা জয়নুল আবেদীন (রঃ) যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার বাড়ীয়ালী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারত উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাহরান পুর মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা লাভ করেন। দেশে ফিরে আ্সার পর তাঁর সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি উঁচু দরের আলেম ছিলেন। তাঁর কাছে বহু লোক বায়াত হয়েছিল। তিনি ১৯৪৬ সালের শেষের দিকে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। বাড়ীয়ালী গ্রামে মাধবপুকুর স্থানে তাঁর কবর আছে।
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা ইছাহাক মিয়া (রঃ)
১৯১২ সালে আলহাজ্ব হযরত মাওলানা ইছাহাক মিয়া (রঃ) বৃহত্তর যশোর জেলার পিপড়ি পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পদ্মবিলা মাদ্রাসা থেকে দাখেলী, ফুরফুরা শরীফ থেকে আলিম এবং কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা থেকে ফাযিল ও কামিল পাশ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি যশোরের শার্শা থানার বেনাপোলের দরগাপুর গ্রামে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি ফুরফুরা শরীফের পীর কাইউমে জামান মরহুম শাহ সুফী আলহাজ্ব মাওলানা আবু নসর মোহাম্মদ আব্দুল হাই সিদ্দিকী সাহেবের হাতে বয়াত হন, খেলাফত প্রাপ্ত হন এবং তিনি তাকে ‘হাফেজুল হাদীস সানী রুহুল আমীন’ খেতাবে ভূষিত করেন। ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি ইন্তেকাল করেন।
হযরত দেওয়ান ঘোরন শাহ ফকির (রঃ)
হযরত দেওয়ান ঘোরন শাহ ফকির (রঃ) ইসলাম প্রচার করার জন্য এদেশে আগমন করেছিলেন। তিনি কোন দেশ থেকে এসেছিলেন তা জানা যায় না। এদেশে এসে তিনি যশোর জেলার কালিয়া উপজেলার বা ঐসোনা গ্রামে আস্তানা গেড়েছিলেন। তিনি গ্রামের প্রথম মুসলমান ছিলেন। তিনি উক্ত অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিলেন। বর্তমান ঐ গ্রামে তাঁর বংশধরগণ বসবাস করছেন। তাঁর সম্পর্কে বহু অলৌকিক কাহিনী শোনা যায়।
হযরত কুরেলা শাহ দেওয়ান (রঃ)
হযরত কুরেলা শাহ দেওয়ান (রঃ) মোঘল আমলে যশোর জেলার কালিয়া উপজেলায় বর্তমান চাচুড়ী হাটের পরপারে কদমতলা গ্রামে ইসলাম প্রচার করার জন্য আগমণ করেন। সম্ভবত তিনি ইরান কিংবা তুর্কীস্থান থেকে যশোরে এসেছিলেন। কদমতলা গ্রামে হযরত কুরেলা শাহ দেওয়ান (রঃ) এর স্মৃতিময় মসজিদ এখনও বিদ্যমান। মসজিদের পাশেই তাঁর মাযার রয়েছে। তাঁর সম্পর্কে নানা অলৌকিক কাহিনী প্রচলিত আছে।
হাজী হাফেজ আব্দুল করিম (রঃ)
উনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকে হাজী হাফেজ আব্দুল করিম (রঃ) কালিয়া উপজেলার নলীয়া নদীর তীরবর্তী কলাবাড়ীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অতি অল্প বয়সে বাদাখশানের জনৈক তাপস পুরুষের নিকট মুরিদ হন। তিনি কলকাতার মাটিয়া বুরুজ মসজিদ সংলগ্ন হেফজ খানা থেকে হাফেজী পড়েন। তিনি অবিভক্ত ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন। তিনি বহু অমুসলমানকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন স্থানের নিকেরী সম্প্রদায়কে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। তিনি নির্ভীক আধ্যাত্মিক ব্যাক্তি সম্পন্ন একজন সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। তিনি একজন যথার্থ কবি এবং শ্রেষ্ঠ বাগ্মী ছিলেন। ১৯১১ বঙ্গাব্দে তার ‘নুরুল ইসলাম ছাই জুলফিকার হাদী’ নামক পুথি কাব্য প্রকাশিত হয়। ‘গুপ্ত কালাম রত্ন মানিক’ তাঁর অন্য কাব্যগন্থ। তিনি পায়ে হেটে হজ্বব্রত পালন করেন। সম্ভবত তিনি ১৯২৭ সালে মাত্র ৪০ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেন। দক্ষিণ মধ্য বাংলায় তাঁর অগণিত ভক্ত দেখা যায়।
হযরত ওয়ালী মাহমুদ খাঁ (রঃ)
