
Home ধর্ম-সাধক / Religion-saint > হযরত গরীব শাহ দেওয়ান (রহঃ) / Hazrat Garib Shah Dewan (Rh.)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 89492 বার পড়া হয়েছে
হযরত গরীব শাহ দেওয়ান (রহঃ) / Hazrat Garib Shah Dewan (Rh.)
হযরত গরীব শাহ দেওয়ান (রহঃ)
Hazrat Garib Shah Dewan (Rh.)
Home District: Magura
প্রখ্যাত ধর্মগুরু ও আধ্যাত্নিক সাধক হযরত গরীব শাহ দেওয়ানের আধ্যাত্না, সাধনা, অলৌকিক কাহিনী, সুগভীর পান্ডিত্বের কথা যশোরবাসী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। জানা যায় তাঁর পূর্ব পুরুষ বাগদাদের অধিবাসী। তাঁর পিতামহ কিতাব উদ্দীন বাগেরহাট, যশোর হয়ে মাগুরায় বসতি স্থাপন করেন। মাগুরা নৌহাটা গ্রামে গরীব শাহ দেওয়ানের জন্ম।
এলাকায় এখনো জনশ্রুতি আছে, একবার ব্রিটিশ সরকারের নীলকুঠি ইনচার্জ টমাস টুইডি এলাকার হাজরাপুর দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় হানু নদীর তীরে হজরত গরীব শাহকে দেখতে পেয়ে ভিক্ষুক ভেবে একটি মুদ্রা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মুদ্রাটি হাতে নিয়ে নদীতে ফেলে দেন। টমাস টুইডি এতে রেগে তাৎক্ষনিকভাবে মুদ্রাটি ফেরৎ চাইলে হজরত গরিব শাহ তাঁকে হাত পাততে বলেন। কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায়, অসংখ্য মুদ্রায় তাঁর হাত ভরে গেছে। টুইডি তাঁর ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান এবং তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
ছোটবেলায় তিনি একই গ্রামের গগন মুন্সির বাড়িতে থেকে লেখাপড়া ও রাখালের কাজ করতেন। এলাকার অনেকেই গরীব শাহকে নিয়ে মালিকের কাছে নানা কথা বলত। একদিন গভীর রাতে গগন মুন্সী তাঁকে পাহারা দেয়ার জন্য ওৎ পেতে রইল। রাত যখন গভীর হয় তখন গগন মুন্সি দেখতে পেলেন বালক গরীব শাহ বিছানা ছেড়ে হানু নদীর দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। তিনিও তাঁর পিছু নিলেন। তিনি দেখলেন, গরীব শাহ নদীতে ওজু করে খড়ম পায়ে পানির ওপর দিয়ে হেঁটে নদীর ওপারে গেলেন। পরদিন তিনি তাঁকে বললেন, আজ থেকে আমি তোমার মনিব নই। এ বাড়িতে তোমার কোন কাজ করতে হবে না। তুমি কেবল বসে বসে খাবে আর ধর্ম পালন করবে।
একবার গরীব শাহের বাড়িতে মেহমান আসবে। মা তাঁকে বললেন, নদী থেকে কিছু মাছ ধরার জন্য। গরীব শাহ তখন ঝাড় থেকে বাঁশ কেটে মাছ ধরার দোয়ার তৈরি করে নদীতে না বসিয়ে ডাঙায় বসিয়ে রাখলেন। এ দৃশ্য দেখে তাঁর মা এবং এলাকাবাসী তাঁকে বললেন, মানুষ পানিতে মাছ পায় না, আর তুমি ডাঙায় মাছ পাবে কী করে? এ কথার উত্তরে গরীব শাহ নাকি বলেছিলেন, নদীতে মাছ পাওয়া না গেলেও এ ডাঙায় ঠিকই মাছ পাওয়া যাবে। পরের দিন সকালে দেখা গেল যারা নদীতে দোয়ার পেতে রেখেছিল তাদের একটি দোয়ারেও মাছ নেই অথচ গরিব শাহ দেওয়ানের দোয়ারে অনেক মাছ আটকে রয়েছে। এছাড়া গাছের উপরে দোয়ার পেতে মাছ ধরা, নদীর ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, কলেরা থামানো, হিংস্র বন্যপশুকে পোষ মানানোসহ নানা অলৌকিক ক্ষমতার কথা এখনো লোকমুখে শোনা যায়।
এলাকার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় আরো একটি আলৌকিক ঘটনার কথা। একবার ফরিদপুরের বেলগাছি এলাকার জমিদার ফয়েজ উদ্দিন একটি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য গরিব শাহ দেওয়ানের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। এ সময় তিনি হনু নদীতে গোসল করেছিলেন। ফয়েজ উদ্দিন তখন গরিব শাহকে কদমবুছি করার চেষ্টা করল। আলৌকিক ক্ষমতা বলে তিনি সব বুঝতে পারেন এবং সাপ, কুমির ও বাঘের বেশ ধারণ করে তাঁকে এড়িয়ে যান। অসহায় ফয়েজ উদ্দিন নাছোড়বান্দা। তিনি কোনো অবস্থায় এলাকা ত্যাগ না করে অনুগ্রহ পাওয়ার আশায় রইলেন। শেষ পর্যন্ত গরীব শাহের দোয়ায় সে বিপদমুক্ত হয়।
এরকম হাজারো কাহিনী এলাকার মানুষের মুখে মুখে রয়েছে।
নোহাটা গ্রামে মাজারের পাশে হজরত গরীব শাহ দেওয়ান নিজ হাতে একটি ডালিম গাছ লাগিয়েছিলেন। তিন বছর আগে গাছটি মরে গেছে। এছাড়া গরীব শাহের হাতে লাগানো কয়েকটি তালগাছ ছিল। সেগুলো গত বছর কেটে স্থানীয় মসজিদের কাজে লাগানো হয়েছে। এছাড়া তাঁর ব্যবহৃত খড়ম, লাঠি, জায়নামাজ এবং তিনি যে নৌকায় চড়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন সেটি আজো রয়েছে। আশ্চার্যের বিষয় হলো যে নৌকায় তিনি ভ্রমণ করতেন সেটি মাত্র দেড় হাত লম্বা। প্রতি বছর ২ মাঘ বার্ষিক ওরসের সময় কয়েক হাজার ভক্ত ও মুরিদের সামনে এগুলো প্রদর্শন করা হয়।
গরীব শাহকে মাত্র ছয়মাসেই বিয়ে দিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু বিয়ের পরপরই তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। এর পর তিনি আর কখনো সংসারের মায়ায় বন্দি হননি। ধর্ম প্রচারের মাধ্যমেই বাকি জীবন কাটিয়েছেন।
দেহ ত্যাগ:
জনশ্রুতি আছে, হজরত গরীব শাহ দেওয়ান একই সাথে সাত জায়গায় দেহত্যাগ করেন। যে কারণে দেশের সাত স্থানে তাঁর মাজার রয়েছে। এর মধ্যে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নৌহাটা গ্রামে, যশোরের বকুলতলায়, ফরিদপুর, বারইঝুঁড়ি এবং বাকি মাজারগুলোর নাম তেমন জানা যায়নি।
মাগুরার নৌহাটা গ্রামে অবস্থিত তাঁর মাজারটি বর্তমানে অযত্ন আর অবহেলায় কৃত্তিমান এ পুরুষটির স্মৃতি হারাতে বসেছে।
তথ্য সংগ্রহ:
হাবিব ইবনে মোস্তফা
সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
হাবিব ইবনে মোস্তফা
শামিউল আমিন শান্ত
সর্বশেষ আপডেট:
২০.০৫.১১