
Home প্রকৃতি ও পরিবেশ (Nature and Environment) > ঘূর্ণীঝড়
এই পৃষ্ঠাটি মোট 99995 বার পড়া হয়েছে
ঘূর্ণীঝড়
ঘূর্ণীঝড়-১৯০৯:
১৯০৯ সালের ১৭ই অক্টোবর এ জেলার যশোর সদও ও ঝিনাইদহের উপর দিয়ে একটি প্রচন্ড ঘূর্ণীঝড় বয়ে যায়। ঘূর্ণীঝড়ের পর ঐ দুই স্থানে কয়েক ঘন্টায় প্রায় ১১’’ বৃষ্টিপাত হয়। এই ঝড় ও বৃষ্টিতে ঐ দুই এলাকার ৪,৪৬,৯০৬টি কাঁচা বাড়ী বিধ্বস্ত হয়, ১,১৫৭টি দেশী নৌকা ডুবে যায়। প্রকৃতপক্ষে জেলার সব কাঁচা বাড়ী ধ্বংস হয়ে যায়। বড় বড় গাছপালা উপড়ে যায়। রাস্তার উপর উপড়ে পড়া গাছপালার জন্য যানবাহন চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হয়। উচ্চহারেও মজুরী দেওয়ার পরও শ্রমিকের অভাবে রাস্তাঘাট পরিস্কার করার মত শ্রমিক পেতে অসুবিধা হয়। কারণ সব মানুষই তাদের নিজ ঘরবাড়ী মেরামতে ব্যস্ত থাকে। ঐ সময় শ্রমিকের এতই অভাব হয় যে জেল হাজত হতে শ্রমিক এনে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা গাছপালা পরিস্কার করতে হয়। এই ঝড়ে ৬,৬২,৩৩৬টি ফলের গাছ, ৮,২৭৪টি গবাদী পশু মারা যায়। মানষ মারা যায় ঘরবাড়ী চাপা পড়ে, ১১ জন মারা যায় গাছপালা চাপা পড়ে এবং ১৬ জন মারা যায় পানিতে ডুবে।
ঘূর্ণীঝড়-১৯৬১:
১৯৬১ সালে যশোর জেলার মাগুরা মহকুমায় ইছকান্দ ইউনিয়নের উপর দিয়ে একটি প্রলয়ংকারী টর্ণেডো বয়ে যায়। এই ঝড়ে ৯০টি পরিবার সম্পূর্ণরূপে গৃহহীন হয়ে পড়ে। এই ঝড়ে ৬০টি টিনের বাড়ী এবং ১০০টিরও বেশি কাঁচা বাড়ী উড়ে যায়। এই ঝড়ে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্থ হয় সানডাঙ্গা গ্রাম।
ঘূর্ণীঝড়-১৯৬৭:
১৯৬৭ সালের মে মাসের ৪ তারিখে সন্ধ্যায় এ জেলার নড়াইলের উপর দিয়ে একটি প্রলয়ংকরী ঘূর্ণীঝড় বয়ে যায়। এই ঘূর্ণীঝড়ে নড়াইলের ৪০% কাঁচা বাড়ী ধ্বংস হয়ে যায় এবং ৪০০ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাড়াইল থানার কমলাপুর ও ধোনদাগ্রাম, লোহাগড়া থানার নলছি, ব্রহ্মনডাঙ্গা, সাঁতরাহাজারী ও দেবী গ্রাম এবং খালিয়া থানার কলাবাড়ী ও রামপুরা গ্রাম।
ঘূর্ণীঝড়-১৯৭০:
১৯৭০ সালে বাংলাদেশের উপকূল এলাকা দিয়ে একটি প্রলয়ংকরী ঘূর্ণীঝড় বয়ে যায়। এই ঝড়ে প্রায় বাংলাদেশের ১০ লক্ষ লোক মারা যায়। সেই তুলনায় এই ঘূর্ণীঝড়ে যশোর জেলার ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর হার কম ছিল। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণীঝড় সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঝিকরগাছা ইউনিয়নের কবিলপুর গ্রাম। শার্শা থানার ডিহি ইউনিয়নের পাকশিয়া, তেনগ্রালি এবং শালকোনা গ্রাম। ঝড়ের দিন পাকশিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের পাকাঘরে এলাকার বহুলোক আশ্রয় নেয়। হঠাৎ করে ঝড়ের তোড়ে স্কুলের একটি দেয়াল ভেঙ্গে পড়লে ১৮ জন গুরুতররূপে আহত হয়। ঐদিন ঝিকরগাছা থানার কবিলপুর গ্রামে বজ্রপাতে ২ জন মারা যায়। ঐ দিনেই ৩০ মিনিটের ঝড়ে অসংখ্য গবাদি পশু মারা যায়, অসংখ্য কাঁচা ও টিনের বাড়ী বিধ্বস্ত হয়। সেই সংগে প্রচুর গাছ ও শস্যাদি নষ্ট হয়।
ঘূর্ণীঝড়-১৯৭০-১৯৯৫:
আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুসারে ১৯৭০ সন থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে যশোর জেলায় ১৫ টি ছোটবড় টর্ণেডো/ঘূর্ণীঝড় সংঘটিত হয়। উক্ত ঘূর্ণীঝড়গুলির মধ্যে শুধুমাত্র ১৯৮৮ সালের ২৯শে নভেম্বর তারিখের ঘূর্ণীঝড়টি যশোর জেলায় ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে। উক্ত ঘূর্ণীঝড় ২৯শে নভেম্বর সারাদিন ও সারারাত্রি চলতে থাকে। যশোর আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুসারে ঐদিন এ জেলায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। এই ঝড়ে শুধুমাত্র যশোর সদরেই ৬৪৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলা ত্রাণ ও পূণর্বসান অফিসারের দেওয়া তথ্যানুসারে এ ঝড়ে যশোর সদরে ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৫,৮৩,৬১০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমাণ ২২,৪৬০ একর। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ীর সংখ্যা ৭৮,০৭৩টি, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৪৪টি, মৃত মানুষের সংখ্যা ৪৩ জন এবং মৃত পশুর সংখ্যা ছিল ৩০৯টি।
তথ্যসূত্র: যশোর গেজেটিয়ার