
Home প্রকৃতি ও পরিবেশ (Nature and Environment) > দূর্ভিক্ষ
এই পৃষ্ঠাটি মোট 100051 বার পড়া হয়েছে
দূর্ভিক্ষ
দূর্ভিক্ষঃ
এ পর্যন্ত যশোর জেলায় অনাবৃষ্টি ও বন্যার ফলে বেশ কয়েকবার দূর্ভিক্ষ হয়। তবে এ জেলার প্রচুর নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওড় থাকার সাধারণ খরার কারণে দূর্ভিক্ষ কম দেখা গেছে। যশোর জেলায় ইতিপূর্বে যেসব দুর্ভিক্ষ হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে প্রদান করা হলঃ
দূর্ভিক্ষ ১৭৮৭-১৮০১:
১৭৮৭ সাল হইতে ১৮০১ সাল পর্যন্ত যশোর জেলায় বেশ কয়েকবার বন্যা হয়। এ বন্যা জেলার প্রচুর শস্যহানি ঘটে এবং পরিণামে খাদ্যাভাব দেখা যায়। ১৭৪৭ সালের মাসের বন্যা এবং অক্টোবর মাসের ঘুর্ণীঝড়ের ফলে জেলায় ধান, সরিষা, ডাল প্রভৃতি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঐ সময় মানুষ খাদ্যাভাবে কষ্ট পায়। খাদ্যাভাবে গ্রামের মানুষ হালের বলদ ও চাষাবাদের অন্যান্য যন্ত্রপাতি বিত্রয় করতে বাধ্য হয়। এই দুর্ভিক্ষে তৎকালীন এ জেলার জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ হেঙ্গেল সাধারণ কৃষকদের সাহায্য হিসাবে ১৫,০০০ টাকা এবং বাঁধ নির্মাণের জন্য ৬,০০০ টাকা প্রদান করেন। এছাড়া তিনি ইউসুফপুরের জমিদারের প্রজাদের সাহায্য করার জন্য পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করে ছিলেন। এত অভাব থাকা সত্ত্বেও ঐ বছর সরকার প্রতি বছরের মতই কর আদায় করেছিলেন।
১৭৯১ সালে জেলা প্রচন্ড খরার কবলে পড়ে। ঐ সময় বর্ষা মৌসুমে একটানা বৃষ্টিপাত না হওয়ার দরুন জেলায় ফসলাদি নষ্ট হয়ে যায় এবং খারার কবলে পড়ে। ১৭৮৭ সালে সরকারের ২য় বার কর আদায়ের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৭৯১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর মধ্যে খাদ্য দ্রব্যের প্রচন্ড অভাব দেখা যায় এবং মূল্য দুই তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। গ্রামে-গঞ্জে পানির অভাব দেখা যায়। যেসব পুকুরে পানি ছিল সেগুলি সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
খাদ্যশস্য সংগ্রহের জন্য সরকার ১৭৯৪ সালে যশোরে দুটি, মাগুরার বাবুখালিতে একটি এবং ভৈরব নদীর তীরে ফুলতলার নিকট শোরগনিতে একটি করে খাদ্য সংগ্রহ কেন্দ্র খোলে। ফসলের উৎপাদন কম হওয়ায় এই ফসল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়। যে বাড়ীতে সর্বপ্রথম শস্য ক্রয় করা আরম্ভ হয় সেটি ঐ সময়ে বজ্রপাতে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। সরকার যেসব স্থানীয় লোকজনদের কাছে শস্য ক্রয়ের দায়িত্ব প্রদান করে তাদের অসততার কারণে এ চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ঐ জন্য সরকারকে প্রচুর টাকা লোকসান দিতে হয়। এ সমস্ত কারণে খাদ্যশস্য সংগ্রহের যাবতীয় ব্যবস্থা ১৮০১ সালে বন্ধ হয়ে যায়।
দূর্ভিক্ষ-১৮৬৬ ও ১৮৯৭:
১৮৬৬ সালে যশোর জেলায় হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যায়। ঐ সময়ে চালের দাম বেড়ে টাকার দশ সের হয়ে যায়। অথচ ১৮৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় এ জেলায় খাদ্যাভাব দেখা দেয়নি। এমনকি এ জেলা হতে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলায় খাদ্য সরবরাহ করা হয়।
দূর্ভিক্ষ-১৮৯৭:
১৮৯৫-৯৬ সালে এ জেলায় প্রচন্ড খরা দেখা দেয়। এই খরা জেলায় প্রচুর শস্যহানী ঘটে। ১৮৯৫ সালের মে মাসে জেলায় অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হলে নড়াইল মহকুমার বোরো ধানা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায় এবং জেলার নিচু জমির সর্বত্রই আমন চাষে অসুবিধা দেখা দেয়। ঐ বছর জুলাই ও আগস্টের অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত শীতকালীন ফসল ফৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়। আবার নভেম্বর মাসের বৃষ্টির অভাবে আমন ধানের উৎপাদন কম হয়। পরবর্তী বছরগুলিতে ভাল ফসল হওয়ায় ঐ সময় তেমন খাদ্যাভাব দেখা দেয়নি। তবে ১৮৯৪, ৯৫ ও ৯৬ সালে অনিয়মিত এবং অপরিমিত বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার আমন ও আউশ ধান উৎপাদন অনেক কম হয়। এমন কি কোন কোন স্থানে একেবারেই বিনষ্ট হয়ে যায়। জেলায় খাদ্যশস্যের অভাব দেখা দেয়। আউশ ও আমন ধানের দাম প্রচন্ড হারে বেড়ে যায়। কোন কোন সময় ৮ আনার আউশ ধান ১৬ আনায় এবং ৮১/২ আনার আমন ধান ১৬ আনায় বিক্রয় হতে দেখা যায়। ধান ছাড়া রবিশস্যের দারুন অভাব দেখা যায়। এই অভাবের সময় গ্রামের কৃষকরা কমবেশি সবাই কষ্ট ভোগ করে। প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে দেশের অন্যত্র হতে খাদ্যদ্রব্য আমদানী করতে হয়। জেলা গুড় উৎপাদনকারী চাষী, আখচাষী এবং পাট চাষীরা তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতে হিমশিম খেয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে ঐ সময় ১,০৮২ বর্গ মাইল অধ্যুষিত ৮,২৯,০০০ জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে কিন্তু কর্তৃপক্ষ মাত্র ৩৬ বর্গমাইল এলাকার ৩০,০০০ জনসংখ্যার মধ্যে ত্রাণ সাহায্য বিতরণের ব্যবস্থা করে। এই সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল মহম্মদপুর থানা, কেশবপুর থানা, বাগরপাড়া, মাগুরা, শালিকা। সেই সংগে নদী তীরবর্তী উঁচু এলাকা এবং জেলার নিচু জলাভূমি এলাকা। এসব এলাকা সাধারণ জেলার প্রধান ধান ও গুড় উৎপাদনকারী এলাকা। ধান ও গুড় উৎপাদনের উপর নির্ভর করে তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। দুর্ভাগ্যক্রমে কায়েক বছর পর পর আউশ ও আমন ধানের উৎপাদন বিনষ্ট হওয়ায় তাদের নিদারুন কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়। এছাড়া সরকার ঐ সময় কৃষকদের কৃষিঋণ হিসাবে জনসাধারণকে ৬৪,৩৫১ টাকা অগ্রিম প্রদান করেন।
সুত্র: যশোর গেজেটিয়ার