
Home সাহিত্যিক / Litterateur > সৈয়দ আলী আহসান / Syed Ali Ahsan (1922- 2002)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 87157 বার পড়া হয়েছে
সৈয়দ আলী আহসান / Syed Ali Ahsan (1922- 2002)
সৈয়দ আলী আহসান
Syed Ali Ahsan
Home District: Magura
Syed Ali Ahsan
Home District: Magura

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক ইতিহাসবেত্তা ও শিল্প সচেতন ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আলী আহসান ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দের ২২ মার্চ যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার (বর্তমান জেলা) আলোকদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সৈয়দ আলী হামেদ এবং মাতা সৈয়দা কামরুন্নেগার খাতুন। বরেণ্য তাপস হযরত শাহ আলী বোগদাদীর বংশধর। সৈয়দ আলী আহসানের পূর্ব পুরুষেরা অনেকেই ধর্মপ্রাণ ও জ্ঞানবান মনীষী ছিলেন। ১৯৪৬ সালে সৈয়দ আলী আহসান কমর মুশতরীর সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
শিক্ষাজীবন:
সৈয়দ আলী আহসানের শিক্ষা জীবনের শুরু ঢাকার ধামরাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু প্রকৃত পাঠচর্চা চলতে থাকে গৃহাঙ্গনে। গৃহ শিক্ষকের কাছ থেকে তিনি ফারসী, ইংরেজী, বাংলা ও গণিত শাস্ত্রে পাঠ গ্রহণ করতে থাকেন। ১৯৩১ সালে ঢাকায় আর্মানিটোলা বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে তিনি ভর্তি হন। ১৯৩৮ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৩৯ সালে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪০ সালে সৈয়দ আলী আহসানের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হয়। ১৯৪৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী -ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ ডিগ্রী লাভ করেন।
পেশাগত জীবন:
ঢাকা কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৫ সালে হুগলী ইসলামিয়া ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। এ বছরই তিনি প্রোগ্রাম এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে অল-ইন্ডিয়া রেডিওতে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে তিনি ঢাকা রেডিওতে যোগদান করেন। ১৯৪৯ সালে সাহিত্য কর্মের খ্যাতির জন্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পদে নিয়োগ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি বাংলা একাডেমীর পরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে সৈয়দ আলী আহসান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বভার পান। ১৯৭৫ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নিয়েগ পান। ১৯৭৭ সালের জুন মাস থেকে ১৯৭৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত সৈয়দ আলী আহসান বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে তিনি করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৫৫ সালে তিনি আন্তর্জাতিক পি. ই. এন. পাকিস্তান শাখার সেক্রেটারী জেনারেল নিযুক্ত হন।
কবি প্রতিভার বিকাশ :
আর্মানিটোলা বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় ১৯৩৭ সালে স্কুল ম্যাগাজিনে তাঁর একটি ইংরেজী কবিতা "The rose" প্রথম মুদ্রিত হয়। কবি মতিউল ইসলাম এ কবিতাটি বাঙলায় অনুবাদ করে ‘চাবুক’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। ম্যাট্রিক পড়ার সময় ‘আজাদ’ পত্রিকায় তাঁর দু’টি লেখা প্রকাশিত হয়। একটির শিরোনাম ‘হিন্দু-মুসলিম সমস্যা’ এবং অন্যটি ‘গণতন্ত্র ও ডিকটেটরশীপ।’
