
Home প্রকৃতি ও পরিবেশ (Nature and Environment) > বৃহত্তর যশোরের আবহাওয়া-জলবায়ু
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100562 বার পড়া হয়েছে
বৃহত্তর যশোরের আবহাওয়া-জলবায়ু
বাংলাদেশ মৌসূমী জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত হওয়ার কারণে বৃহত্তর যশোর জেলার আবহাওয়াতে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এ জেলার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৬০” এবং পশ্চিমাংশে ৬৯”। যশোর এবং মাগুরা আবহাওয়া কেন্দ্রদ্বয়ে ১৯০২-৬১ সময়কালে বার্ষিক গড়বৃষ্টিপাত ছিল যথাক্রমে ৬৪.১” ও ৬৭.৪৯”। বৃহত্তর যেশোর জেলার জলবায়ু দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতোই। জেলার উষ্ণতম মাস এপ্রিল। এ সময় তাপমাত্রা ৯০ থেকে ১০৯ ফাঃ পর্যন্ত হয়ে থকে। শীতকালে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৭০ ফাঃ এর মধ্যে থাকে। এ সময় তাপমাত্রা ৩৮ ফাঃ এ নেমে আসে। ডিসেম্বর হতে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত এ জেলার শীতকাল। শীতকালে জেলার উপর দিয়ে উত্তরপূর্ব শীতল মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। এ সময় রত্রিতে প্রচুর শিশির পড়ে। মার্চে বায়ুমন্ডলের তাপ বাড়তে থাকলে মাঝে মধ্যে ভোরে ঘন কুয়াশা পড়ে। ফেব্রুয়ারী মাস থেকে শীতের প্রকোপ কমতে থাকে এবং তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এপ্রিল ও মে মাসে রোদের প্রখরতা বৃদ্ধি পায়। এ সময় বাতাস দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকৈ প্রবাহিত হয়। এ সময় বজ্রবৃষ্টিসহকারে বৈশাখীর ঝড় দ্বারা উত্তাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। এই ঝড়ে বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার মত এ জেলাও প্রতিবছর বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ সময় প্রচুর বৃষ্টিপাতও হয়। জুন মাসের প্রথমদিকে অত্যাধিক গরম অনুভূত হয়। নিয়ম অনুযায়ী জুনের মাঝামঝিতে মৌসুমী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। জুন, জুলাই ও আগষ্ট মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং বৃষ্টিবহুল সময়কালকে বর্ষা মৌসুম বলে। এ সময় আবহওয়া মোটামুটি আরামদায়ক থাকে। যশোর অঞ্চলে বর্ষাকলের মাসিক গড় বৃষ্টিপাত ১০” থেকে ১৫”। সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টি কমে যায়। এ সময় জেলায় তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং অস্বস্তিকর গরম অনুভূত হয়। এই অবস্থা অক্টোবর পর্যন্ত চলতে থাকে। নভেম্বর মাসে শীতকাল শুরু হয়। সাধারণত নভেম্বর-এ সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। তবুও নভেম্বর থেকে জুনুয়ারী মাস পর্যন্ত বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। নভেম্বর (৭২.৪” ফাঃ) থেকে জানুয়ারী (৬৭.৫” ফাঃ) পর্যন্ত তাপমাত্রা কমতে থাকে। কিন্তু বাতাসের আদ্রতা বাড়তে থাকে এবং মাঝে মধ্যে সকালে ভূ-পৃষ্টের উপরিভাগ কুয়াশাচ্ছন্ন হয় যা সূর্য উঠার সংগে বিলীন হয়ে যায়। শীতকালীন (নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারী) মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১.২৩” গড়।
