
Home সাহিত্যিক / Litterateur > আফরোজা পারভীন / Afroza Parveen (1957) (Joint Secretary)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 84817 বার পড়া হয়েছে
আফরোজা পারভীন / Afroza Parveen (1957) (Joint Secretary)
আফরোজা পারভীন
Afroza Parveen
Home District: Narail

কথাসাহিত্যিক ও বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব আফরোজা পারভীন ১৯৫৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী নড়াইল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ মীজান সড়কের ‘সাঈফ ভীলা’ তাঁর পৈত্রিক বাড়ী। বাবা আফসার উদ্দিন আহমেদ পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট রাজনীতিক। নড়াইল মহকুমা আওয়ামী লীগের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মা বেগম মতিয়া আহমেদ ছিলেন একজন সমাজসেবিকা। তিনি ছিলেন ‘আপোয়া’ নড়াইল জেলা কমিটির সভানেত্রী। নড়াইলের কৃতিসন্তান, অবিভক্ত বাংলার স্পিকার ও মন্ত্রী সৈয়দ নওশের আলীর গর্বিত নাতনি আফরোজা পারভীন।
বড় বোন সুফিয়া বারি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। বড় ভাই শহীদ বুদ্ধিজীবী এস. বি. এম. মিজানুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরের ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ও ট্রেজারি অফিসার ছিলেন। লেখক হিসেবেও তার যথেষ্ট সুনাম ছিল। পিরোজুরের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ছিল। যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁর নামে ১৯৯৮ সালে স্মারক ডাকটিকেট বের করে। ইস্কাটনস্থ বিয়াম ভবনে তাঁর নামে একটা সেমিনার কক্ষ নির্মিত হয়। তাছাড়া ২০১৪ সালে তাঁকে সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সেই পদক গ্রহণ করেছিলেন আফরোজা পারভীন। দ্বিতীয় ভাই সাঈফ হাফিজুর রহমান খোকন একজন আইনজীবী ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য। তৃতীয় ভাই ড. সাঈফ ফাতেউর রহমান একজন লেখক, শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা। আফরোজা পারভীনের ছোট বোন শারমিনা পারভিন একজন লেখক ও ঢাকার মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান।
বিশিষ্ট বিজ্ঞান লেখক ও সরকারের যুগ্ম সচিব জনাব লতিফুর রহমানের সাথে ১৯৮২ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০১৪ সালের ৯ জুন তিনি আকস্মিকভাবে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ..রাজেউন )। ছেলে পান্থ রহমান একজন প্রেসিডেন্টস স্কাউট। তাছাড়া তিনি একজন খ্যাতিমান ট্রেকার। বিসিরয় পিক (হিমালয়), মাউন্ড ফুজিয়ামাসহ অসংখ্য পর্বত আরোহন করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমী (এল,এ, হলিউড ক্যাম্পাস) থেকে ফিল্ম এন্ড মিডিয়া প্রডাকশন্সে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তিনি একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা। মেয়ে নাবিলা পারিজাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিষয়ে মাস্টার্স করছেন।
শিক্ষাজীবন:
আফরোজা পারভীনের শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি নড়াইলের দিলরুবা গার্লস স্কুলে। ১৯৭২ সালে যশোর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় হতে এস. এস. সি পাশ করেন। ১৯৭৪ সালে যশোর সরকারী মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে এইচ. এস. সি. পাশ করেন। ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতি বিষয়ে এম এ ডিগ্রী অর্জন করেন। এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন ঢাকা ‘ল’ কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে। ২০১২ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম বিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি মেধা তালিকায় অষ্টম স্থান অধিকার করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৮৬ সালে।
