
Home সাহিত্যিক / Litterateur > মো: শাহাদত আলী আনসারী / Md. Shahadat Ali Ansari (1920-1999)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 87042 বার পড়া হয়েছে
মো: শাহাদত আলী আনসারী / Md. Shahadat Ali Ansari (1920-1999)
মো: শাহাদত আলী আনসারী
Md. Shahadat Ali Ansari
Home District: Jessore
Md. Shahadat Ali Ansari
Home District: Jessore
মুহাম্মদ শাহাদ
ত আলী আনসারীর জন্ম বাংলা ১৩২৭ সালের ভাদ্র মাসে ২৪ পরগণা জেলায় বসিরহাট থানায়, তাঁর মাতুলালয়ে। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদ থানায়। তাঁর পিতার নাম মুহাম্মদ শরিয়াতুল্লাহ আনসারী।
গ্রাম্য পাঠশালায় তাঁর বাল্যশিক্ষা আরম্ভ হয়। পরে ১৯২৮ সাল থেকে আট বৎসর তিনি টাকী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সাংসারিক বিপর্যয় ও শারীরিক অসুস্থতার জন্যে তাঁর পড়াশুনা বিঘ্নিত হয়। ১৯৩৭ সালে তিনি প্রাইভেট ছাত্র হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে তিনি শিক্ষকতা আরম্ভ করেন। ১৯২৮ সালে পিতার আকস্মিক মৃত্যুতে শুরু হলো তাঁর এক সংঘাতময় জীবন। ১৯৩৯ সালে শিক্ষকতা ত্যাগ করে গ্রহণ করতে হলো সরকারী চাকরি। ১৯৪০ সালে চলে এলেন তিনি যশোরে। যশোর তাঁর কাছে ভাল লাগে এবং এ সময় থেকে তিনি যশোরে বসবাস করার ইচ্ছা পোষন করতে থাকেন। উচ্চ শিক্ষা লাভের দুর্নিবার আকাঙ্খা ও শিক্ষকতার তীব্র মোহ তাঁকে আকর্ষণ করতে থাকে। তিন বছর পরে সরকারী চাকরি ত্যাগ করে, তিনি আবার শিক্ষাকতায় পেশায় যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে তিনি যশোর কোতয়ালী থানার অন্তর্গত পদ্মাবিলা সিনিয়র মাদ্রাসার ইংরাজী শিক্ষকের পদ গ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি বসুন্দিয়া হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং বাঘারপাড়া থানার জয়রামপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। সাংসারিক জীবনে স্থিতিশীলতা ফিরে পেয়ে, দীর্ঘ বিরতির পরে তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আই-এ এবং ১৯৫৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি-এ পাশ করে বসুন্দিয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে উন্নীত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্যে এম-এ, পাশ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি যশোর শহরস্থ সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষকের পদে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যে দ্বিতীয় এম-এ, ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর শিক্ষকতা ও ছাত্র জীবন চলছে একই সঙ্গে। শিক্ষকতার সাথে সাথে তিনি অনেকগুলি বিষয়ে প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন। সব পরীক্ষায় তিনি অংশগ্রহণ করেছেন প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসাবে। নিজে পড়া আর অপরকে পড়ানো তাঁর নেশা।
তিনি যশোর সিটি কলেজে ও মহিলা কলেজে খন্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৭২ সালে থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সময় যশোর হেমিওপ্যাথির মেডিক্যাল কলেজে সন্ধ্যাকালীন ক্লাসে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। ১৯৮৪ সালে তিনি যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন ছেড়ে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা হাঃ, রঃ মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মাগুরা জেলার অন্তর্গত শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষরূপে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালের অক্টোবর মাসে সেখান থেকে অবসরগ্রহণ করেন।
স্কুলজীবনে বিভিন্ন ম্যাগাজিনে ইংরাজী প্রবন্ধ লিখে তাঁর সাহিত্য সাধনা শুরু হয়। তাঁর প্রথম কবিতা বসিরহাট থেকে ১৯৪৪ সালে ‘প্রগতি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে তাঁর লেখা অজস্র রম্যরচনা, ছোট গল্প ও প্রবন্ধ বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘শ্রীমতীর রণভঙ্গ’ (রম্য রচনা, মুক্তধারা, ১৯৭৭), স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও পরিবার পরিকল্পনা’ (বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের পাঠ্য তালিকা অনুযায়ী লিখিত, ১ম সংস্করণ ১৯৮০ বর্তমানে ৫ম সংস্করণ চলছে), ‘মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ’ ১৯৮৭ সালে তাঁর বাংলা সাহিত্যে যশোরের অবদান প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয় বিশ্ব শান্তি স্থাপনে ইসলাম। তাঁর অপ্রকাশিত পান্ডুলিপির সংখ্যাও অনেক।
এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইসলামী বিশ্ব কোষ প্রকল্পের একজন অনুবাদক।
