
Home সাহিত্যিক / Litterateur > প্রফুল্ল গোঁসাই / Profulla Goshai (1900-1974)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 87063 বার পড়া হয়েছে
প্রফুল্ল গোঁসাই / Profulla Goshai (1900-1974)
প্রফুল্ল গোঁসাই
Profulla Goshai
Home District: Narail, Kalia
স্বভাবকবি প্রফুল্ল গোঁসাই বাংলার লৌকিক সঙ্গীত ধারার অনন্য গীতিকার। তিনি সংসার জীবনের অতি তুচ্ছ বিষয়াদি নিয়ে গান রচনা করে কীর্তি স্থাপন করেছেন।
জন্ম ও পরিচয়:
প্রফুল্ল গোঁসাই বর্তমান নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার ছোট কালিয়া গ্রামে ১৯০০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গগনচন্দ্র বিশ্বাস, মাতা লক্ষ্মীরানী বিশ্বাস। প্রফুল্লর বাল্যনাম চকমোহন বিশ্বাস।
শিক্ষাজীবন:
প্রফুল্ল গোঁসাই স্থানীয় কালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি কালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। আনুমানিক ১৬ বছর বয়সে প্রফুল্ল গোঁসাই এস.এস.সি পাশ করেন। এরপর তিনি নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যায়ন করে। কিন্তু সঙ্গীতের নেশা ও দারিদ্র তাঁকে কলেজ বিমুখ করে তোলে। আপাততঃ শিক্ষাজীবন সেখানেই শেষ। একাডেমিক পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলেও বাইরের গ্রন্থ পাঠে তিনি অধিক মনযোগী হয়ে ওঠেন।
কর্মজীবনঃ
প্রফুল্ল গোঁসাই সারা জীবনই শিক্ষাকতার পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমান খুলনা, বাগেরহাট এলাকার বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের পন্ডিত শিক্ষক হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন। অবসর জীবনেও তিনি নিজ এলাকার মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অন্তরিক চেষ্টা রাখেন।
শিক্ষাকতার অবসরে তিনি গান রচনায় মনোনিবেশ করেন। ইংরেজ হটাও আন্দোলন ও পাকিস্তানের ঐপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রফুল্ল অবিনীত কন্ঠে গান গেয়ে ওঠেন। প্রফুল্ল নমঃ শূদ্র সমাজের লোক। সেকালে এই সমাজের লোকদের বর্ণ হিন্দুরা ‘অস্পৃশ তপশিলি জাতি’ বলে ঘৃণা করতো। মানবতাবাদী সাম্যেও গীতিকার প্রফুল্ল গোঁসাই রচনা করেন একটি গানঃ ‘বর্ণ হিন্দুর আঙিনায়’ অস্পৃর্শ তপসিলি জাতি ঘোরো কোন আশায়।’ দেবতা সব হিন্দুর, সবার পূজ্যপদ অথচ তার কাছে ঘেষতে দেওয়া হয় না সবাইকে। তথাকথিত তপসিলি হিন্দুজাতির দেয়া উপাচার পূজায় ব্যবহার হচ্ছে অবলীলায়। অথচ তপসিলিদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকার নেই। তাই প্রফুন্ন রচনা করেছেনঃ
তোমরা গেলে ওর ভেতরে (মন্দির)
ওমনি ঠাকুর মারা যায়,
ওমর মরে নরের ছোঁয়ায়
এ কল্পনা যাদের মাথায়
তারা সকল দেবতার গায়
জাতি দিদ্বেষ বিষ মাখায়।।
প্রফুল্ল গোসইয়ের একটি গান গবেষক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের ‘বাংলার বাউল ও বাউলগান’ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। পল্লীকবি জসীম উদ্দীন তার গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন গীতিকার প্রফুল্ল গোসাইয়ের একটি গান। কলকাতা বেতার ও খুলনা বেতার থেকে তার গান প্রচারিত হয়ে থাকে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রফুল্ল গোঁসাই ভারতের একটি শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহন করেন। দেশমুক্তির পরে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ১৯৭৪ সালে প্রফুল্ল গোঁসাই মৃত্যুবরণ করেন।
প্রফুল্ল গোঁসাই হাজার হাজার গান রচনা করেন। এই গান গুলো প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। এবার আমরা তার একটি বিচ্ছেদ গান উদ্ধত করছিঃ
আমার মন কান্দে যার লাগিয়া
দেহ প্রাণ কান্দে যার লাগিয়া,
তারে কোথায় পাবো রে খুঁজিয়া
ওসে তারি তরে বাদল ঝরে
আমার ঝরেছে দুই আঁখিয়া।।
তার সাথে আমার সাথে ছিলো মাখামাখি
বড়ো ভালোবাসতাম তারে মায়ায় রাখি
পরান বন্ধু বলে ডাকি;
হঠাৎ না কয়ে না বলে সেজন গেল
আমায় সেদিন ছাড়িয়া।।
না বলার যে ব্যথার দাগ বড়ো লেগেছে মনে
পাগল হয়ে ঘুরে বেড়াই কাননে কাননে
শুধু তারি অন্বেষণে
আমার জাতি ধর্মকুলের গৌরব সব দিয়াছি তারে ডারিয়া।।
শুনেছি সে প্রবল দ্বীপে বেঁধে একখান ঘর
সেই ঘরেতে বসে বাঁশি বাজায় নিরন্তর
তুলে পঞ্চমে তার স্বর;
আমি শুনেছি তার বাঁশরির গান
নিশিতে কান পাতিয়া।।
প্রফুল্ল কয় জীবন ভরে করছি পাতি পাতি
খুঁজিয়া না পেলাম একজন সেই পথেরই সাথি
রে মন সমব্যথায় ব্যথী;
এবার নিজে হয়ে নিজের সাথি
দিলেম তরী খুলিয়া।।
তথ্য সূত্র:
বৃহত্তর যশোরের লোককবি ও চারণকবি
লেখক: মহসিন হোসাইন
সংগ্রহ:
কবি মহসিন হোসাইন