
Home সাহিত্যিক / Litterateur > বেদুঈন সামাদ / Bedouin Samad (1926-2001)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 87180 বার পড়া হয়েছে
বেদুঈন সামাদ / Bedouin Samad (1926-2001)
বেদুঈন সামাদ
Bedouin Samad
Home District: Jessore
Bedouin Samad
Home District: Jessore
পারিবা

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথাশিল্পী, ঔপন্যাসিক বেদুঈন সামাদ ছিলেন যশোর শহরের বেজপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা। এই খ্যাতিমান সাহিত্যিক ১৯২৬ সালের ১লা এপ্রিল পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি থানার অন্তর্গত ভবানিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বেদুঈন সামাদ ছদ্মনামে অধিক পরিচিত হলেও তাঁর প্রকৃত নাম আবদুস সামাদ। তাঁর পিতার নাম আলহাজ শেখ রহমতুল্লাহ।
পারিবারিক ও সামাজিক ঐতিহ্যগত সূত্রে নিজ এলাকায় তাঁর প্রভাব ও সুখ্যাতি ছিল ব্যাপক। একাধারে তিনি ছিলেন লোকাল বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন বোর্ডের ভাইস-প্রেসিডেন্ট, সেটেলমেন্ট বোর্ডের সদস্য, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের কন্ট্রাক্টর ও গ্রাম্য প্রধান। পিতা-মাতার চার ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে ‘বেদুঈন সামাদ’ ছিলেন সাবার ছোট। ভাই-বোনের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি ছিলেন বাড়ীর প্রিয়।
যশস্বী সাহিত্যিক বেদুঈন সামাদের পাঁচ পুত্র ও এক কন্যা। এক পুত্র মরহুম কামরুজ্জামান অকালে মৃত্যুবরণ করেন। অন্যরা সকলে সুপ্রতিষ্ঠিত। ডঃ শেখ রুহুল আমিন (বৈজ্ঞানিক, যুক্তরাষ্ট্র), দিল ফরিদা, স্বামী ডাঃ আমজাদ খান (সহযোগী অধ্যাপক, সিলেট মেডিকেল কলেজ), মেজর শেখ মনিরুজ্জামান, শেখ আনিসুজ্জামান (যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী) ও শেখ পারভেজ সাজ্জাদ (যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী)।
শিক্ষাজীবন:
শিশুকালে তাঁর শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় নিজ গ্রামের শেখ জিসারতুল্লাহের পাঠশালায়। পরবর্তীতে তিনি ভর্তি হন পুরন্দপুরের বিধু পন্ডিতের পাঠশালায়। পুরন্দপুর-ভবানীপুর থেকে মাইলখানেক দূরে। কান্দি বহরামপুর রাস্তার ধারে অবস্থিত। তিনি প্রতিদিন বই বগলে করে এই রাস্তার ওপর দিয়ে যেতেন। বিধু পন্ডিতের পাঠশালার শিক্ষা সমাপ্ত করে এবার তিনি ভর্তি হন ‘গোকর্ণ প্রসন্নময়ী উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে।’ এ স্কুলটি ছিল তাঁর বাড়ী থেকে অনেকদূরে। স্কুলটি একজন হিন্দু জমিদারের মায়ের নামে। সে কারণেই সেখানে, আরবী, ফারসী, উর্দু পড়ার সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়ে তাঁকে সংস্কৃত পড়তে হয়। এখানে উর্দু-ফারসী ও আরবী পড়া-শোনার প্রস্তাব করায় তাঁকে অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়। এ স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করে তিনি বহরমপুর কে. এন. কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে তিনি ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিভাগে আই. এ পাশ করেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় ১৯৬৯ সালে তিনি খুলনা ‘মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ’ থেকে বি. এ. পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
