
Home সাহিত্যিক / Litterateur > কামরুজ্জামান কাজল / Kamruzzaman Kajal (1967-2008)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 87202 বার পড়া হয়েছে
কামরুজ্জামান কাজল
Kamruzzaman Kajal
Home District: Jessore
পরিবারিক পরিচিতি:
আধুনিক বাংলা গানের উদীয়মান সঙ্গীত রচয়িতাদের মধ্যে কামরুজ্জামান কাজল ছিলেন অন্যতম। কাজলের জন্ম ১৯৬৭ সালের ১৭ আগস্ট যশোর শহরের কারবালাতে। বাবা মো: নূরুজ্জামান ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি এবং মা ছিলেন গৃহিণী। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে কাজল সবার বড়।
কাজলের বৈবাহিক জীবন শুরু হয় ২০০১ সালের ২০শে ডিসেম্বর যশোর স্টেডিয়াম পাড়ার মেয়ে স্বপ্না রহমানের সাথে। পারিবারিক জীবনে তাঁরা দুই পুত্র সন্তানের জনক।
শিক্ষাজীবন:
যশোর মুসলিম একাডেমী থেকে ১৯৮৪ সালে এস. এস. সি পাশ করেন। ১৯৮৬ সালে যশোর এম. এম. কলেজ থেকে এইচ. এস. সি পাশ করেন। ১৯৯৩ সালে ঢাকা ইউনিভর্সিটি থেকে সমাজকল্যাণ বিষয়ে মাস্টার্স পাশ করেন। একই সাথে আই. সি. এম. এ থেকে সি. এম. এ ইন্টারমিডিয়েট সম্পন্ন করেন। পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট এ বি. এম. ডি. সি থেকে হায়ার ডিপ্লোমা করেছেন ১৯৯৫ সালে।
পেশাগত জীবন:
১৯৯৪ সালে কাজল কুমিল্লা ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কাস্টিং লিঃ এ এক্সিকিউটিভ হিসাবে ১ বছর চাকরি করেন। এই চাকরি ছেড়ে তিনি আবার বায়িং হাউজে ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগ পান। কিন্তু এই চাকরিটিও তিনি বেশী দিন করেননি। অবশেষে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সর্বোবৃহৎ অডিও কোম্পানি সঙ্গীতায় জি. এম. হিসাবে যোগদান করেন কাজল। দীর্ঘদিন এখানে দায়িত্ব পালনের পর তিনি সেন্ট্রাল মিউজিক এন্ড ভিডিও লিমিটেডে জি. এম হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
গীতিকার হিসাবে আত্মপ্রকাশ:
স্কুলজীবন থেকেই তার বিভিন্ন ধরণের ছোট গল্প, কবিতা ও গান লেখার অভ্যাস ছিল। ১৯৮৯ সালে একদিন সঙ্গীতশিল্পী শুভ্রদেবের সাথে কার্জন হলে পরিচয় হয়। তিনি শুভ্রদেবকে সঙ্গীত রচনার আগ্রহের কথা জানালে শুভ্রদেব তাঁকে প্রণব ঘোষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এর মধ্যে একদিন ঢাকা পাবলিক লাইব্রেরীতে কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদির সাথে তাঁর পরিচয় হয়। আব্দুল হাদি তাঁর লেখা কয়েকটি গান দেখে পছন্দ করলেন। তিনি বললেন “এখন তো কেউ কাব্যিক গান লেখে না, তোমার গানের মধ্যে কাব্য আছে। তুমি বিটিভিতে এনলিস্টেড হয়ে যাও।” আব্দুল হাদির যোগাযোগের মাধ্যমে কাজল বিটিভিতে তাঁর লেখা কিছু গানগুলি জমা দিলেন। কিন্তু এনলিস্টেড আর হয় না। অনেক অপেক্ষার পর ১৯৯১ সালে প্রণব ঘোষের সুরে ও তপন চৌধুরীর কণ্ঠে প্রথম তাঁর লেখা একটি গান রেকর্ডিং হয়। এর মধ্য দিয়ে সঙ্গীত জগতে একজন নতুন গীতিকার হিসাবে আত্মনপ্রকাশ করেন কাজল। অবশেষে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে গীতিকার হিসাবে তালিকাভুক্ত হন।
কাজলের রচিত গানের কণ্ঠ শিল্পীরা:
কাজলের লেখা প্রথম দিকের গানগুলি বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্পীরা গেয়েছেন। এদের মধ্যে অন্যতম রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, সামিনা চৌধুরী, শুভ্রদেব, খালিদ হাসান মিলু প্রমুখ।
