
Home যশোর বিভাগের দাবিতে আন্দোলন (Jsr Division Movement) > অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলাকে বিভাগ হিসেবে দেখতে চাই বৃহত্তর যশোরবাসী। আন্দোলনে নেমেছে যশোর ইনফো টিম।
এই পৃষ্ঠাটি মোট 97897 বার পড়া হয়েছে
অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলাকে বিভাগ হিসেবে দেখতে চাই বৃহত্তর যশোরবাসী। আন্দোলনে নেমেছে যশোর ইনফো টিম।
যশোরকে বিভাগ ঘোষনা ও বাস্তবায়নের যুক্তিসংগত কারণ
ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন জেলা, বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা যশোরকে বিভাগ ঘোষাণার কোনো খবর নেই। ইতিহাস ঐতিহ্যের যশোর জেলার শৃঙ্খলে বন্দি হয়ে আর্তচিৎকার করছে। কিন্তু সেই চিৎকার থামানোর জন্যে কেউই এগিয়ে আসছে না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, যশোর তার যশ হরণ করে বিভাগ হবেই হবে।
১৪১৮ খৃষ্টাব্দে খানজাহান আলী যশোরের শাসক হিসেবে আগমন করেন। এসময় বারবাজার, মুড়লী কসবা, পয়গ্রাম কসবা ও বাগেরহাট এই চারটি নগরী প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে যশোর রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজা বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায়

১৮৩৮ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় যশোর জিলা স্কুল; যা বাংলাদেশের প্রাচীনতম স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম। ১৮৪৩ খৃষ্টাব্দে ঝিকরগাছার শিমুলিয়ায় দেশের অন্যতম প্রাচীন গীর্জা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৪ খৃষ্টাব্দে যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হয় যা এদেশের প্রাচীনতম পাবলিক লাইব্রেরী। ১৮৬৪ সালের ১ আগস্ট গঠিত হয় যশোর পৌরসভা যা কলকাতা ও হাওড়া পৌরসভার পরেই যশোর পৌরসভার স্থান। ১৮৬৫ সালে মাগুরা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। ১৮৬৮ সালে যশোরের ঝিকরগাছা হতে শিশির কুমার ঘোষ বাংলাদেশের প্রথম ইংরেজি পত্রিকা অমৃতবাজার পত্রিকা প্রকাশ করেন যা ছিল কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় ইংরেজি পত্রিকা। ১৮৭৫ সালে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কার্যক্রম শুরু করে। ১৮৭৮ সালে নড়াইল সদর হাসপাতাল স্থাপিত হয়। ১৮৮৪ সালে কলকাতা-যশোর রেলপথ নির্মিত হয়। ১৮৮৬ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০১ সালে যশোর সদর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৮ সালে যশোরে ডাক যোগাযোগ ও মানি অর্ডার চালু হয়। ১৯০৯ সালে যশোর টাউন হল নির্মিত হয়। সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে একই সময়ে টাউন ক্লাব ও আর্য থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২১ সালে আর্য থিয়েটারের জন্য বি. সরকার মেমোরিয়াল হল তৈরী করা হয় যা বর্তমানে তসবীর মহল (সিনেমা হল) নামে পরিচিত। ১৯২২ সালে যশোরে প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুল ও হাসপাতাল যা উপমহাদেশে তখন হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি ছিল। ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় যশোর বিমানবন্দর স্থাপিত হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের একমাত্র বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এই বিমান বন্দর। ১৯৫০ সালে যশোরে বিদুৎ ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৬৩ সালে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড স্থাপিত হয়। ভারত বিভাগের পর যশোরে প্রথম শ্রেণীর সেনানিবাস প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেনা সদস্যের বাস। ১৯৭২ সালের জুন মাসে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমদানী-রফতানী কাজ শুরু হয়।