
Home সাহিত্যিক / Litterateur > রেজাউদ্দিন স্টালিন / Rezauddin Stalin (1962)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 87118 বার পড়া হয়েছে
রেজাউদ্দিন স্টালিন / Rezauddin Stalin (1962)
রেজাউদ্দিন স্টালিন
Rezauddin Stalin
Home District: Jhenaidah, Kaliganj

আধুনিক বাংলার তরুন কবি ও টিভি ব্যক্তিত্ব রেজাউদ্দিন স্টালিন (Rezauddin Stalin) ১৯৬২ সালের ২২ নভেম্বর বৃহত্তর যশোরের ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ থানার নলভাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ বোরহানউদ্দিন আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মা রেবেকা সুলতানা একজন গৃহিণী। তার দুই বোন সুহিতা সুলতানা ও সেতারা এলিন।
রেজাউদ্দিন স্টালিনের শৈশব কাটে গ্রামের বাড়ীতে। পরবর্তীতে পিতা-মাতার সাথে সপরিবারে কালিগঞ্জ থানা শহরে চলে আসেন। ১৯৬৯ সালে যশোর নতুন উপশহরে ডি ব্লকের ২২৩ নম্বর বাসাতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
১৯৯০ সালে যশোর ঘোপের মেয়ে ওয়াহিদা আক্তারের সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। স্ত্রীও যথেষ্ট সাংস্কৃতিক মনা। একজন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। তাঁদের এক মাত্র কন্যা তানজিলা রেজা।
শিক্ষাজীবন:
শিক্ষাজীবন শুরু হয় কালিগঞ্জের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কালিগঞ্জ থেকে যশোরে আসার পর পর্যায়ক্রমে সেবাসংঘ উচ্চ বিদ্যালয়, নতুন উপশহর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘোপের মাহমুদুর রহমান তিনি পড়াশোনা করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি মাহমুদুর রহমান বিদ্যালয় থেকে ম্যট্রিক পাশ করেন। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন ১৯৭৮ সালে যশোর এম. এম কলেজ থেকে। একই কলেজ থেকে ১৯৮২ সালে তিনি অর্থনীতিতে অনার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মস্টার্স শেষ করেন।
সাহিত্যকর্ম:
ছেলে বেলাতেই পারিবারিক পরিবেশের মধ্যে দিয়ে তাঁর কবি প্রতিভার বিকাশ ঘটে। তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সা

২০১২ সালের ১১ মে, যুগান্তরে শুক্রবারের সাময়িকীতে এমনই একটি কবিতা “মৃত্যুদেশ” প্রকাশিত হয়, যেখানে কবি দেশের চলমান প্রেক্ষাপট অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। কবিতাটি দর্শকমনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
আমাদের চালকেরা গাড়ির বদলে চালনা করে মৃতুগাড়ি শ্রমিকরা বানায় হাইরাইজ-মৃত্যু শিক্ষকেরা আদর্শলিপির বদলে পড়ায় মৃতুলিপি প্রকৌশলীরা সড়কের বদলে তৈরী করে মৃত্যুপথ ব্যবসায়ীরা আমদানি করে মৃত্যুপণ্য কৃষকেরা কর্ষণ করে মৃত্যুভূমি চিকিৎসকরা মৃত্যুসেবা দেয় আমাদের পিতারা জন্ম দেয় মরণপুত্র মেয়েরা ভ্রূণের বদলে ধারণ করে এইডস্ জ্ঞানীরা অর্জন করে মৃত্যুসত্য দেশপ্রেমিক স্বদেশের চেয়ে ভালোবাসে মৃত্যুদেশ আর বুদ্ধিজীবীরা অনবরত মৃত্যুবিবৃতি দেয় আর রাজনীতিকগণ লাভ করে মৃত্যুক্ষমতা পুরুতমোল্লারা স্বর্গের বদলে প্রার্থনা করে মৃত্যুমর্গ বেচারা গবেষকগণ গবেষণা করে মৃত্যুপঞ্জি নিয়ে সবজান্তা আমলারা প্রত্যাদেশের বদলে স্বাক্ষর করে মৃত্যুনথিতে প্রেমিকেরা প্রেমালাপের চেয়ে পছন্দ করে মৃত্যুলাপ ভূমি ফলায় মৃত্যুশস্য বৃক্ষে-বৃক্ষে মৃত্যুপত্র অঙ্কুরিত হয় কবিরা স্বপ্নের বদলে রচনা করে মৃত্যুপদ এই আমাদের প্রিয় মৃত্যুদেশ, দ্যাখো |