এস ডি রুবেল, আঁখি আলমগীর ও রুকসি তাদের উত্থান থেকেই কাজলের গান গেয়ে আসছেন। আঁখি আলমগীরের অধিকাংশ গান কাজলেরই লেখা।
কাজলের গানের সুরকার যারা:
কামরুজ্জামান কাজলের লেখা ৬০ ভাগ গানের সংগীত পরিচালক যশোরের কৃতি সন্তান প্রণব ঘোষ। সংগীত পরিচালক মান্নান মোহাম্মদ এবং মনোয়ার হোসেন টুটুলও তাঁর অসংখ্য গানে সুরারোপ করেছেন। তাঁর লেখা গানের সংগীত পরিচালকের তালিকায় আরও আছেন আবু তাহের, জুয়েল বাবু, আলাল ওয়াহিদ, লোকমান হাকিম, রাজেশ, আলম খান, আলী হোসেন, কাজী হাবলু, সেখ সাদী খান, আলাউদ্দিন আলী প্রমুখ।
পরলোক গমন:
ভালই যাচ্ছিল কাজলের দিনগুলো। ২০০৮ সালে হঠাৎ করে পেটে ব্যাথা অনুভব করলেন কাজল। হাসপাতালে ভর্তি হলেন তিনি। এক সময় জীবনের সবচেয়ে ভয়ংঙ্কার সংবাদটি শুনলো তার পরিবার, ক্যান্সার। চিকিৎসা চলতে থাকে আর ধীরে ধীরে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে এ ভেবে সারাক্ষণ কাঁদতে থাকেন। ৩ বছর ও ৬ বছরের দুই অবুঝ সন্তান বাবার চোখের জল মুছে দেয়। মৃত্যুর আগে সঙ্গীতশিল্পী আসিফের উদারতার কথা বার বার উচ্চারণ করলেন। আসিফ কাজলের চিকিৎসার জন্য দুই লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু অসুস্থতার পর সর্বক্ষণ যিনি তাঁর পাশে ছিলেন, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার ঠিক শেষ সময়ে সেই আসিফের সাথে আর দেখা হলো না কাজলের। শেষবারের মত মরা মুখটি দেখতে ছুটে এসেছিলেন সঙ্গীতাঙ্গনের বহু নামি দামী শিল্পী। তাদের কান্নায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হলো। যে যার মতো আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়ালেন। মরদেহ নিয়ে যাওয়া হলো যশোরে। কারবালা গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হলো। কিন্তু এর পর কেউ আর তার পরিবারের খোঁজ রাখেনি ? জানা গেছে তার পরিবার খুব একটা ভাল নেই।
কাজলের রচিত উল্লেখযোগ্য গান:
গানের কলি | শিল্পীর নাম | |
তোমাকে ভুলিনি আজো | কুমার শানু | |
একটা ভুলই ছিল তোমার আমার ভালবাসা | পঙ্কজ উদাস | |
এ ভোরের রাতের শিশির যেমন | কুমার বিশ্বজিৎ | |
স্মৃতি সে এক সোনার খাঁচা | কুমার বিশ্বজিৎ | |
জীবনের কাছে দুটি হাত বাড়িয়ে | এন্ড্রু কিশোর | |
শোনো গো চাঁদ শোনো তাঁরা | এন্ড্রু কিশোর | |
সুরের খেয়াবে | রুনা লায়লা | |
এখনও ফাগুন আসে | শুভ্র দেব | |
যে পাখীর নীড় ভেঙ্গে গেছে | তপন চৌধুরী | |
মনতো সেই কবে মরে গেছে | তপন চৌধুরী | |
বসে বসে তুমি একা ভাবছো কি | সামিনা চৌধুরী | |
আমার ভাবনা হল লালন গীতি | খালিদ হাসান মিলু | |
বিরহের স্বরলিপি | কঁনক চাপা | |
পিরিতি বিষের কাঁটা | আঁখি আলমগীর | |
জীবনের সৈকতে বেদনার বালুচরে | আাঁখি আলমগীর | |
মন আছে তাই ভাল বাসবো | মনি কিশোর | |
শোন এক নগরের কথা | মনির খান | |
দুঃখ এক বসত ভিটা | মনির খান | |
নদী আর সাগরের মিলন কোথায় | ডলি সায়নত্মনি | |
দুঃখের আগুনে আমাকে পোড়াতে গিয়ে | এস. ডি. রুবেল | |
তোমাকে যতটা ভাল বেশেছি | এস. ডি. রুবেল | |
পদ্ম দিঘির পদ্ম | রুকসি | |
বিমুর্ত এই রাতে | আসিফ | |
ওগো সূর্য তুমি ডুবে যেও না | রবি চৌধুরী | |
তথ্য সূত্র: সাক্ষাৎকার
সম্পাদনা: মোঃ হাসানূজ্জামান (বিপুল)
সর্বশেষ আপডেট:
ফেব্রুয়ারি ২০১২