
Home ভাষা ও সংস্কৃতি (Language and Culture) > যশোরে ঈদ ও পূজায় কাঠের হেলিকপ্টার, মাটিরঘোড়ার জগত সরগরম
এই পৃষ্ঠাটি মোট 89654 বার পড়া হয়েছে
যশোরে ঈদ ও পূজায় কাঠের হেলিকপ্টার, মাটিরঘোড়ার জগত সরগরম
ঈদ আর শারদীয় দুর্গোত্সবকে ঘিরে সম্প্রীতির অনবদ্য মেলবন্ধন রচিত হয় যশোরের শহর-গ্রামে। দুই উত্সবকে ঘিরে ধুম পড়ে আনন্দ আয়োজনের। শহর থেকে গ্রাম— সবখানেই শুরু হয় উত্সবের সাজ সাজ রব। এই দুই উত্সবকে ঘিরে হস্তশিল্পীদের ঘরে ঘরে সাড়া পড়ে যায় ছোটদের খেলনা আর হাঁড়ি-পাতিল তৈরির।
খুব সকালে সিরাজসিঙ্গার মিস্ত্রিপাড়া গ্রামে গিয়ে শোন যায় মেশিনের শোঁ শোঁ আওয়াজ। নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে পাখির কলতান ছাপিয়ে যায় মেশিনের অবিরাম শব্দ। সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নে এই গ্রামের ঘরে ঘরে চলে হরেকরকম খেলনা বানানোর কাজ। বংশপরম্পরায় তারা কাঠের কাজ করে আসছেন। তাদের বাবা-ঠাকুরদা বানাতেন লাঙল আর গরুরগাড়ি। সেসব এখন ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। বেঁচে থা

অশীতিপর বৃদ্ধ ধীরেন্দ নাথ ধরের পাশের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল খেলনা বানানোর যেন প্রতিযোগিতা চলছে। নাতির সাথে ঠাকুমা, শাশুড়ীর সাথে ছেলেবউয়ের কিংবা ছেলের সাথে তার মা বা স্ত্রীর। সবাই ব্যস্ত যার যার কাজে। উমা রানী ধরের বয়স হয়েছে। বেশিক্ষণ কাজ করতে কষ্ট হয়। তিনি কাঠের হেলিকপ্টারে রঙ লাগাতে লাগাতে ‘আর পারি না কাজ করতে’ বলতে না বলতেই মুখের কথা কেড়ে ছেলে নির্মল কুমার ধর বললেন, ‘কই কম তো করতে দেখি না!’ এভাবেই একের পর এক এই পরিবারের সবার হাতে তৈরি হয়ে চলেছে ঘুরঘুরে গাড়ি, ট্রাক, বাস, হেলিকপ্টার, একতলা ও দোতলা বাস, ঢেঁকি, পালকির মতো কাঠের নানা খেলনাসামগ্রী। এসব সামগ্রী তৈরির জন্য কাঁঠাল, শিশু বা শিরিষ কাঠের সাথে প্রয়োজন হয় বাঁশের। প্রয়োজন হয় রঙ-তুলি, পেরেক, তারের মতো উপকরণও। কারিগররা জানান, পাইকাররা এসে বাড়ি থেকে এগুলো কিনে নিয়ে যান। দাম ৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে। আর তারা নিজেরাও যশোর শহর, ঝিকরগাছা, নওয়াপাড়া প্রভৃতি স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন। ঈদ, পূজা, বৈশাখী মেলা, চৈত্র মেলাসহ গ্রামবাংলার নানা মেলায় ছোটদের মধ্যে এসব খেলনার এখনো বেজায় কদর। লাভ যা হয় তা দিয়ে তাদের যে বেশ ভালোই চলে তা বোঝা গেল ধীরেন্দ নাথ ধরের দালানবাড়ি দেখে।
মাটির খেলনার জগতে সিরাজসিঙ্গার আরেক প্রান্তে পালপাড়া। মাঝবয়সী নমিতা পাল সাংবাদিক পরিচয় শুনেই হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়েন। বলেন, ‘আমরা পাল মানুষ। আমাগের কতা লিখে কী করবেনেন?’ কাজ করতে আর কথা বলতে তিনি কেবলই হাসেন। হাসতে হাসতে জানালেন, ঈদ আর পূজাকে সামনে রেখে তৈরি করেন প্রচুর পরিমাণে মাটির ব্যাংক, মাটির ঘোড়া, হাতি, হাঁড়ি, কড়াই, জগ ইত্যাদি। রত্না পাল জানান, আগে মাটি বিনা পয়সায় পাওয়া যেত বলে এগুলোর খরচ কম পড়ত। এখন মাটি কিনে নিতে হয় বলে খরচ বেড়ে গেছে বহুগুণ। বৃদ্ধ কানাই লাল জানান, মাটির উপকরণের চাহিদা এখন অনেক কমে গেলেও দাম যা পাওয়া যায় তা মন্দ না।
তথ্য সূত্রঃ যশোর নিউজ ২৪
তারিখঃ ২১/১০/২০১২ ইং