
Home সাহিত্যিক / Litterateur > দুদ্দু শাহ ফকির / Duddu Shah Fakir (1841-1919)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 87016 বার পড়া হয়েছে
দুদ্দু শাহ ফকির / Duddu Shah Fakir (1841-1919)
দুদ্দু শাহ ফকির
Duddu Shah Fakir
Home District: Jhenaidah, Harinakunda
জন্ম ও বাল্যকালঃ
মরমি কবি লালন শাহ ফকিরের অন্যতম শিষ্য ও ভক্ত মরমি কবি দুদ্দু শাহ ফকির। দুদ্দুশাহ বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার হরিকুন্ডু উপজেলার বেলতলা গ্রামে ১৮৪১ ভূমিষ্ঠ হন। তার পিতার নাম জিন্দার আলি। দুদ্দু শাহ ছিলেন পিতা মাতার ৪ পুত্র সন্তানের সর্ব কণিষ্ঠ। শৈশবে ছিলেন চঞ্চল ও দুষ্ঠ প্রকৃতির এই সময়ে তার মধ্যে বিশেষ মেধা ও বুদ্ধির প্রমান পাওয়া যায়। সমবয়সী বন্ধদের সঙ্গে খেলাধুলা ও হাসি হাট্টা করে শৈশব অতিবাহিত হয়।
অধ্যয়নঃ
পারিবারিক রেয়াজ অনুসারে কিশোর দুদ্দুকে হরিশপুর শ্রীনাথ বিশ্বাসের পাঠশালায় ভর্তি করে দেয়া হয়। তিনি ছিলেন অসম্ভব শ্রুতিধর ও মেধাবি। পাঠশালায় অধ্যান শেষে দুদ্দু শাহ স্থানীয় মৌলভির কাছে আরবি, ফারাসি ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষা ও অধ্যয়ন করেন। জানা যায়, হরিপুর নিবাসী মদন দাস গোস্বামীর নিকটে সংস্কৃত ভাষা উত্তম রূপে আয়ত্বে নিয়েছিলেন।
দুদ্দশাহ প্রথম যৌবনেই মসনবি শরিফ ও চৈতন্য। চরিতামৃত সহ বহু কাব্য গ্রন্থ সুখ করেছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্ম ছাড়াও বাহু ধর্মীয় মত ও পথ আয়ত্ত্বে নিয়েছিলেন। বিভিন্ন ধর্ম বিষয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে আলেমও পন্ডিত হিসেবে বাহাস করতে যেতেন।
লালন ফকিরের সঙ্গে বাহাস ও শিষ্যত্ব গ্রহনঃ
দুদ্দুশাহ যৌবনে মরমি সাধাক লালন ফকিরের খ্যাতি ও অখ্যাতি শুনে ছিলেন। সেযুগে লালন ফকির হিসেবে শরিয়াত মুসলমানদের সমালোচনার কেন্দ বিন্দু ছিলেন। অনেক ইসলাম চিন্তাবিদ লালনকে যেমন খারাপ ছটিতে দেখতেন তেমনি তার সঙ্গে ধর্ম যুদ্ধে বা বাহাস করতেন। সেযুগের সুপন্ডিত দুদ্দুশাহও ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন লালন ফকিরের সঙ্গে বাহাস করতে। যথাসময়ে লালন দুদ্দু শাহ বাহাস হয়েছিলো। সেই বাহাসে দুদ্দু পরাজিত হয়েছিলেন এবং লামনের শিষ্যত্য গ্রহণ করেন। দুদ্দু শাহের রচনায় সেই বাহাসের প্রমান পাওয়া যায়ঃ
‘বাহাস করিতে এসে বয়াত হইনু
আমি অতি অভাজন লালন সাঁই বিনু।’
দুদ্দশাহের সঙ্গে লালনের বিশেষ সম্পর্ক ছিলো। দুদ্দু শাহ লালন ফকিরের সার্থক উত্তরাধিকার। তার গানের ভাষা লালনের গানের ভাষার অনুরূপ হলেও তার রচনায় তিনি ছিলেন যুগসচেতন ও বাস্তব ধর্মী। তার ভাষা যেমন প্রাণীবস্ত তেমনি ছন্দ ও রচনা শৈলী অনির্বচনীয়।
দুদ্দুশাহ ১৯১৯ সালে নিজ গ্রামে পরিনত বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাকে বেলতলী গ্রামে সমাহিত করা হয়। এবার দেখুন দুদ্দুশাহ ফকিরের একটি রচনাঃ
বাউল বৈষ্ণব ধর্ম এক নহে তো ভাই,
বাউল ধর্মের সঙ্গে বৈথাবের যোগ নাই ॥
বিশেষ সম্প্রদায় বৈঞ্চব
পঞ্চতত্বে করে জপতপ
তুনসিমালা অনুষ্ঠান সদাই ॥
বাউল মানুষ ভজে
যেখানে নিজ বিরাজে বস্তর অমৃত মজে নারী সঙ্গ তাই ॥
নিত্যামন্দের দুই পুরুষ হয়
বীরভদ্র বীরড়ামনি কয়
দুই জনে দুই মতের গোঁসাই শুনতে পাই ॥
দরবেশি বাউলের ক্রিয়া
বীরভদ্র জানে সেই ধারা
দরবেশ লালন সাঁইর কথায় দুদ্দু জানে তাই ॥
তথ্য সংগ্রহ: মহাসিন হোসাইন
তথ্য সূত্র: বৃহত্তর যশোরের লোকবি
ও চারণ কবি গ্রন্থ।