
Home সাহিত্যিক / Litterateur > মোহাম্মদ গোলাম হোসেন / Mohammad Golam Hossain (1873-1964)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 87035 বার পড়া হয়েছে
মোহাম্মদ গোলাম হোসেন / Mohammad Golam Hossain (1873-1964)
মোহাম্মদ গোলাম হোসেন
Mohammad Golam Hossain
Home District: Magura, Mohammadpur
মোহাম্মদ গোলাম হোসেন বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কবি। সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। সেযুগে শিক্ষা বিস্তার ও মানুষের মধ্যে পাঠভ্যাস সৃষ্টিত বিশেষ অবদান রেখেছিলেন কবি গোলাম হোসেন। সৃজনশীল সাহিত্য সৃষ্টি ছাড়াও পাঠ্যবই পুস্তক রচনায় তিনি বিশেষ অবদান রেখেছিলেন।
জন্ম ও শৈশবঃ
কবি মোহাম্মদ গোলাম হোসেন বর্তমান মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানার উপজেলার জোঁকা গ্রামের মাতুলালয়ে ১৮৭৩ সালে ভূমিষ্ঠ হন। গোলাম হোসেনের পৈত্রিক নির্বাস একই উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে। তাঁর পিতার নাম মুনশি আবদুর রহমান।
শিক্ষাজীবনঃ
গোলাম হোসেন স্থানীয় পাঠশালায় পড়া-শুনা শুরু করেন। এরপর তিনি ১৮৯৪ সালে এন্ট্রন্স পাশ করেন। গোলাম হোসেন ১৮৯৬ সালে এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি এফ.এ পাশ করেছিলো কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসা থেকে। এফ.এ পাশ করার পরে গোলাম হোসেনের পিতা ইন্তেকাল করেন। এতে সাময়িকভাবে তার ধারাবাহিক লেখাপড়ার ছেদ পড়ে। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি স্থানীয় বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা গ্রহণ করেন। অদম্য জ্ঞনন্বেষী গোলাম হোসেন এফ.এ পাশ করার ১৮ বছর পর ডিগ্রী পরীক্ষা দেন এবং ১৯১৮ সালে তিনি বি.এ ডিগ্রী লাভ করেন। মোহাম্মদ গোলাম হোসেন যে যুগে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছিলেন সে যুগে মুসলিম সমাজ লেখাপড়ায় একেবারে পিছিয়ে ছিলো। এ বিচারে মোহাম্মদ গোলাম হোসেন ছিলেন বিরলপ্রজ মানুষ। স্কুল জীবনে গোলাম হোসেন সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিলেন বিখ্যাত কীর্তনীয়া, সাহিত্যিক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এককালীন বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ রায় বাহাদুর যোগেন্দ্রনাথ মিত্র। কবি গোলাম হোসেনের কলেজ শিক্ষক ছিলেন বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্ররায় ও স্যার জগদিশচন্দ্র বসু।
পেশাঃ
কবি মোহাম্মদ গোলাম হোসেন কৃতবিদ্যান হয়ে পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি সরকারি স্কুলসমূহের পরিদর্শক নিযুক্ত হয়েছিলেন। অবসর গ্রহণ করে স্থানীয় বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষাকতার কাজ করেছিলেন। সম্মান স্বরূপ বিনোদপুর স্কুলের সামনে কৃতজ্ঞ এলাকাবাসী গোলাম হোসেনের স্মরণার্থে একটি স্মৃতি স্তম্ভ স্থাপন করেন।
সাহিত্যসেবাঃ
মোহাম্মদ গোলাম হোসেন ১৯০৪ সালে সাহিত্য রচনা শুরু করেন; তখন তিনি সরকারি স্কুল সমূহের সহ পরিদর্শক। ১৯০৬ সালে গোলাম হোসেনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বঙ্গবীরঙ্গনা’ প্রকাশ পায়। এরপর কবি গোলাম হোসেনের একেরপর এক কাব্য ও অন্যান্য গ্রন্থ প্রকাশ পেতে থাকে। নিম্নে কবি গোলাম হোসেনের রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকা দেয়া হলো:
১. বঙ্গবীরাঙ্গনা (প্যারোডি কাব্য) ২. বঙ্গদেশীয় হিন্দু মুসলমান (১৯১০) ৩. দিল্লী আগ্রাভ্রমণ (১৯১২), ৪. কাব্য যৃথিকা ৫. নীতিপ্রবন্ধ মুকুল (পাঠ্য পুস্তুক) ৬. পয়গামে মোহাম্মদী (অনুবাদ)।
মোহাম্মদ গোলাম হোসেনের অপ্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো:
১. হজরত মোহাম্মদ (ছঃ আঃ) এর জীবনী (কাব্য)
২. পাকিস্তান গাঁথাঃ ইসলামী রাষ্ট্রের স্বরূপ
৩. বর্তমান মুসলিম বাংলা অর্নিসালামিক ভাবধারাও হিন্দু প্রভাব
৪. আশা মারিচিকা (সামাজিক উপন্যাস)
৫. কারবালা কাব্য
৬. সিরাজদ্দৌলা কাব্য
৭. পলাতকা কাব্য
৮. বন্দিনী বাঁদীর বেদনা প্রভৃতি।
গোলাম হোসেনের ছয়খানি গ্রন্থের পান্ডুলিপি বাংলা একাডেমীতে জমা দেয়া হয় প্রকাশার্থে। কিন্তু সেগুলো প্রকাশনার কোনো খবর পাওয়া যায় নি। তবে ইংলেন্ডের ইন্ডিয়ান লাইব্রেরীতে গোলাম হোসেনের প্রকাশিত গ্রন্থগুলো সংরক্ষিত হচ্ছে।
১৯৬৪ সালে গোলাম হোসেন ইন্তেকাল করেন। তাকে সমাহিত করা হয় পার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে তার বাস ভবনে।
সংগ্রহ ও সম্পাদনা:
কবি মোহসিন হোসাইন
নড়াইল