এই তরুণ বয়সেই সাহিত্য কর্মের জন্যে তৎকালীন বাংলা ভাষার খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিকদের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা গড়ে উঠে। এ সকল কবি সাহিত্যিকের মধ্যে কবি ফররুখ আহমদ, সিকান্দার আবুজাফর, শওকত ওসমান, বেগম সুফিয়া কামাল, হুমায়ুন কবীর প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগে পড়ার সময় সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় এবং কথা বলার অসাধারণ কলাকৌশলের জন্যে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিনি ‘প্রগতি সাহিত্য সংসদ’ ও রেডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পাটি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
১৯৪০ থেকে ৪৪ এর মধ্যে তিনি গল্প লিখতে শুরু করেন। ‘মাসিক মোহাম্মদী’ এবং ‘সওগাত’ পত্রিকায় তাঁর বেশ কয়েকটি গল্প প্রকাশিত হয়। ‘বুদ্বুদ’, ‘তারা তিনজন’, ‘রহিমা’, ‘জন্মদিনে’ গল্পগুলি তাঁর অন্যতম। এ সময় তিনি ‘ইহাই স্বাভাবিক নামে একটি উপন্যাসও লিখেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে গল্পচর্চা ছেড়ে শুরু করেন কবিতা চর্চা।
সমালোচক হিসেবে তাঁর পদার্পণ ঘটে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘পরিচয়’ পত্রিকায়, কবি সত্যেন্দ্রনাথ শীর্ষক দীর্ঘ প্রবন্ধটি মুদ্রিত হবার পর। এ সময়ে লেখা ‘রোহিনী’, ‘কবিতার বিষয়বস্তু’ ও ‘কালি কলমের প্রথম বর্ষ’ প্রবন্ধ তিনটি সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
আমার পূর্ব-বাংলা একগুচ্ছ স্নিগ্ধ
অন্ধকারের তমাল
অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায়
একটি প্রগাঢ় নিকুঞ্জ
সন্ধ্যার উন্মেষের মতো
সরোবরের অতলের মতো
কালো-কেশ মেঘের সঞ্চয়ের মতো
বিমুগ্ধ বেদনার শান্তি
আমার পূর্ব-বাংলা বর্ষার অন্ধকারের
অনুরাগ
সিক্ত নিলাম্বরী
নিকুঞ্জের তমাল কনক লতায় ঘেরা
কবরী এলো ক’রে আকাশ দেখার
মুহুর্ত
অশেষ অনুভব নিয়ে পুলকিত সচ্ছলতা।
অন্ধকারের তমাল
অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায়
একটি প্রগাঢ় নিকুঞ্জ
সন্ধ্যার উন্মেষের মতো
সরোবরের অতলের মতো
কালো-কেশ মেঘের সঞ্চয়ের মতো
বিমুগ্ধ বেদনার শান্তি
আমার পূর্ব-বাংলা বর্ষার অন্ধকারের
অনুরাগ
সিক্ত নিলাম্বরী
নিকুঞ্জের তমাল কনক লতায় ঘেরা
কবরী এলো ক’রে আকাশ দেখার
মুহুর্ত
অশেষ অনুভব নিয়ে পুলকিত সচ্ছলতা।
----------------------------------------------------------------
আমার পূর্ববাংলা অনেক রাত্রে
গাছের পাতায় বৃষ্টির শব্দের মতো
স্বচ্ছ নির্মল গাছের পাতায় মুক্তা
ছোট ছোট ফুল যেন অনেক তারা
যেন বন কন্যাদের চোখের পানি
যেন নিটোল নখের উপর শুক্তির স্বচ্ছতা
এগুলো সব অনুভবে আসে
অনেক রাত্রে বৃষ্টির শব্দ জাগে
আমার চেতনার ধন্যধান্য
এবং অন্ধকারের প্রদীপ-----”
আমার পূর্ববাংলা অনেক রাত্রে
গাছের পাতায় বৃষ্টির শব্দের মতো
স্বচ্ছ নির্মল গাছের পাতায় মুক্তা
ছোট ছোট ফুল যেন অনেক তারা
যেন বন কন্যাদের চোখের পানি
যেন নিটোল নখের উপর শুক্তির স্বচ্ছতা
এগুলো সব অনুভবে আসে
অনেক রাত্রে বৃষ্টির শব্দ জাগে
আমার চেতনার ধন্যধান্য
এবং অন্ধকারের প্রদীপ-----”
সাহিত্যকর্ম :
সৈয়দ আলী আহসানের সম্পাদনায় ১৯৫০ সালে শাহাদৎ হোসেনের কাব্য সংকলন ‘রূপছন্দা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন- এ সময় তিনি ‘ইকবালের কবিতা’ সম্পাদনা করেন। ১৯৫৩ সালে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুলস্নাহর সহযোগে ‘গল্পসঞ্চয়ন’ নামে একটি গল্প সংকলন সম্পাদনা করেন। ১৯৫৪ সালে ‘নজরুল ইসলাম’ নামক একটি সমালোচনা গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৯৫৬ সালে মুহম্মদ আবদুল হাই এর সহযোগিতায় ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থটি রচনা করেন। করাচী থাকাকালীন ‘কবি মধুসূদন’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।