যশোর জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় এ জেলায় নানা প্রজাতির উদ্ভিদ দেখা যায়। বৃহৎ আকৃতির বৃক্ষ ফলের গাছ ভেষজ উদ্ভিদ গুল্ম তৃণ জাতীয় গাছ এবং নানা প্রকৃতির জ্বলজ উদ্ভিদ এ জেলায় প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। যশোর জেলায় প্রচুর শাকসবজি উৎপন্ন হয়। এ জেলার শাকসবজি পার্শ্ববর্তী জেলার এমনি ঢাকা শহরেপর্যন্ত প্রেরিত হয়। গত দশ বছরের মধ্যে এ জেলায় বেশ কিছু চারাগাছ তৈরির উদ্যান গড়ে উঠেছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চারাগাছ তৈরী লাভজনক হওয়ায় এ জেলার বড় বড় রাস্তার ধারে সরকারী অফিস ও বাস ভবনের পার্শ্বে সৌন্দর্যবর্দ্ধনের জন্য বিদেশী গাছ রোপন করা হয়ে থাকে। প্রাচীন ও বিখ্যাত যশোর রোডের ধারে বিশাল আকৃতির গাছপালা ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসাবে চিহ্নিত। সব দিক থেকেই বিচার করলে যশোর জেলা গাছপালা সমৃদ্ধ। উদ্ভিদ গোষ্টী অনুসারে এ জেলার উদ্ভিদকে নিম্নলিখিত শ্যেণীতে বিভক্ত করা যায়।
সামান্য কিছু ব্যতিক্রম বাদে যশোর জেলার উদ্ভিদ দেশের অন্যান্য এলাকার অনুরূপ। তবে জেলার উত্তরাংশে এবং দক্ষিণাংশের ভূ-প্রাকৃতিক কিছু পার্থক্য থাকায় জেলার উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কিছূটা ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। জেলার দক্ষিণাংশে প্রচুর নিম্ন জলাভুমি থাকায় এসব এলাকায় নানা জাতের ভাসমান জলজ উদ্ভিদ দেখা যায়। ক্ষুদ্র নদী কিনারায় নানা রকম ঘাস ও খাগড়া জন্মায়। এ জেলায় যেসব বৃক্ষ জাতীয় গাছ জন্মায় তাদের মধ্যে Pongamia, Glabra, Baringlonia, acutrngula এবং Thespia Popatnen প্রধান। এছাড়া এ জেলার প্রায় সবখানে রয়েছে নানা ধরণের কাঠের গাছ। জেলার রাস্তার ধারে এবং জলাভূমিগুলি ছোট ঘাস ও নানা জাতীয় আগাছায় পরিপূর্ণ। এসব আগাছা দ্রুত বর্ধণশীল এবং নানাভাবে মানুষের কাজে লাগে। আগাছার মধ্যে কোন কোনটি থেকে মূল্যবান ইউনানী ও ভেষজ ঔষধ তৈরী হয়। এ জেলায় কিছু পরিমাণ সেগুন ও মেহগনী কাঠ পাওয়া যায়। যশোর জেধলার উৎপাদিত সেগুন কাঠ যশোর টিক নামে পরিচিত। সেগুন ও মেহগনী কাঠ সাধারণত: বড় রাস্তার ধারে ভেড়ীবাঁধ এলাকায় লাগান হয়ে থাকে। আম, জাম, কাঁঠাল, দেবদারু, বাবলা, তেঁতুল, কড়ই প্রভৃতি গাছ সাধারণত গ্রামাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে দেখা যায়। যশোর জেলায় প্রচুর তালগাছ দেখা যায়। সারিবদ্ধভাবে এ জেলায় তালগাছ রোপিত হতে দেখা যায়। তালগাছের পাতা এ জেলায় গুরুত্বপূর্ণ জালানী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া তালাগাছের কাঠ গ্রামাঞ্চলের ঘরের উন্নতমানের আড়া বা বরগা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অর্থনৈতিক দিক থেকে যশোর জেলায় খেজুর গাছ বিরাট অবদান রেখে আসছে। বাংলাদেশের খেজুর গুড়ের সিংহভাগ যশোর জেলাতয় উৎপন্ন হয়। এ জেলায় খেজুর গুড়ও উন্নতমানের। জেলার গ্রামাঞ্চলের মাঠে ময়দানে প্রচুর খেজুরগাছ দেখা যায়। অনেকে মনে করেন এ জেলায় মাটির বিশেষ কোন গুণ থাকায় খেজুর গাছের সংখ্যা বেশি। তবে জেলার উত্তর ও পশ্চিমাংশে খেজুর গাছের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। জেলার প্রধান সড়ক বরাবর অসংখ্য সেগুন, মেহগনী, বট ও তুঁত গাছের সারি দেখা যায়।
সূত্র: যশোর গেজেটিয়ার