রেজাউদ্দিন স্টালিন মোট ২৩টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে “পূর্ণ্যপ্রাণ যাবে”-১৯৮৩ সাল, “দাঁড়াও পথিকবর”-১৯৮৬ সাল (একটি যৌথ প্রকাশনা), “ফিরিনি অবাধ্য আমি”-১৯৮৫, “ভেঙে আনো ভিতরে অন্তরে”-১৯৮৭, “সেইসব ছদ্মবেশ”-১৯৮৯, “আঙ্গুলের জন্য দ্বৈরথ”-১৯৯২, “আশ্বর্য আয়নাগুলো”-১৯৯২, “ওরা আমাকে খুঁজছিল”-১৯৯৭, “সম্ভাবনার নিচে”-১৯৯৬, “পৃথিবীতে ভোর থেকে দেখিনি কখনো”-১৯৯৭, “আশীর্বাদ করি আমার দুঃসময়কে”-১৯৯৮, “হিংস্র নৈশভোজ”-১৯৯৯, “আমি পৃথিবীর দিকে আসছি”-২০০০, “লোকগুলো সব চেনা”-২০০১, “নিরপেক্ষতার প্রশ্ন”-২০০২, “পদশব্দ শোন আমার কন্ঠস্বর"-২০০৩, “পুনরুত্থান পর্ব”-২০০৪, “অবিশ্রুত বর্তমান”-২০০৫, “মুহুর্তের মহাকাব্য”-২০০৬ সাল, “অনির্দিষ্ট দীর্ঘশ্বাস”-২০০৮, “ভাঙা দালানের স্বরলিপি" ২০০৯, “কেউ আমাকে গ্রহণ করেনি”-২০০৯ সাল।
স্টালিন কবিতা লিখেছেন সহস্রাধিক। সংকলনগুলো হচ্ছে “রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা”-১৯৯০ সাল, “রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা সংগ্রহ”- ১৯৯৫, “রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা সংগ্রহ”- ১৯৯৬, “মৃত্যুর জন্ম দিতে দিতে”-১৯৯৭ সাল। তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে ভারতের সাপ্তাহিক দেশ, শিব নারায়ণ সম্পাদিত জিজ্ঞাসাসহ বাংলা ভাষায় সব বড় পত্রিকাতেই। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করতে তিনি নিয়মিত চর্চা করে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রজন্মের কবিরা যে ধারার কবিতা লিখছেন, স্টালিন তার ব্যতিক্রম। তাঁর লেখা কবিতা পৃথিবীর বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। স্টালিনের কবিতা অনুদিত হয়েছে ইংরেজি, হিন্দী, উর্দূ, চীনা, জার্মান, ফরাসী, রুশ, উড়িয়া, মালয়লামসহ পৃবিবীর বহু ভাষায়। প্রবাসী বাঙ্গালীদের সহযোগিতায় মূলত রেজাউদ্দিনের কবিতার প্রচার ও প্রসার ঘটেছে। ২০০৫ সালে তিনি কবিতার জন্য বাংলা একাডেমী পদক পেয়েছেন।
রেজাউদ্দিন স্টালিন-এর কবিতা নিয়ে যারা আলোচনা করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন শিবনারায়ণ রায়, শঙ্খ ঘোষ, আল-মাহমুদ, বিশ্বজিৎ ঘোষ, শাস্তনু কায়সার, জাকারিয়া শিরাজী, আহমদ মাযহার, রহমান হেনরী, তপন বাগচী, নির্মল বসাক, আহমেদ মওলা, শিমুল আজাদ, চঞ্চল আশরাফ, শাহীন রেজা, রওশন ঝুনু প্রমুখ।
একটি মাত্র উপন্যাস লিখেছেন “সম্পর্কেরা ভাঙে”-২০০৮ সালে। একটি মাত্র গদ্যগ্রন্থ “নির্বাসিত তারুণ্য”-১৯৯৬ সাল। শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ “হাঁটতে থাকো”-২০০৭ সাল এবং “নজরুলের আত্ন-নৈরত্ন” ২০০৬ সাল। স্বরচিত কবিতা আবৃত্তির অডিও ক্যাসেট দুইটি (গীতালী) “ফিরিনি অবাধ্য আমি”-১৯৮৫ সাল এবং “সেইসব ছদ্মবেশ”-১৯৮৭ সাল। সম্প্রতি তিনি নিজের নান্দনিক জগত ও প্রেমভাবনা নিয়ে লিখছেন।