একজন আদর্শ শিক্ষক, সমাজসেবক, ব্যায়ামবিদ ও সাহিত্যিক হিসেবে মুহম্মদ শাহাদত আলী আনসারী জীবনে বহু প্রশংসা ও পুরষ্কার লাভ করেছেন। তিনি ১৯৯৯ সালে বারান্দীপাড়ার বাড়ীতে ইন্তেকাল করেন।
তথ্যসূত্র :
শিক্ষালয়ের ইতিকথায় যশোর
লেখক : কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনা :
মো: হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট:
মার্চ ২০১২

গ্রাম্য পাঠশালায় তাঁর বাল্যশিক্ষা আরম্ভ হয়। পরে ১৯২৮ সাল থেকে আট বৎসর তিনি টাকী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সাংসারিক বিপর্যয় ও শারীরিক অসুস্থতার জন্যে তাঁর পড়াশুনা বিঘ্নিত হয়। ১৯৩৭ সালে তিনি প্রাইভেট ছাত্র হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে তিনি শিক্ষকতা আরম্ভ করেন। ১৯২৮ সালে পিতার আকস্মিক মৃত্যুতে শুরু হলো তাঁর এক সংঘাতময় জীবন। ১৯৩৯ সালে শিক্ষকতা ত্যাগ করে গ্রহণ করতে হলো সরকারী চাকরি। ১৯৪০ সালে চলে এলেন তিনি যশোরে। যশোর তাঁর কাছে ভাল লাগে এবং এ সময় থেকে তিনি যশোরে বসবাস করার ইচ্ছা পোষন করতে থাকেন। উচ্চ শিক্ষা লাভের দুর্নিবার আকাঙ্খা ও শিক্ষকতার তীব্র মোহ তাঁকে আকর্ষণ করতে থাকে। তিন বছর পরে সরকারী চাকরি ত্যাগ করে, তিনি আবার শিক্ষাকতায় পেশায় যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে তিনি যশোর কোতয়ালী থানার অন্তর্গত পদ্মাবিলা সিনিয়র মাদ্রাসার ইংরাজী শিক্ষকের পদ গ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি বসুন্দিয়া হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং বাঘারপাড়া থানার জয়রামপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। সাংসারিক জীবনে স্থিতিশীলতা ফিরে পেয়ে, দীর্ঘ বিরতির পরে তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আই-এ এবং ১৯৫৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি-এ পাশ করে বসুন্দিয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে উন্নীত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্যে এম-এ, পাশ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি যশোর শহরস্থ সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষকের পদে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যে দ্বিতীয় এম-এ, ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর শিক্ষকতা ও ছাত্র জীবন চলছে একই সঙ্গে। শিক্ষকতার সাথে সাথে তিনি অনেকগুলি বিষয়ে প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন। সব পরীক্ষায় তিনি অংশগ্রহণ করেছেন প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসাবে। নিজে পড়া আর অপরকে পড়ানো তাঁর নেশা।
তিনি যশোর সিটি কলেজে ও মহিলা কলেজে খন্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৭২ সালে থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সময় যশোর হেমিওপ্যাথির মেডিক্যাল কলেজে সন্ধ্যাকালীন ক্লাসে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। ১৯৮৪ সালে তিনি যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন ছেড়ে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা হাঃ, রঃ মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মাগুরা জেলার অন্তর্গত শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষরূপে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালের অক্টোবর মাসে সেখান থেকে অবসরগ্রহণ করেন।
স্কুলজীবনে বিভিন্ন ম্যাগাজিনে ইংরাজী প্রবন্ধ লিখে তাঁর সাহিত্য সাধনা শুরু হয়। তাঁর প্রথম কবিতা বসিরহাট থেকে ১৯৪৪ সালে ‘প্রগতি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে তাঁর লেখা অজস্র রম্যরচনা, ছোট গল্প ও প্রবন্ধ বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘শ্রীমতীর রণভঙ্গ’ (রম্য রচনা, মুক্তধারা, ১৯৭৭), স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও পরিবার পরিকল্পনা’ (বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের পাঠ্য তালিকা অনুযায়ী লিখিত, ১ম সংস্করণ ১৯৮০ বর্তমানে ৫ম সংস্করণ চলছে), ‘মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ’ ১৯৮৭ সালে তাঁর বাংলা সাহিত্যে যশোরের অবদান প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয় বিশ্ব শান্তি স্থাপনে ইসলাম। তাঁর অপ্রকাশিত পান্ডুলিপির সংখ্যাও অনেক।
এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইসলামী বিশ্ব কোষ প্রকল্পের একজন অনুবাদক।
একজন আদর্শ শিক্ষক, সমাজসেবক, ব্যায়ামবিদ ও সাহিত্যিক হিসেবে মুহম্মদ শাহাদত আলী আনসারী জীবনে বহু প্রশংসা ও পুরষ্কার লাভ করেছেন। তিনি ১৯৯৯ সালে বারান্দীপাড়ার বাড়ীতে ইন্তেকাল করেন।
তথ্যসূত্র :
শিক্ষালয়ের ইতিকথায় যশোর
লেখক : কাজী শওকত শাহী
সম্পাদনা :
মো: হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট:
মার্চ ২০১২