
Home ধর্ম-সাধক / Religion-saint > হযরত পীর বোরহান খাঁ (রঃ) / Hazrat Pir Borhan Kha (Rh.)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 86706 বার পড়া হয়েছে
হযরত পীর বোরহান খাঁ (রঃ) / Hazrat Pir Borhan Kha (Rh.)
হযরত পীর বোরহান খাঁ (রঃ)
Hazrat Pir Borhan Kha (Rh.)
Jessore
Hazrat Pir Borhan Kha (Rh.)
Jessore
হযরত উলুখ খান জাহান আলী (রঃ) এর বারোজন শিষ্যের একজন ছিলেন হযরত বোরহান (বুড়ো) খাঁ (রঃ)। তিনি ধর্মপ্রাণ ও নিষ্ঠাবান মুসলমান ছিলেন। তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন। লোকে তাঁকে পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তি করিত।
হযরত পীর খান জাহান আলী তাঁর অনুচর বর্গদের যশোরের মুরলী কসবা থেকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে দুটি দিকে প্রেরণ করেছিলেন। একদল যশোর থেকে কপোতাক্ষ নদের কুলরেখা ধরে সুন্দরবনের দিকে রওনা হয়েছিল। এ দলের দলপতি ছিলেন বোরহান খাঁ বা বুড়ো খাঁ। তাঁর সুযোগ্য পুত্র ফতে খাঁও এ দলে ছিলেন। পিতা পুত্র উভয়ে ধর্মপ্রাণ ও কর্মনিপুণ সৈনিক ছিলেন। যশোর হতে সর্বপ্রথম তাঁরা খানপুরে উপস্থিত হন। সেখান থেকে বিদ্যানন্দ কাঠি হতে মাগুরা ঘোনা, ডাঙ্গানলতা, ভায়ড়া, তালা, কপিলমুনি হয়ে শিবসা নদী অতিক্রম করে আমাদি গ্রামে উপস্থিত হন। এখানেই বোরহান খাঁ ও ফতে খাঁয়ের ধর্মপ্রচারের প্রধান কেন্দ্রস্থল ছিল এবং ধর্ম প্রচারের সাথে সাথে পিতা পুত্র উভয়ে শাসন কার্যও পরিচালনা করতেন। সেসময় সুদুর সুন্দরবন অঞ্চলে কোন সুশৃঙ্খল শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল না। তবে মুসলমান আমলের ইতিহাসে খান-ই-জাহানই এতদঞ্চল শাসন করতেন। তাঁর শিষ্যগণ খলিফাতাবাদ হতে গুরুর আদেশ নিয়ে বিচার কার্য ও জমি পত্তন করি। হযরত বোরহান খাঁ (রঃ) গুরুকে দর্শন করার জন্য মাঝে মাঝে বাগেরহাট যেতেন। খান জাহানের দরবারে তার যথেষ্ঠ প্রতিপত্তি ছিল। তিনি খান জাহানের প্রতিনিধি হিসেবে এবং তাঁর নির্দেশ মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। পিতা পুত্র উভয়ের ইসলাম প্রচারের কেন্দ্র ছিল খানপুর, বিদ্যানন্দকাঠি, সরবাবাদ ও মীর্যাপুর অঞ্চলে। হযরত বোরহান খাঁ এতদঞ্চলের বহু অধিবাসীকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন।
তিনি বেশ কয়েকটি দীঘি খনন করেছিলেন। খানপুর হতে বিদ্যানন্দ কাটিতে আস্তানা স্থাপন করে একটি প্রকান্ড দীঘি খনন করেছিলেন। এই দীঘির দৈর্ঘ্য ১৬০০ হাত এবং প্রস্থ প্রায় ৭০০ হাত। তাছাড়া সেখানে বহু কীর্তিমালার ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান। আমাদি গ্রামে চাল ধোয়া ও ডাল ধোয়ার দীঘি তিনি খনন করেছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর আস্তানা ও বসতবাড়ীর পাশে একটি প্রান্ড দীঘি খনন করেছিলেন। পরবর্তীকালে সেই দীঘি নদী গর্ভে বিলীন হয় এবং হাতি বান্ধার দীঘি নামে পরিচিত হয়।
আমাদি গ্রামে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু একসময় এলাকা জনশুণ্য হয়ে যায়। আস্তে আস্তে স্থানটি জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে জঙ্গল পরিষ্কার করে নতুন বসতি গড়ে ওঠে। মাটির স্তুপ খুড়ে মসজিদ বের করার পর থেকে আমাদি গ্রামের নাম হয় মসজিদ কুড়। মসজিদের ভিতরের আয়তন 40 X 40 ফুট। দেয়ালের প্রশস্ত ৭ ফুট। মসজিদের চারটি কোনে চারটি মিনার এবং পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মেহরাব আছে।
হযরত পীর বোরহান খাঁ (রঃ) কখন, কোথায়, কিভাবে মারা গিয়েছিলেন তা জানা যায় না। কপোতাক্ষ তীরে আজও পীর বোরহান খাঁ বা বুড়ো খাঁ ও ফতে খাঁর কবর আছে। তাঁর কবরের নিকটেই গড়বেষ্টিত বসতবাড়ী ও আস্তান ছিল। বর্তমানে সেগুলো আজ ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে হযরত বোরহান খাঁ (রঃ) এর সমাধি কপোতাক্ষ নদীর স্রোতের সহিত যুদ্ধ করে টিকে আছে। তাঁর সমাধি যেন কোনরকম ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেজন্য আমাদের সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। পাইকগাছা থানার সোলায়মানপুরে তিনি একটি দীঘি খনন করেছিলেন। দীঘিটি আজও খননকারী বোরহান উদ্দিনের দীঘি নামে পরিচিত। বর্তমানে এখানে সেই আমলের কয়েকখানি পুরানো পাথর পড়ে আছে।
সর্বশেষ আপডেট :
১৮.০৫.১১