সম্মাননা:
রেজাউদ্দিন স্টালিন কর্মের স্বীকৃতি স্বরুপ দেশ-বিদেশের বেশকিছু সংগঠন কর্তৃক বহু পুরষ্কার ও সম্মাননা পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সাস্কৃতিক খরব সম্মাননা (কলকাতা, ভারত) ১৯৮৭, ছোট কাগজ সম্মাননা (উড়িষ্যা, ভারত) ১৯৮৭, ইকো সাহিত্য পুরস্কার (ভারত) ১৯৯১, ধারা সাহিত্য আসর স্বর্ণপদক ১৯৯৩, লাইফ ইন্টারন্যাশনাল এওয়ার্ড ১৯৯৪, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক একাডেমী স্বর্ণপদক ১৯৯৫, নাইট জুভেনাইল কনফেডারেসী পুরস্কার ১৯৯৮, বর্জন পুরস্কার ১৯৯৯, শব্দবার্তা সম্মাননা (পশ্চিমবঙ্গ) ২০০৫, সম্মিলনী মহিলা সমবায় সমিতি লি. পুরস্কার ২০০৪, মহানগরী সাংস্কৃতিক ফেরাম পুরস্কার ২০০৪, বাংলা একাডেমী পুরস্কার ২০০৫, খুলনা রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার ২০০৫, রোদসী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন সম্মাননা ২০০৫, দেশ, মাটি ও মানুষ সম্মাননা ২০০৫, অনন্য আশি সম্মাননা ২০০৫, ম্যাজিক লণ্ঠন সম্মাননা ২০০৫ সাল এবং মাইকেল মধুসূদন পুরষ্কার ২০০৯ সালে লাভ করেছেন।
টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও পরিকল্পনা:
রেজাউদ্দিন স্টালিন বিটিভি, এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, বাংলাভিশন, আরটিভি, ও মাই টিভিসহ নানা চ্যানেলে নিয়মিত অনুষ্ঠান করে থাকেন। ১৯৭৮ সালে প্রথম তাঁকে বিটিভিতে দেখা যায় একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে। তারপর নিয়মিতভাবে ১৯৮৪ সালে ‘শিল্প ও সাহিত্য’, ১৯৯০ সালে ‘তারুন্য’, পরবর্তী পাঁচ বছরে করেছেন ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘সবার জন্য প্রতিধ্বনি’, ‘আরশি নগর’, ‘অক্ষরের গল্প’, ‘Talk of the week’ প্রভৃতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি এটিএন বাংলাতে ‘সবার জন্য’, আরটিভিতে ‘Talk of the week’ ও চ্যানেল আই ‘আরশিনগর’ নামে তিনটি অনুষ্ঠানে কাজ করছেন।
অন্যান্য কর্মকান্ড:
নজরুল ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক পদে চাকরির পাশাপাশি রেজাউদ্দিন স্টালিন ‘পারফিউমিং আর্ট সেন্টার’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আজিজ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ‘ম্যাজিক লন্ঠন’ নামে আর একটি সংগঠনের তিনি সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। ইতোপূর্বে তিনি ঢাকা বুক ক্লাবের মহাসচিব ছিলেন। বর্তমানে তিনি এর সদস্য। সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের আজীবন সাদস্য তিনি। তিনি বাংলা একাডেমীর একজন ফেলো। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার মধ্যে রয়েছে রৌদ্র দিন, বসন্ত-বর্ষ-শরতের পদাবলী সম্পাদনা ইত্যাদি।
তথ্য সূত্র:
সাক্ষাৎকার
তথ্য সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
শামিউল আমিন শান্ত
সর্বোশেষ আপডেট:
অক্টোবর ২০১১