পেশাগত জীবন:
১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। প্রথম পোস্টিং ছিল সহকারী কমিশনার হিসেবে কুমিল্লা কালেক্টরেটে। এরপর পর্যায়ক্রমে:
সহকারী সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়।
সিনিয়র সহকারী সচিব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়
সিনিয়র সহকারী সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
সিনিয়র সহকারী সচিব, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়
উপ-সচিব, ইআরডি, অর্থ মন্ত্রণালয়
উপ-সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
পরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী
পরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
যুগ্ম সচিব (সদস্য) বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন
সাহিত্য কর্ম:
আফরোজা পারভীনের পরিবারে পড়ালেখা, সাহিত্যচর্চা ও সংস্কৃতিচর্চার পরিবেশ ছিল বরাবরই। তাই স্বাভাবিকভাবেই পারিবারিক পরিমন্ডল থেকেই সাহিত্যচর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন তিনি। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় ছোটভাই সাঈফ ফাতেউর রহমান ‘দর্পণে আপন মুখ’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। সে পত্রিকা দুই বাংলাতে সমাদৃত হয়েছিল যথেষ্ট। এই পত্রিকায় আফরোজা পারভীন প্রথম লেখেন। মূলত: এখান থেকেই তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। লেখালেখি ও নাটকে অভিনয় করা ছিল তাঁর নেশা। গল্প, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, শিশুতোষ, রম্য, কলাম, স্মৃতিকথা, গবেষণা ,কবিতা, ছড়া, সম্পাদনাসহ সাহিত্যের সব শাখাতেই তিনি কাজ করছেন। তিনি ‘রক্তবীজ’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক। তাছাড়া ছোটদের জন্য বিশ্বসাহিত্যের বেশ কিছু সেরা গল্পও তিনি অনুবাদ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭০টি।
উল্লেখযোগ্য বই:
উপন্যাস:
ভালবাসার মুখ
বিহঙ্গের ডানা
যুদ্ধদিনের কাব্য
হাওড়
গোধূলীর আলোয় বন্ধুরা
ফুল ফোটার বেলা
ঢেউ
পরনারী
একাত্তরের পদাবলী
উপন্যাস সমগ্রসহ অন্যান্য
ছোট গল্প:
ক্যানভাস
পাতাবাহারের রং
হরিণী কথা
গোলাপী টিস্যুতে সন্দেশ
নির্বাচিত গল্প
সুবর্ণভূমিতে মাসিজ বালিকা
আগুনপাখি
দেশের ঘ্রাণ
করম আলী শহরে যাচ্ছে
মুক্তিযুদ্ধের গল্প
গল্প ১৯৭১
একাত্তরের আলোমতি
কাঁটাতারে সীমানাবন্দী লাশসহ অন্যান্য
শিশুতোষ:
অন্তুর অদৃশ্য জাদু
পান্থ সোনার অবাক কীর্তি
টুটুর যুদ্ধযাত্রা
মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের জন্মদিন
পরীর রাজ্যে পরী
চলো যাই রূপকথার দেশে
থ্রি চিয়ার্স ফর লাল সবুজ কমলা হিপ হিপ হুররে
হ্যামিলনের বংশীবাদক
একটি ইঁদুরের আত্মকাহিনি
পতাকা হাতে ক্ষুদে যোদ্ধাসহ অন্যান্য
রম্য
নির্বাচিত রম্য গল্প
ভ্রমণ
শ্যামকন্যা ব্যাংকক
ছড়া
একাত্তরের গাথা
গবেষণা
নড়াইল জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
রবীন্দ্রনাথ: গল্প কবিতা
বংলাদেশ গণআন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ
সম্পাদনা
শহীদ সাঈফ মীজানুর রহমান স্মারকগ্রন্থ
নাটক
টিয়া সমাচার
ধূসর জীবনের ছবি
গয়না
ঘরে ফেরার গান
ভাগসহ অন্যান্য
প্রামাণ্যচিত্র
অবিনাশী সাঈফ মীজান
অনুবাদ
টারজান
পিনোকিও
রাপুনজেল
