
Home প্রকৃতি ও পরিবেশ (Nature and Environment) > পশু-পাখি-সাপ-মাছ
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100212 বার পড়া হয়েছে
পশু-পাখি-সাপ-মাছ
জীব-জন্তুঃ
১৯১২ সালে L.S.S.O Malley কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটায়ার হতে জানা যায় একসময়ে এ জেলায় নানা জাতের বন্যপশু দেখা যেত। উক্ত গেজেটীয়ারে লিখিত আছে যে ঐ সময় থেকে পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে ঝিনাইদা সাবডিভিশনে বুনো মহিষ শিকার করা হত। সে মসয় এ জেলায় বাঘ ও নেকড়ে বাঘ দেখা যেত। এ জেলার কোন কোন স্থানে চিতাবাঘও দেখা যেত। তৎকালে প্রতি বৎসরই জেলায় অনেক মানুষ ও গবাদি পশু বন্যপশুর কবলে পড়ে নিহত হত। জনবসতি সম্প্রসারণ এবং বন জঙ্গল কাটার ফলে জেলা থেকে অধিকাংশ বন্যপ্রাণি বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্তমানে এ জেলা বন্য শুকর, শিয়াল ও খেঁকশিয়াল, বনবিড়াল, খরগোস, সজারু, খাটাশ, উদ্ববিড়াল, ভোঁদড় প্রভৃতি দেখা যায়। অতীতে মাগুরা ও নড়াইল জেলায় ভোঁদড়কে মাছ শিকারের কাজে লাগানোর সংবাদ জানা যায়।
পাখিঃ
যশোর জেলায় অসংখ্য নদী-নালা ও জলাভূমি থাকায় এ জেলায় নানা প্রকার জলচর পাখি দেখা যায়। এসব জলজ পাখিদের মধ্যে সাইবেরিয়া থেকে আসা নানা জাতের হাঁস ও বেলেহাঁস রয়েছে। এছাড়া বিল এলাকায় প্রচুর বক, ডাহুক, পানকৌড়ি, পাতিহাঁস, কাঁদাখোচা, শামুডাংগা দেখা যায়। সেই সংগে জেলার সর্বত্র দোয়েল, শালিক, ঘুঘু, চড়াই, চিল, বাজ, পেচা নীলকন্ঠ, কোকিল, মাছরাঙ্গা, বউকথাকও, হলদে পাখি, ফিঙ্গে, বুলবুল, টিয়ে, বাদুড়, গাংচিল, বুলবুলি প্রভৃতি পাখি দেখা যায়। জেলার দক্ষিণাঞ্চলে শীতকালে নানা জতের জলজ পাখি সাইবেরিয়া থেকে চলে আসে এবং সেগুলি আবার গ্রীষ্মকালের আগেই প্রত্যাবর্তন করে।
সরীসৃপঃ
যশোর জেলার সর্বত্র নানা জাতের সরীসৃপ ও উভচর প্রাণী দেখা যায়। এদের মধ্যে আছে নানা জাতের সাপ যেমন গোখরা, বোড়া, পালক, দুমুখা, ঢোড়া, দাঁড়াশ, কেউটে, চন্দ্রবোড়া, সংখনী, লাউডগা ইত্যাদি। জেলার প্রায় সর্বত্র জলাশয়ের ধারে গুইসাপ দেখা যায়। কোন জলাশয়ে কাছিম দেখা যায়। জেলার দক্ষিণাঞ্চলের কোন কোন নদীতে মেছ কুমীর দেখা যায়। এসব ছাড়াও জেলার সর্বত্র নানা প্রকার ব্যাঙ, গিরগিটি, টিকটিকি, ইদুর, চিকা এবং নানা ধরণের সরীসৃপ দেখা যায়। এক সময় এ জেলার নদীতে প্রচুর কুমীর দেখা যেত।
মাছঃ
জেলার নদ-নদী, খাল-বিল ও পুকুরে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছ প্রাকৃতিক উপায়ে এবং কৃত্রিম উপায়ে চাষ করা হয়ে থাকে। নদনদী, খালবিল, হাওড় প্রভৃতি স্থানে প্রাকৃতিক উপায়ে মাছ উৎপাদন হয়। জেলার দক্ষিণাঞ্চল এ ধরণের জলাশয় বেশি বলে এখানে প্রাকৃতিক উপায়ে মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ বেশি। জেলার উত্তরে পুকুরের সংখ্যা বেশি। এসব পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ, সিঙ্গে, মাগুর, আইন, পুটি, গলদা চিংড়ি প্রভৃতি মাছ চাষ হয়। ইশিলমাছ পাওয়া যায় ইছামতি, মধুমতি, চিত্রা ও নবগঙ্গ প্রভৃতি নদীতে। কৈ, মাগুর, সিং, শোল, বোয়াল, গজাল প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায় বিল ও পুকুর এলাকায়। জেলার মধ্যঞ্চলে নদী-নালার পানির অভাবে মাছের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। এসব এলাকার মাছের চহিদা ফরিদপুর ও খুলনা এলাকা থেকে পূরণ করা হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মাছের চহিদা ব্যাপক হওয়ায় এ জেলায় মাছ উৎপাদনের চেষ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জেলায় বেসরকারী উদ্যেগে বহু মৎস্য খামার ও মৎস্য পোনা উৎপাদনকারী খামার গড়ে উঠেছে। বর্ষাকালে এ জোলায় যখন নদী-নালায় অধিক পানি থাকে তখন অনেক কম মৎস্য শিকার করা হয়। বর্ষাকালে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এ জেলায় সর্বাপেক্ষা বেশি মৎস্য শিকার করা হয়ে থাকে এ সময় খাল-বিল ঝিল ও নদীতে পানি কম থাকে, ফলে জাল পেতে মাছ ধরতে সুবিধা হয়। মাগুরা ও নড়াইলের বিল ও ঝিলে এ সময় প্রচুর মাছ ধরা হয়। বর্তমানে এ জেলায় পুকুরে প্রচুর মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এসব মাছ সারাবছর ধরা ও বাজারজাত করা হয়। মৎস্যচাষ লাভজনক হওয়ায় এ ব্যবসায় প্রচুর লোক অংশগ্রহণ করছে। ১৯১২ সালে প্রকাশিত গেজেটীয়ার হতে জানা যায় তৎকালীন সময় জেলার নদীগুলিতে প্রচুর সংখ্যায় শুশুক দেখা যেত। গড়াই ও মধুমতি নদীতে যেসব কুমীর দেখা যেত সেগুলি মাঝেমধ্যে নবগঙ্গা নদীতে বিচরণ করতে দেখা যেত।
সূত্র: যশোর গেজেটিয়ার