
Home সাহিত্যিক / Litterateur > আনোয়ারুল করিম / Anwarul Karim (1939)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 84831 বার পড়া হয়েছে
আনোয়ারুল করিম / Anwarul Karim (1939)
আনোয়ারুল করিম
Anwarul Karim
Home District: Jessore, Monirampur
Anwarul Karim
Home District: Jessore, Monirampur
পারিবা

বাংলাদেশের অন্যতম লোকবিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ আনোয়ারুল করিম ১৯৩৯ সালের ৮ ডিসেম্বর যশোর জেলার মণিরামপুর থানার লাউড়ী গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পিতৃ নিবাস যশোর জেলার কেশবপুর থানার কড়িয়াখালী গ্রাম।
১৯৫৯ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রী অধ্যাপিকা সৈয়দা আমেনা করিমও একজন সাহিত্যিক। সরকারী ঊর্ধতন কর্মকর্তা সুলতানা আফরোজ লুলু, সাংবাদিক জ্যেষ্ঠপুত্র এবং কনিষ্ঠ পুত্র নিয়ে কুষ্টিয়া বাড়াদির ঈশ্বরদী রোডে নিজ গৃহে বসবাস করছেন।
শিক্ষাজীবন:
সরকারী চাকরিজীবী পিতার দেশের বিভিন্ন জেলায় বদলির কারণে বিভিন্ন স্থানে পড়াশোনা করলেও যশোরে পিতার অবস্থানকালীন সময়ে যশোর জিলা স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং সেখান থেকেই ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৫৭ সালে কুষ্টিয়া কলেজ থেকে আই. এ. ১৯৫৯ সালে বি. এ পাশ করেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরোজীতে এম. এ পাশ করেন।
১৯৭৭ সালে ডঃ নীলিমা ইব্রাহিমের তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ থেকে ‘বাউল একটি লৌকিক আধ্যাত্নবাদী সাধনা’র উপর গবেষণা করে পি. এইচ. ডি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুফিবাদ এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বেও পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেন।
পেশাগত জীবন:
১৯৬২ সালে কুষ্টিয়া কলেজে ইংরেজী বিভাগে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু হয়। তিনি ১৯৮০ সালে তিন বছরের জন্যে বাংলাদেশ সরকার গঠিত ন্যাশনাল এ্যাডভাইজারি কমিটি ফর পাবলিকেশন, লিটারেচার এন্ড হেরিটেজ এর সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।
১৯৮৩-৮৬ সাল পর্যন্ড তিনি বাংলাদেশ সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় এবং নির্বহী কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত কালচারাল কমিশনে ফোকলোর বিভাগে সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।
আনোয়ারুল করিম ১৯৮৫ সালে ফিলিপাইন মিন দানাও টে’ ইউনিভার্সিটিতে উপ-মহাদেশীয় সুফিবাদ সম্পর্কে বক্তৃতা দানের জন্যে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সদস্য পদ লাভ করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে ভারতের কলকাতাস্থ ধ্রম্নপদ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদ কর্তৃক গবেষণার জন্যে সনদপত্র লাভ করেন। তিনি বাংলা একাডেমী এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সদস্য। তিনি কুষ্টিয়া ফোকলোর রিসার্স ইনস্টিটিউট লালন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং ঢাকাস্থ বাংলাদেশ জাতীয় সংগীত কমিটির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট।
নির্মল সাংস্কৃতিকসেবক আনোয়ারুল করিম ১৯৯৬ সালে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণ করে সাহিত্য সাধনায় এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনায় নিয়োজিত রয়েছেন।
বিদেশ সফর:
১৯৭২ সাল থেকে ভারতের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক লোক সংগীত ও ফোকলোর সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৮২ সালে ভারতের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বংলাদেশের ফোকলোর বিষয়ে বক্তৃতাদানের জন্যে আমন্ত্রিত হন। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে কোলকাতা, যাদবপুর, রবীন্দ্র ভারতী, শান্তি নিকেতন, উসমানিয়া, হায়দারাবাদ, বাঙ্গালোর মহীশূর, বোম্বে এবং দিল্লী অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৭৫ সালে ইরাকের বাদগাদ শহরে আন্তর্জাতিক লোক সংগীত সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি লন্ডন, আমেরিকা জাপান, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক বিজ্ঞান বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন।
১৯৮৬ সালে আন্তর্জাতিক সমাজ-বিজ্ঞান সমিতি কর্তৃক দিল্লীতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব কংগ্রেসে লোক চিকিৎসা বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি যুগ্নশ্লোভিয়ার জাগরেবে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নৃবিজ্ঞান সম্মেলনে লোক চিকিৎসায় যাদুমন্ত্রের প্রভাব শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠের জন্যে আমন্ত্রিত হন। ১৯৯০ সালে তাঁর একটি প্রবন্ধ মেক্সিকোতে আনত্মর্জাতিক নৃবিজ্ঞান সম্মেলনে পঠিত হয়। ১৯৮৮ সালে আমেরিকার নিউইয়র্কে স্থাপিত আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সংস্থায় লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে বাংলাদেশের জন্যে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ:
‘বাংলার বাউল কবি লালন শাহ’, ‘লালন গীতি’, ‘বাংলা সাহিত্যে মুসলিম কবি ও সাহিত্যিক’, ‘বাউল সাহিত্য ও বাউল গান’ ‘ফকির লালন শাহ’, ‘রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ ও লালনের গান’।
ইংরেজী:
* দি বাউল্স অব বাংলাদেশ।
* দি এ্যাবেরিজিন্ অব কুষ্টিয়া।
* দি মিথ্স অব বাংলাদেশ।
সম্পাদানা:
* বাংলা লোক ঐতিহ্য পঞ্চম সংখ্যা পর্যনত্ম।
* ইংরেজী ফোকলোর ৬ষ্ঠ সংখ্যা পর্যনত্ম।
কর্মের স্বীকৃতি:
তাঁর গবেষণা ও লেখনীর স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বিভিন্ন সম্মান ও পুরষ্কারে ভূষিত হন। ১৯৮৩ সালে ‘কবি আজিজুর রহমান’ পুরষ্কার এবং একই সালে কুষ্টিয়া সমিতি কর্তৃক গবেষক হিসেবে পুরষ্কৃত হন। ১৯৯৩ সালে যশোর চাঁদের হাট সংস্থা কর্তৃক গবেষণার জন্যে ‘চাঁদের হাট’ পদক পান। ১৯৯৪ সালে গবেষণার জন্যে আশরাফ সিদ্দিকী ফাউন্ডেশন কর্তৃক স্বর্ণপদক এবং কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৩৫ বৎসর পূর্তি উৎসবে গবেষণার জন্যে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
ডঃ আনোয়ারুল করিম আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁর লেখা ও গবেষণার জন্যে বিভিন্নভাবে মূল্যায়িত হয়েছে। ইউনেসকো বাংলাদেশের সংস্কৃতির ওপর তাঁর একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। বিদেশী জার্নাল গুলোতেও তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়।
তথ্য সূত্র:
যশোরের যশস্বী, শিল্পী ও সাহিত্যিক
লেখক: কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনা:
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
সর্বশেষ আপডেট:
ফেব্রুয়ারী ২০১২
ইউনুচ আলী