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর দেশের মধ্যে যশোর জেলা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। ২০০৩ সালের ১৭ এপ্রিল যাত্রা শুরু হয় বৃহত্তর যশোরকে নিয়ে বংলাদেশের প্রথম জেলা ভিত্তিক ওয়েবসাইট িি.িলবংংড়ৎব.রহভড়. ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর যশোর প্রথম ডিজিটাল জেলার মুকুট পরে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়মুক্ত এই জেলায় বিভাগ কেন রাজধানীর উপযোগী রেলওয়ে জংশন, বিমানবন্দর, এশিয়ার সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দু’টি কাস্টমস কমিশনার কার্যালয়, কেন্দ্রীয় কারাগার, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র, সেনানিবাস, বিমান ঘাঁটি, বিজিবি’র দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিওন সদর দপ্তর, দু’টি মেডিকেল কলেজ, বৃহৎ স্টেডিয়াম, বিসিক শিল্পনগরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩৬০ দরজার বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ কালেক্টরেট ভবনসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকটি বিভাগীয় কার্যালয় রয়েছে। সহসাই দেশের প্রথম হাইটেক পার্কের যাত্রা শুরু হবে এ জেলা থেকে। পুলেরহাটে আদ-দ্বীনের ৫শ’ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল এখন নির্মাণাধীণ। যশোরের সঙ্গে পাশ্ববর্তী দেশের রাজধানী কলকাতাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। কলকাতা ও ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থাও রয়েছে। নওয়াপাড়া শিল্প নগরীর সঙ্গে ভৈরব নদের নৌ-পথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিরাজমান।
নীল বিদ্রোহ, বৃটিশ বিরোধী ভারত ছাড় আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, বিধাব বিবাহ আন্দোলন, সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনের সুতিকাগার এই যশোর।
এ জেলার যে সকল গুণী ব্যক্তিরা দেশ ও জাতীর সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম- মরমি কবি ফকির লালন শাহ-১৭৭২ (হরিনাকুন্ডু, ঝিনাইদহ), কবিয়াল পাগলা কানাই-১৮০৯, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত-১৮২৪, সাংবাদিক শিশির কুমার ঘোষ-১৮৪০, সমাজসেবক রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার-১৮৫৯, ইসলাম প্রচারক মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ-১৮৬১, গনিতবিদ কে. পি. বসু-১৮৬৫, জ্যোর্তিবিদ রাধাগোবিন্দ চন্দ্র-১৮৭৮, বিপ্লবী বাঘা যতীন-১৮৮০, চলচ্চিত্র পরিচালক নরেশ মিত্র-১৮৮৮, লেখক ডা. মোঃ লুৎফর রহমান-১৮৮৯, রাজনীতিবিদ সৈয়দ নওশের আলী-১৮৯১, চিকিৎসা বিজ্ঞানী নীলরতন ধর-১৮৯২, কবি গোলাম মোস্তফা-১৮৯৭, নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্কর-১৯০০, কবিয়াল বিজয় সরকার-১৯০৩, কবিয়াল মোসলেম উদ্দীন-১৯০৪, চলচ্চিত্র অভিনেতা ধীরাজ ভট্টাচার্য-১৯০৫, কবি কাজী কাদের নওয়াজ-১৯০৯, ঔপন্যাসিক নীহাররঞ্জন গুপ্ত-১৯১১, সঙ্গিত পরিচালক কমল দাসগুপ্ত-১৯১২, কমরেড অমল সেন-১৯১২, কবি ফররুখ আহমেদ-১৯১৮, নৃত্য শিল্পী অমলা শঙ্কর-১৯১৮, সেতার বাদক রবি শঙ্কর-১৯২০, কমরেড আব্দুল হক-১৯২০, কবি সৈয়দ আলী আহসান-১৯২২, চিত্র শিল্পী এস. এম. সুলতান-১৯২৩, কবি ও শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী-১৯২৮, ব্যবসায়ী সেখ আকিজ উদ্দিন-১৯২৯, ঔপন্যাসিক নিমাই ভট্টাচার্য-১৯৩১, সমাজসেবক প্রফেসর মোঃ শরীফ হোসেন-১৯৩৪, সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী এ. এস. এইচ. কে. সাদেক-১৯৩৪, শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার-১৯৩৫, কবি ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান-১৯৩৬, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ-১৯৩৬, পরমানু