হেনসেল ও গ্রেটেলসহ অন্যান্য
সামাজিক কর্মকান্ড:
আহবায়ক, সাম্প্রতিক সাহিত্য চিন্তা
সহ-সভাপতি, লেখক-সাংবাদিক-সাংস্কৃতিক ফোরাম
সাধারণ সম্পাদক, শহীদ সাঈফ মিজানুর রহমান স্মৃতি ফাউন্ডেশন
সাংস্কৃতিক সম্পাদক, রবীন্দ্র একাডেমী
নির্বাহী সদস্য, একুশে চেতনা পরিষদ
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, নান্দনিক নাট্য সম্প্রদায়
জীবন সদস্য, বাংলা একাডেমী
” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন
” রোকেয়া হল এ্যালামনাই এসোসিয়েশন
” অফিসার্স ক্লাব,ঢাকা
সদস্য, এশিয়াটিক সোসাইটি
” জাহাঙ্গীর নগর বি: বি: গবেষক ফোরাম
” অশ্রুপাত
” গাথা
সম্মাননা ও পুরস্কার:
আলোক সংসদ সাহিত্য পুরস্কার, ফেনী
কন্ঠস্বর, সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ পুরস্কার, ফকিরহাট, বাগেরহাট।
জীবন নগর সমগ্র সাহিত্য পুরস্কার, চুয়াডাঙ্গা
নির্ণয় শিল্পী গোষ্ঠি সাহিত্য পুরস্কার, ফরিদপুর
জাতীয় নজরুল সমাজ পদক, ঢাকা
নাট্যসভা সাহিত্য পুরস্কার, ঢাকা
স্বভাবকবি গোবিন্দ দাস সাহিত্য পুরস্কার, গাজীপুর
ফোল্ডার কবিতাপত্র পুরস্কার, পাবনা
এম নুরুল কাদের শিশু সাহিত্য পুরস্কার, ঢাকা
লোককবি আব্দুল হাই মাশরেকী সাহিত্য পুরস্কার, ঢাকা
স্মরণীয় ঘটনা:
শান্তি নিকেতনে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচীতে’ তাঁর মা অমিতা সেনের একটি সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন আফরোজা পারভীন। দেশে ফিরে দৈনিক জনকন্ঠে তাঁর উপর একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তাছাড়া অমর্ত্য সেনের ছেলেবেলা নিয়ে ‘আমাদের বাবলু’ (অমর্ত্য সেনের ডাকনাম বাবলু) নামেও তিনি একটি ফিচার লেখেন জনকন্ঠে। ২০১২ সালে অমর্ত্য সেন ঢাকায় এলে তাঁর হাতে লেখা দুটি তুলে দেন আফরোজা পারভীন। মায়ের সম্বন্ধে লেখা দেখে অমর্ত্য সেন অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন।
এছাড়াও বিখ্যাত লেখক মহাশ্বেতা দেবী, বাণী বসু, সুচিত্রা ভট্টাচার্য এর কোলকাতার বাড়ীতে গিয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন আফরোজা পারভীন। জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সেগুলো প্রকাশিত হয়।
এ পর্যন্ত তিনি বিশ্বের ২৫টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বরত অবস্থায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে তাঁর। বাংলাদেশের মহিলা ক্রীড়া দল দৌড়ে স্বর্ণ জিতলে পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়েছিল ও জাতীয় সংগীত বেজেছিল। তখন তিনি আনন্দে কেঁদেছিলেন। এটা তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এছাড়াও সাংস্কৃতিক দল নিয়ে দিল্লী, গোহাটি, কোলকাতা গিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকাকালীন বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে তিনবার সীমান্ত সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। দুইবার দিল্লী ও একবার মায়ানমারে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কাতারের দোহায় জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ভিয়েতনামের হে লং বে থেকে শুরু করে চীনের প্রাচীর, সিডনি হারবার, স্ট্যাচু অব লিবার্টিসহ অনেক কিছু দেখেছেন। যখন যে দেশ ঘুরেছেন তখন সে দেশের উপর লিখেছেন। কখনও ভ্রমণ কাহিনী আবার কখনও গল্প হিসেবে।
পছন্দের বিষয়:
বড় পর্দায় সিনেমা দেখা, মঞ্চে নাটক দেখা, বেড়ানো, গান শোনা, আড্ডা দেয়া।
অপছন্দ:
মিথ্যা বলা, কথা দিয়ে কথা না রাখা, অসততা।
সাক্ষাৎকার ও সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
০১৭৯৫৭০৭৬৬৭, ০১৯১২০৭৪১২৬