হযরত ওয়ালী মাহমুদ খাঁ (রঃ) পীর খান জাহানের ভ্রাতুষ্পুত্র এবং জাহান্দার খানের পুত্র ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি পিতা পিতৃব্যের ন্যায় আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন সাধক পীর ছিলেন। আনুমানিক ষোলশ শতাব্দীর প্রথম পাদে লোহাগড়া উপজেলার কলাবাড়ীয়া গ্রামে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি নলীয়া নদীর পশ্চিম তীরে ‘কেল্লাবাড়ী’ স্থাপন করেছিলেন বলে পরবর্তীকালে গ্রামের নাম হয় কলাবাড়ীয়া। সেই আমলে তিনি কেল্লাবাড়ীতে একটি মসজিদ ও একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আলহাজ্ব মাওলানা আদম আলী (রঃ)
সপ্তদশ শতাব্দীতে আলহাজ্ব মাওলানা আদম আলী (রঃ) লোহাগড়া উপজেলার কোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইসলামের একনিষ্ঠ্য সেবক ও সাধক পুরুষ ছিলেন। জীবন সায়াথে তিনি কালিয়া উপজেলার চিত্রা নদীর পশ্চিম তীরে ঐতিহাসিক পেড়োলী গ্রামে খানকাহ স্থাপন করেন। তাঁর মৃত্যুর পরে খানকাহর একটি কক্ষে দাফন করা হয়। খানকাটি পীর সাহেবের খানকাহ নামে পরিচিত।
মাওলানা আব্দুল হামিদ সাহেব
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ পাদে আব্দুল হামিদ সাহেব কালিয়া উপজেলার নলীয়া নীর পশ্চিম তীরে কলাবাড়ীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের শাহরানপুর মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি অবিভক্ত ভারতের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং মাওলানা মাহামুদুল হাসানের ভাবানুসারী ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে নানা রকম কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। একবার তিনি পি. সি সরকারের আত্মাকর্ষণে বাঁধা দিলে মিডিয়া মৃত্যুর উপক্রম হয়। জানা যায় যে. যাদু সম্রাট পি. সি সরকার মাওলানার নিকট ক্ষমা চেয়ে ‘আকর্ষণ’ চিরকালের জন্য ত্যাগ করেন। তিনি আধ্যাত্বিক শক্তি সম্পন্ন সাধক পুরুষ ছিলেন। তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি ১৯৭৪ সালে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
হযরত মহিউদ্দীন মুন্সী (রঃ)
পেড়োলীর পীর পরিবারের একান্ত খাদেম ও মুরীদ হযরত মহিউদ্দীন মুন্সী (রঃ) কালিয়া উপজেলার জামরিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নড়াইল জেলার বড়গাতির নীল কুঠির গভীর জঙ্গলে ১২ বৎসর ধ্যানস্থ হয়ে ঐশী ক্ষমতার অধিকারী হন। শেষ জীবনে তিনি নড়াইলের আভ্রায় দরবার শরীফ নির্মাণ করে মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। তিনি সাধক এবং কামিন পীর হিসেবে পরিচিত হয়ে আছেন।
হযরত মাওলানা নুরুদ্দিন শিকদার (রঃ)
আনুমানিক অষ্টাদশ শতাব্দীর আশির দশকে মাওলানা নুরুদ্দিন শিকদার (রঃ) কালিয়া উপজেলার বড়নাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন কামিলে আলিম ও সাধক দরবেশ ছিলেন। ১৯৭৬ সালে তিনি বড়নাল গ্রামে ইন্তেকাল করেন।
হযরত তারা চাঁদ ফকির (রঃ)
আনুমানিক সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম পাদে হযরত তারা চাঁদ ফকির (রঃ) মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের পাথর ঘাটায় জন্মগ্রহণ করেন। হযরত তারা চাঁদ ফকির (রঃ) প্রচুর ভূ-সম্পত্তির মালিক ছিলেন এবং গাতিদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন একজন অলিয়ে কামিল দরবেশ ও প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। পাথর ঘাটার পাশে কুমার ঘাটার হাটখোলার ধারে ফকিরের ভিটায় এই মহান ইসলামের সেবক চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তাঁর কবরটি কাঁচা হলেও ২০০ বছর কবরটি অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।
হযরত মান্দার ফকির (রঃ)
সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম পাদে হযরত মান্দার ফকির (রঃ) কেশবপুর উপজেলার পাজিয়া ইউনিয়নের মান্দারডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন কামিল পীর ছিলেন। পরবর্তীকালে মান্দার ফকিরের নামে গ্রামটির নামকরণ হয়েছে মান্দারডাঙ্গা। এগ্রামেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
সম্পাদনা:
হাবিব ইবনে মোস্তফা
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
শামিউল আমিন শান্ত