বিজ্ঞানী ড. এম. শমশের আলী-১৯৩৭, রাজনীতিবিদ হায়দার আকবর খান রনো-১৯৪২, কবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান-১৯৪৩, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়-১৯৪৬, রাজনীতিবিদ তরিকুল ইসলাম-১৯৪৬, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান-১৯৪৭, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুচন্দা-১৯৪৭, সঙ্গিত পরিচালক প্রণব ঘোষ-১৯৫০, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ববিতা-১৯৫৫, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী চম্পা-১৯৬১, চলচ্চিত্র অভিনেতা রিয়াজ-১৯৭০, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাবনুর-১৯৭৫, ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা-১৯৮৩, ক্রিকেটার সাকিব আল-হাসান-১৯৮৭ প্রমুখ।
যশোর খাদ্যশষ্য, মাছ, সবজি ও ফুল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত্ব জেলা। যশোরের ৩ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে ২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকার ১১ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন ধান ও গম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে উদ্বৃত্ত থাকে ৫ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য। সবজি উৎপাদিত হয় এক হাজার কোটি টাকার। ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ৫ লাখ মেট্রিক টন সবজি ফলে। স্থানীয় চাহিদা ৩ লাখ মেট্রিক টন। বাকি ২ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। এক হাজার হেক্টর জমিতে বছরে ৩শ’ কোটি টাকার ফুল উৎপাদিত হয়। এই ফুল দেশের সব জেলায় যায়। এমনকী এখন কিছু ফুল বিদেশেও যাচ্ছে। মাছ উৎপাদনে যশোর আরও এগিয়ে। ৪১ হাজার চাষযোগ্য জলাশয় ও ১৯ হাজার উন্মুক্ত জলাশয়ে বছরে মাছ উৎপাদিত হয় ২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের এক লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন। ২৫ লাখ মানুষের চাহিদা ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত ৭৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। যশোরের ভাত-মাছ খেয়ে অনেক জেলার মানুষ বেঁচে আছে। খসবুময় নলেন গুড় না হলে তো পিঠা-পায়েসই হয় না। তা হলে যশোর কেন পিছিয়ে থাকবে?
যশোর থেকে ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা দূরত্বের দিক থেকে কাছে। যশোরকে বিভাগ করা হলে ঐ জেলাগুলির প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনা সহজতর হবে। যশোরের বাড়তি সুবিধা হচ্ছে এক সময়ের ৩৬০ দরজার দ্বি-তল কালেক্টরেট ভবন। এই ভবনটি খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের চেয়েও বৃহৎ। কাজেই যশোর বিভাগ হলে এই ভবন থেকেই বিভাগীয় সব দাপ্তরিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা সম্ভব। তাতে বিভাগীয় কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্যে সরকারের এক টাকাও খরচ হবে না। বেনাপোল বন্দর থেকে বছরে যে ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয় যশোর বিভাগ হলে উন্নয়ন কর্মকান্ডে এই টাকা থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে। বিভাগ হওয়ার মত যোগ্যতায় যশোর পরিপূর্ণ। কাজেই ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলার মর্যাদা রক্ষার জন্যে, প্রথম ডিজিটাল জেলার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্যে যশোরকে বিভাগ করতেই হবে। এই দাবির পক্ষে যারা তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে জোর আবেদন জানাতে থাকুন।
ইঞ্জি. মোঃ আব্দুস সাত্তার
আহবায়ক, যশোর বিভাগ আন্দোলন কমিটি
মোবাইল: ০১৭১২১৪২০৭৬
প্রচারণায়:
বৃহত্তর যশোর ওয়েবসাইট- www.jessore.info
(বাংলাদেশের প্রথম জেলাভিত্তিক ওয়েবসাইট)