
Home সাহিত্যিক / Litterateur > ঈদু বিশ্বাস / Idu Biswas (1810-1896)
এই পৃষ্ঠাটি মোট 87133 বার পড়া হয়েছে
ঈদু বিশ্বাস / Idu Biswas (1810-1896)
ঈদু বিশ্বাস
Idu Biswas
Home District: Magura, Sreepur
ঈদু বিশ্বাস বিখ্যাত ভাবগানের বয়াতি। ভাবগানকে কড়চা গান বা বিচার গানও বলা হয়ে থাকে। মধ্য বাংলায় ভাবগানকে বলা হয় ‘বাউলিয়া গান’। বর্তমানে পল্লীর সুরের যে কোনো গানকেই বাউল গান বলা হয়ে থাকে। ধারনাটি নির্ভুল নয়।
ঈদু বিশ্বাস ভাবগান ও জারিগানের বয়াতি পাগলা কানাইয়ের সমসাময়িক। তিনি জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার ঘোড়ামারা গ্রামে। স্থানীয় লোকদের থেকে জানা যায়, তিনি ১৮১০ সালে ভূমিষ্ঠ হন। ইন্তেকাল করেন ১৮৯৬ সালে।
ঈদু বিশ্বাসের বাল্যকাল সম্পর্কে জানা যায় তিনি অতিশয় দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন। পরিবারের সবাই ছিলেন বৃঠি শ্রমিক। এই পরিবেশে ঈদু বিশ্বাস বিশেষ লেখাপড়া শিখতে পারেননি। জীবন জীবিকার জন্য তাঁকে অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করতে হতো। তিনি ছিলেন একাগ্র চিন্তার লোক। অনেকটা চুপচাপ ও চিন্তাশীল যুবক। হাটে মাঠে ভাবগানের সুর শুনতে শুনতে নিজেই নিজের অজান্তে গান রচনায় নিয়োজিত হন। বন্ধুদের সঙ্গে গান গাইতে গাইতে ঈদু বিশ্বাস জারিগান ও ভাবগানের দল তৈরির স্বপ্ন দেখেন। এক সময়ে তিনি সেযুগের বিখ্যাত গায়ক ও রচয়িতা নঈমুদ্দিন মুনশির কাছে হাজির হন। অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন, তিনি মুন্সিজির কাছ থেকে গান শিখতে চান তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করবেন। নঈমুদ্দিন মুনশি ঈদু বিশ্বাসের গান শুনে মুগ্ধ হন। এরপর ঈদু বিশ্বাস নঈমুদ্দিন মুনশির দলে কয়েক বছর অবস্থান করে দক্ষিণ-মধ্য বাংলার অসংখ্য আসরে গান পরিবেশন করেন। ঈদু বিশ্বাস তাঁর গুরু সম্পর্কে রচিত গানের অংশে বলেছেন নঈমুদ্দি জবর বুদ্ধি সম্পন্ন।
ঈদু বিশ্বাস একদিন নঈমুদ্দিন মুন্শির অনুমতি পেয়ে নিজেই জারিগানের দল করেন। তিনি বৃহত্তর যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, বরিশাল, ঢাকা, ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ পরগনা, নদিয়া জেলাসহ বিভিন্ন এলাকার তার দল নিয়ে জারির পালা করেছেন।
ঈদু বিশ্বাসের রচিত গানের কোনো সংকলন প্রকাশ পায়নি। তাঁর গান অজিত দক্ষিণ-মধ্যবাংলার ভাবগান ও ধুরা গানের আসরে পরিবেশিত হয়। লাখ লাখ মানুষের কাছে এক কিংবদন্তি। তাঁর রচনা যেসব উচ্চাঙ্গের তেমিন আমাদের সঙ্গীত সাহিত্যের অমর কীর্তি।
ঈদু বিশ্বাস বহু জারিগানের বয়াতির মধ্যে গানের প্রতিযোগিতা করেছেন। প্রতিযোগিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিখ্যাত বয়াতি পাগলা কানাই। পাগলা কানাইয়ের সঙ্গে অসংখ্য আসরে প্রতিযোগিতায় গান করেছেন ঈদু বিশ্বাস। এবার আমরা ঈদু বিশ্বাসের একটি বিখ্যাত গান উদ্ধিত করছিঃ-
ঈদু বিশ্বাস বলে, পথচজনার একই আনা
আছে ভারতে গাঁথা।
এক ইন্দ্র সে জন্ম নিনো পান্ডব বংশে
বুন্তী রাণী পথচজনের হয় মাতা।।
দুর্বাশার মন্ত্রগুনে কর মুনী ঠাকুর এই কথা
যারে ইচ্ছা করবা গতি সেই এস পুরাবে তা।।
পরীক্ষার কারন কহিবে স্মরণ
সূর্যদেব আসেন তখন।
আবার সূর্য এসে কুন্তীর পাশে বসে
বলে সূর্য বধু ওগো
দাও ধনী দাও এখন আমায় আসিঙ্গন।।
তাই সূর্যেও বিদ্যা একই রবি
ধর্ম হয় সূর্যের নন্দন।।
পিতা-পুত্র ভাইরে বাবা ভাই পিতা হয় এই কারণ।।
কুরুবুলে গুরু হয় দ্রোনাচার্য মহাশয়
অজুনের বানে তাহার মৃত্যু হয়।
ও তাই প্রাপ্ত বসু ব্যাস মুনি ভারতে কর
গুরু মারে পঞ্চ পাস্তব শান্ত হয়ে স্বর্গে যায়।।
লেখকঃ মহসিদ হোসাইন
বৃহত্তর যশোরের লোক কবিচারণ কবি দেক।