অনুবাদ সাহিত্যে সৈয়দ আলী আহসানের ব্যক্তিত্ব অত্যন্ত উজ্জ্বল। ১৯৬৩ সালে গ্রীক নাট্যকার সফোক্লিসের ‘ইডিপাস’ নাটকটি অনুবাদ করে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে হুইটম্যানের কাবিতা অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন। এছাড়াও ইকবালের কবিতা, ইভানগলের কবিতা, মেরডিথের কবিতার অনুবাদ তাঁকে আরও খ্যাতিমান করে তোলে।
সৈয়দ আলী আহসানের প্রতিভা বিভিন্নমুখী। প্রবন্ধলেখা ও সমালোচনায় তাঁর কৃতিত্ব তুলনাহীন। ‘কবিতার কথা ও অন্যান্য বিবেচনা’ গ্রন্থে অসাধারণ দক্ষতায় প্রবন্ধ ও সমালোচনাকে তিনি সৃষ্টিশীল করে তুলেছেন।
তাঁর ‘অনেক আকাশ’, ‘একক সন্ধ্যায় বসন্ত’, ‘সহসা সচকিত’ এবং ‘আমার প্রতিদিনের শব্দ’ কাব্যগ্রন্থগুলো ঐতিহ্যানুরাগী সেৌন্দর্যবোধ ও দেশপ্রীতির অনুপম নিদর্শন।
১৯৬৮ সালে তাঁর ‘পদ্মাবতী’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধটি বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সাধারণ গবেষণা কর্ম। এ বছর তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’, ‘একেই কি বলে সভ্যতা’, ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’, গ্রন্থ তিনটি সম্পাদনা করেন।
সৈয়দ আলী আহসানের চিত্রকলা, সঙ্গীত এবং অন্যান্য চারুকলার প্রতি আগ্রহ অপরিসীম। চিত্রকলার ইতিহাস ও চিত্রশিল্পের রসাস্বাদনে তিনি একজন নিবেদিত প্রাণ। চিত্রকলার অধ্যাপনায় তাঁর সাফল্য বিশেষ স্মরণীয়। ১৯৭০ সালে তাঁর ‘আধুনিক বাংলা কবিতাঃ শব্দের অনুষঙ্গে’ প্রকাশিত হয়।
১৯৭৩ সালে তাঁর সম্পাদিত মধ্যযুগের কাব্য ‘মধুমালতি’ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থেও তাঁর পান্ডিত্যের পরিচয় রয়েছে। ১৯৪৭ সালে ‘রবীন্দ্রনাথঃ কাব্য বিচারে ভূমিকা’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে ‘জার্মান সাহিত্য; একটি নিদর্শন’ প্রকাশিত হয়।
১৯৮২ সালে "Approach" নামে একটি ইংরেজী ষান্মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৮৬ সালে তাঁর ‘আধুনিক কাব্য চৈতন্য এবং মোহাম্মদ মানিরুজ্জামানের কবিতা’ শীর্ষক গ্রন্থখানি প্রকাশিত হয়।
কর্মের স্বীকৃতি :
সৈয়দ আলী আহসান দেশ-বিদেশের সাহিত্য ও শিল্পের পরিমন্ডলে বিচরণ করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি দেশ ও বিদেশে বিভিন্ন পদক ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ফরাসী সরকার তাঁকে একটি সম্মানে ভূষিত করেছেন।
অতি উচ্চমানের এই সম্মানটির নাম হলো : OFFICIRDEL ORDRE DES ARTS ETDES LETTERS. বাংলা সাহিত্যের এই মহান ব্যক্তিত্ব কর্মজীবনের শেষ পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
পরলোক গমন :
এই জ্ঞানতাপস সৈয়দ আলী আহসান ২০০২ সালের ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকার ধানমন্ডির কলাবাগানস্থ নিজ বাসভবনে পরলোক গমন করেন। তাঁর সৃষ্টির মাঝে পল্লীর নিগুঢ় রূপ-অপরূপ হয়ে আছে :
তথ্য সূত্র :
যশোরের যশস্বী, শিল্পী ও সাহিত্যিক
লেখক : কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনা :
মোঃ হাসানূজ্জামান বিপুল
সর্বশেষ আপডেট :
ফেব্রুয়ারী ২০১২
ইউনুচ আলী
সৈয়দ আলী আহসান সম্পর্কে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য
bn.wikipedia.org
amarblog.com
somewhereinblog.net
sonarbangladesh.com
bn.wikipedia.org
amarblog.com
somewhereinblog.net
sonarbangladesh.com