কবি প্রতিভার বিকাশ:
ছোটকাল থেকে বেদুঈন সামাদ ছিলেন ভাবপ্রবণ। শিক্ষা জীবনে তিনি নানা ম্যাগাজিনে কবিতা লিখে কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং পরবর্তীতে ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত হন। ছোটকালে লেখা লেখির সাথে তিনি সমাজ সেবায় ব্রতী হন। তাঁরই প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে, ‘ভবানীপুর পল্লী উন্নয়ন সমিতি’।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর তিনি পূর্ব পাকিসত্মানে চলে আসেন। এখানে পুলিশ বিভাগে চাকরিকালীন সময়েই তাঁর সাহিত্য প্রতিভা বিকশিত হতে থাকে। যশোর শহরের বেজপাড়ায় তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরম্ন করেন। তৎকালীন নওয়াপাড়া ও যশোর থেকে প্রকাশিত নাসিরউদ্দিন আহমদ কবিরত্ন এর সম্পাদনায় মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘মুকুল’ এ তাঁর লেখা প্রায়ই প্রকাশিত হত।
প্রতিভাধর এই নাট্য শিল্পী, নাট্যকার ও সাহিত্যিক বেদুঈন সামাদ বিভিন্ন নাটক লেখাসহ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ব্যাপক কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। যশোর ইনস্টিটিউটের নাটক বিভাগের প্রযোজনায় তাঁর রচিত ‘পথের দিশা’ ও ‘হে মোর দূর্ভাগা দেশ’ নাটক ২টি মঞ্চস্থ হয়। ১৯৬১ সালে সারদা পুলিশ ট্রেনিং কলেজে তাঁর লেখা ‘জয় পরাজয়’ নাটিকা মঞ্চস্থ হয়। খুলনা বেতারে তাঁর রচিত বেশ কয়েকটি নাটক প্রচারিত হয়েছে।
১৯৪৩ সালে সারা বাংলায় চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে নিরন্ন ও বুভুক্ষু ছেলে-মেয়েদের জন্যে তিনি নিজ গ্রামে ‘গ্রয়েল কিচেন’ নামে একটি অন্নদান প্রতিষ্ঠান খোলেন। স্ত্রী বেগম মরিয়ম বানুর উৎসহ ও অনুপ্রেরণা এবং পুলিশ বিভাগের চাকরি কালীন সমাজের বিচিত্র অভিজ্ঞতা তাঁর সাহিত্য কর্মের পূর্ণতা এনে দিয়েছে। তিনি সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য সাহিত্যধর্মী উপন্যাস ও নাটক।
প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য উপন্যাস সমূহ:
‘বেলা শেষে’ ১৯৫৫, ‘নিষ্পত্তি’ ১৯৬০, ‘দুই নদী এক ঢেউ’ ১৯৬৩, ‘পথে যেতে যেতে’ ১৯৫৮, ‘ধূম নগরী’ ১৯৬৭, ‘শুনি সেই পদধ্বনি’ ১৯৭০, ‘নিবিড় ঘন আঁধারে’ ১৯৭৩, ছোট গল্প ঃ ‘ফুল ও কুঁড়ি’ ১৯৭৪।
নাটক: ‘অভিযান’ ১৯৬২, জীবনী : মন ছুটে যায় দেশে দেশে - ১৯৮২।
পরলোক গমন:
খ্যতিমান সাহিত্যিক বেদুঈন সামাদ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে অবসর গ্রহণের পর খুলনার খালিশপুরের নিজ বাড়ী ‘বেলাশেষে’ অবস্থান করে সাহিত্য সাধনা করতেন। ২০০১ সালের জুলাই মাসের ১৫ তারিখে যশোরের বেজপাড়াস্থ স্থায়ী বাড়ীতে অবস্থান কালীন বার্ধক্য জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে যশোর সদর হাসপাতালে ৭৫ বৎসর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্য সূত্র :
যশোরের যশস্বী, শিল্পী ও সাহিত্যিক
লেখক : কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনা :
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
শামিউল আমিন শানত্ম
সর্বশেষ আপডেট:
অক্টোবর ২০১১